খলিফা আল-মুতাসিম
আল-মুতাসিম (৮৩৩-৮৪২) খ্রি:
খলীফা আল-মামুনের মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা আবু ইসহাক মুহাম্মদ আল-মুতাসিম বিল্লাহ উপাধি গ্রহণ করে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তুর্কি দেহরক্ষী বাহিনী গঠন
এই সেনাবাহিনীতে আরব ও পারস্য সৈন্যদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়, গোত্রতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তিনি পারস্য সৈন্যদের প্রভাব হ্রাস করার জন্য তুর্কিদের নিয়ে নতুন সেনাবাহিনী গঠন করেন। এই তুর্কি সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী।
রাজধানী স্থানান্তর
একপর্যায়ে তুর্কি বাহিনীর ক্ষমতা ও আধিপত্য এতো বৃদ্ধি পায় যে, খলীফা রাজধানী বাগদাদ হতে ৬০ মাইল উত্তর পশ্চিমে সামাররাতে (৮৩৬ খ্রি:) রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এখানে তিনি বুলকাওয়ারা নামক রাজপ্রাসাদ, সেনানিবাস ও অশ্বের আস্তাবল নির্মাণ করেন।
বিদ্রোহ দমন
এই সময়ে ভারতীয় জাঠ উপজাতীয় লোকেরা ইরাকে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। খলীফা তাদের বিতাড়িত করেন। মাজেন্দ্রাণের বিদ্রোহী বাবেক পুনরায় বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে খলীফা তাঁর তুর্কি সেনাপতি আফসীনকে প্রেরণ করে বাবেক এর বিদ্রোহ দমন করেন। বাবেক যুদ্ধে নিহত হয় এবং মাজেন্দ্রানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাইজানটাইনদের সাথে যুদ্ধ
আল-মুতাসিমের শাসনকালে বাইজানটাইন শাসক থিওফিলাস জিবত্রা আক্রমণ করে। ৮৩৮ খ্রি: খলীফা তার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আনকারা নামক স্থানে বাইজানটাইনদের পরাজিত করেন, সম্রাটের জন্মভূমি এমােরিয়াম শহর ধ্বংস করে দেন। অবশেষে সম্রাটের সাথে খলীফা এক সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হন।
মাজিয়ান বিদ্রোহ
মাজিয়ান নেতা মাজিয়ার ৮৩৯ খ্রি: বিদ্রোহ সৃষ্টি করলে খলীফা আব্দুল্লাহ ইবনে তাহিরকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। যুদ্ধে মাজিয়ার পরাজিত ও নিহত হন। খলীফা তার তুর্কি সেনাপতি আফসীনকে মাজিয়ারের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকার অভিযােগে বন্দী করেন। পরে কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়।
চরিত্র ও মৃত্যু
ব্যক্তি জীবনে খলীফা আল-মুতাসিম বিল্লাহ নির্দয় ও কঠোর স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি দৈহিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনিও খলীফা আল-মামুনের ন্যায় মুতাযিলা মতবাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ৮৪২ খ্রি: দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত থাকার পর খলীফা আল-মুতাসিম বিল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র আল-ওয়াসিককে তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions