জাহিলিয়া যুগে আরবের অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা
আরবের ভৌগোলিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। আরব উপদ্বীপের জমি মরুময় ও অনুর্বর হওয়ায় তা কৃষিকাজের সম্পূর্ণ অনুপযোগী ছিল। সামান্য যে খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হতো প্রয়োজন তুলনায় তা খুবই নগণ্য ছিল। তাই আরববাসীদের সর্বদা জীবন সংগ্রামে নিয়োজিত থাকতে হতো। মরুবাসী বেদুইনরা ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প কারুকার্য বিংবা ভূমিকৰ্ষণ তাদের মর্যাদা হানিকর বলে মনে করতো। এজন্য তারা পশুপালন, শিকার ও দস্যুবৃত্তিকে জীবিকা নির্বাহের পন্থা হিসেবে বেছে নেয়। আরবের কয়েকটি অর্থনৈতিক শ্রেণী হলো:
গরিব যাযাবর: গরিব যাযাবর আরববাসীর আর্থিক অবস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। পশুচারণ ও লুণ্ঠন করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। যাযাবররা এতই হত দরিদ্র ছিল যে, দিন এনে দিন খেত। ১০০০-এর বেশি সংখ্যাজ্ঞান তাদের ছিল না।
কুসীদজীবী ইহুদি: তৎকালে আরবে ধনী বণিকশ্রেণি ইহুদিরা সুদের ব্যবসা করতো। তারা কখনো কখনো শতকরা একশ, দেড়শ বা দশ গুণ পর্যন্ত সুদ নিত। সুদী কারাবারের নিয়মাবলি এতই জঘন্যতম ছিল যে, ঋণগ্রহীতা অনেক সময় সর্বস্বান্ত হয়ে যেত। চক্রবৃদ্ধি হাতের সুদের প্রচলন থাকায় গ্রহীতার পক্ষে কোনো দিনই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হতো না। মহাজন সুদের টাকার বিনিময় স্বরূপ ঋণগ্রহীতার ঘরবাড়ি, স্ত্রী, সন্তান এমনকি স্বয়ং খাতককেই তার দাস হিসেবে করায়ত্ত করতো।
কারিগর শ্রেণি: পৌত্তলিক আরবে কারিগর হিসেবে পরিচিত একশ্রেণির পেশাজীবী মানুষ ছিল। তারা হচ্ছে মূর্তি নির্মাতা শ্রেণি। আরবদের পূজ্য সকল মূর্তি এরাই নির্মাণ করতো। সমাজে এদের বেশ সম্মান ছিল। পৌত্তলিকদের ছাড়া ইহুদি, খ্রিষ্টানরাও মূর্তি তৈরি করতো। কাজেই তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিল।
শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী : শহরবাসী আরবগণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রাক ইসলামী যুগে মক্কা বহির্বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। এ কেন্দ্র উত্তর ও দক্ষিণ আরবের পথে বিদেশের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনে বিপুল অর্থ উপার্জন করতো। মক্কা ও মদিনার সম্পদ সমৃদ্ধিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের অবদানই সর্বাধিক। রাসূলে করীম (সা.)-এর প্রথমা স্ত্রী বিবি খাদিজাতুল কুবরা (রা) এ সময়কার মর্যাদাসম্পন্ন ব্যবসায়ী ছিলেন।
মক্কাকেন্দ্রিক ব্যবসা: প্রাকইসলাম যুগে হিজাযের প্রধান তিনটি নগরী মক্কা, মদিনা ও তায়িফ খুবই সমৃদ্ধিশালী ছিল। দক্ষিণ হিজাযের নিমভূমিতে লোহিত সাগর থেকে প্রায় ৪৮ মাইল দূরে অবস্থিত মক্কা নগরী ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। কাবা শরীফের ধর্মীয় গুরুত্ব, উকায মেলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মক্কা নগরী যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিল। মক্কার প্রায় ২০০ মাইল উত্তরে মদিনা শহর অবস্থিত। মদিনার সাথে ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাণিজ্যপথ সংযুক্ত ছিল।
তায়িফকেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থা: সে সময় তায়িফ ব্যবসায় বাণিজ্যে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেন। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের। কারণে তায়িফে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য বিশ্বের বাজারে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হতো। মক্কার প্রায় ২০০ মাইল উত্তরে । অবস্থিত মদিনা ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত প্রসারিত বাণিজ্যপথের সাথে সংযুক্ত ছিল। ভূমির উর্বরতার জন্য মদিনায় প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো। সে সময় এখানকার খেজুর একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল হিসেবে সুপরিচিত ছিল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions