খলিফা আল মামুনের পরিচয়
ইরাকের বাগদাদ এর খলিফা হারুন অর রশিদ এর সন্তান ছিলেন আল-মামুন। তিনি ৭৫৮ খ্রি: পারস্যরমণী মারজিলের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ৮১৩ খ্রি: তার ভাই খলীফা আল-আমিনকে যুদ্ধে পরাজিত করে তিনি (আল মামুন) খিলাফত লাভ করেন ও বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। খলীফা আল-মামুনের শাসনকালকে ২টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম ছয় বছর (৮১৩-১৯ খ্রি:) আল-মামুন খোরাসানের রাজধানী মার্ভে অবস্থান করেন এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করেন। এই সময় তাঁর বিশ্বস্ত উযীর ফজল বিন সাহল রাজকার্যে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। পরবর্তী ১৪ বছর মামুন (৮১৯-৩৩ খ্রি:) স্বহস্তে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
খলীফা আল-মামুনের বাগদাদে আগমন
ফজল বিন সাহল গৃহযুদ্ধে আল-মামুনকে সমর্থন ও ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করলেও, আল-মামুনের খিলাফত লাভের পর ফজল উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠেন। আল-মামুন নিজেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় ব্যস্ত রাখলে তিনি রাজক্ষমতার অপব্যবহার করেন। প্রধান সেনাপতি হারসামা খলীফাকে এই বিষয়ে অবগত করতে চাইলে ফজল গােপনে হারসামাকে হত্যা করেন। এর ফলে বাগদাদে হারসামার সমর্থকগণ বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। অবশেষে শিয়া ইমাম আলী আল রিজা কর্তৃক প্রকৃত ঘটনা অবগত হয়ে খলীফা আল-মামুন বাগদাদের উদ্দেশ্যে মার্ভ ত্যাগ করেন। ফজল আততায়ীর হাতে নিহত হন।
খলীফা আল-মামুনের শাসনব্যবস্থা
৮১৯ খ্রি: খলীফা স্বহস্তে রাজক্ষমতা দখল করেন। তিনি প্রশাসনিক কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। এই ব্যাপারে তিনি ছিলেন অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী। তিনি হাসান বিন-সাহলকে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোকদের তিনি প্রশাসনে নিযুক্ত করেন। তিনি আলী পন্থীদের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করেন। আলীর বংশধরদের তিনি খিলাফতের অংশীদার করার উদ্দেশ্যে আব্বাসী বিরোধিতা সত্ত্বেও শিয়া অষ্টম ইমাম আলী আল-রিজাকে তার পরবর্তী সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু ৮১৮ খ্রি: আলী আল রিযা মৃত্যুবরণ করলে তা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হয়নি।
বিদ্রোহ দমন
খলীফা আল-মামুন তাঁর বিখ্যাত সেনাপতি তাহির ইবনে হুসাইনের পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে তাহিরকে সিরিয়া মিসরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি সুশাসক ও উদার ছিলেন। আব্দুল্লাহ মেসোপটেমিয়া নসর উকায়লীর বিদ্রোহ দমন করেন ও তাকে বন্দি করে খলীফার নিকট প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে তাহির পরবর্তীতে মিসরের বিদ্রোহীদের দমন করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় ইয়েমেন ও খোরসানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ইবরাহীম ইয়েমেনে ও আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে খারিজিগণ খোরাসানে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। ইয়েমেনের বিদ্রোহ দমন করে আব্দুল্লাহ ইবনে তাহির খোরাসানের বিদ্রোহ দমন করেন।
রাজ্য বিস্তার
খলীফা আল-মামুনের সময়ে কোন উল্লেখযোগ্য রাজ্যবিজয় সংঘটিত হয়নি। তাঁর সেনাবাহিনী ভূমধ্যসাগরীয় ক্রীট ও। সিসিলি অধিকার করে। এ সময় পারস্যের মাজেন্দ্রান নামক স্থানে বাবেক নামক জনৈক দস্যুর আবির্ভাব ঘটে। তাঁর বিরুদ্ধে। | প্রাথমিক অভিযান ব্যর্থ হলেও খলীফা স্বয়ং সৈন্য পরিচালনা করে এই অভিযানে সফলতা অর্জন করেন। খলীফার সেনাবাহিনী কতিপয় আফগান উপজাতিকে দমন করে তাদের অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হয়।
বুরানের সাথে বিবাহ
৮২৫ খ্রি: খলীফা আল-মামুন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হাসান বিন-সাহলের কন্যা বুরানকে বিবাহ করেন। বুরান ছিলেন সর্বগুণে শ্ৰেষ্ঠা একজন রমণী। এই বিবাহের জাঁকজমকতা ও মহাসমারোহের কাহিনী আরব ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ব্যয়বহুল ঘটনা।
উত্তরাধীকারী মনোনয়ন
খলীফা আল-মামুন তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর যোগ্যতম ভ্রাতা আবু ইসহাক মুহাম্মদকে ‘মুতাসিমবিল্লাহ উপাধি দিয়ে তাঁর পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। খলীফা আল-মামুন ৮৩৩ খ্রি: তারসাসের অনতিদূরে বাদানদুন নামক স্থানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions