Home » » সৌর শক্তির ব্যবহার

সৌর শক্তির ব্যবহার

সৌর শক্তি আবিষ্কার ও সৌর শক্তির ব্যবহার

-আর্কিমিডিস (খ্রিঃপূঃ ২৮৭-খ্রিঃপূঃ ২১২)


সূর্যরশ্মির মধ্যে যে এক অভূতপূর্ব শক্তি লুকিয়ে আছে এ তথ্য প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন আর্কিমিডিস।


আর্কিমিডিস সিসিলির সাইরাকিউসের রাজা হিয়েরোর আত্মীয় ও বন্ধু ছিলেন।

রোম দেশের সেনাপতি মার্সেলাস তাঁর বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে স্থলে ও জলপথে ২১৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে সাইরাকিউস আক্রমণ করতে এসেছিলেন। তখন রাজা হিয়েরো শত্রুর হাত থেকে দেশকে বাাঁচাবার জন্য আর্কিমিডিসের সাহায্য চেয়েছিলেন।


আর্কিমিডিস আবিস্কার করেছিলেন অবতল আয়নায় সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে কোনো বস্তুর ওপর প্রতিফলিত করলে সেই বস্তুতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া যায়। এজন্য তিনি সরার মতো গর্তওয়ালা বড় বড় অবতল আয়না তৈরি করে সমুদ্রের ধারে অর্ধচন্দ্রাকারে সেগুলিকে সাজিয়ে রেখেছিলেন। অবতল আয়নায় সূর্য রশ্মি কেন্দ্রীভূত হতেই তিনি আয়নাগুলি প্রতিফলিত করেন রোমান জাহাজগুলির ওপর। ফলে যুদ্ধ জাহাজের পালে আগুন লেগে রণতরীগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের প্রয়োজনে এই প্রথম সৌরশক্তিকে কাজে লানানো হয়।


প্রাচীন যুগে এথেন্স বাসীরা তাদের দেবী ভেস্টার পূজার জন্য মসৃণ সোনার পাতে সূর্য রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে পবিত্র অগ্নিশিখা জ্বালাতেন।


বর্তমান যুগেও মানুষ সৌরশক্তিকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে। আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহার্য বস্তুগুলোর শক্তির উৎস হলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কয়লা ও পেট্রোলিয়াম। পারমানবিক শক্তির উৎস হল ইউরেনিয়াম নামের একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু, অত্যধিক ব্যবহারের ফলে এইসব উৎসগুলি এক সময় পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। তাই স্বল্প ব্যয়ে সৌরশক্তি সংগ্রহ করার কথা মানুষ ভাবতে শুরু করে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেখেন প্রতি ১০০ ফুট জায়গায় যে সৌর রশ্মি এসে পড়ে তার তাপশক্তির পরিমাণ এক কিলো ক্যালরি। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এর পরিমাণ আরো বেশি।


এই সৌরশক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করা যায়।

প্রথমত: সৌরশক্তির মাধ্যমে শীতের দিনে বাড়ীকে গরম রাখার পদ্ধতি। এরজন্য দরকার সৌরশক্তি সংগ্রাহক যন্ত্র। এ যন্ত্রে সোডিয়াম সালফেট, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতির টুকরো অ্যালুমিনিয়ামের একটি পাত্রের মধ্যে রাখা হয়। পাত্রের মুখে ঢাকা স্বচ্ছ কাচের পাত। কালো রঙ বেশি তাপ শোষণ করতে পারে বলে পাত্রের ভেতরে থাকে কয়েকসারি কালো কাচের পাত। সূর্যরশ্মির ঢাকনার ভেতর দিয়ে কালো কাচের পাতে পড়তেই উত্তপ্ত হয়। পাত্রের মধ্যে থাকে নালীপথ। বাড়ীর ঠান্ডা বাতাস সেই নালীপথে ঢুকলেই গরম হয়ে ওঠে। এই গরম বায়ুকে বাড়ীর বিভিন্ন ঘরে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে পুরো বাড়ীটাই গরম হয়ে ওঠে।


রান্নার কাজেও সৌরশক্তিকে কাজে লাগানো যায়। সৌর উনানে তাপ অন্তরক ও বায়ুনিরোধক বাক্সের মুখে স্বচ্ছ কাচের ঢাকনা থাকে। বাক্সের ভেতরের দেওয়ালে থাকে গাঢ় কালো রঙের প্রলেপ। অবতল আয়নার সাহায্যে সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে বাক্সের ওপর ফেলা হয়। ইসরায়েলেও ঐ একই পদ্ধতি অনুসরণ করে সৌরশক্তিকে সৌর জলাশয়ে সঞ্চিত করে সেই শক্তিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে বাষ্পীয় শক্তি ও বৈদ্যুতিক শক্তিতে। সূর্যরশ্মিকে অবতল লেন্স দিয়ে কেন্দ্রীভূত করে অতি অল্প জায়গায় তিনহাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মত তাপ সৃষ্টি করে সেই তাপশক্তিকেই কাজে লাগানো হচ্ছে।


তাপশক্তি থেকে সরাসরি বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। দুটি ভিন্ন ধাতুর তারের দুইধার জোড়া লাগিয়ে সেই জোড়া দেওয়া স্থানটাকে সূর্যরশ্মি দিয়ে বিভিন্ন উষ্ণতায় গরম করলে তারের দুই ধারের তড়িৎ চালক বলের তারতম্য ঘটে বলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত তড়িৎ প্রবাহ পরিচালিত হয়, এই তড়িৎকে বলে থার্মোইলেকট্রিসিটি।


একটা বড় অবতল আয়নার সাহায্যে সূর্য রশ্মি কেন্দ্রীভূত করে বয়লারের জলে ফেললে জল উত্তপ্ত হয়ে বাষ্পীভূত হয়। তখন সেই বাষ্পশক্তিকে কলকারখানার কাজে লাগানো যায়।


সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদুৎকোষ, প্রোটিনও স্নেহজাতীয় পদার্থে সমৃদ্ধ ক্লোরেলা চাষ, সমুদ্রের লবণাক্ত জলকে পাতিত করা, প্রভৃতি সব কাজই সম্ভব হচ্ছে।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*