Home » » ম্যানগ্রোভ বন কি

ম্যানগ্রোভ বন কি

ম্যানগ্রোভ বন কি

পৃথিবীর সমস্ত ক্রান্তীয় অঞ্চলে সমুদ্র তীরবর্তী জোয়ারভাটা এলাকায় লবণাক্ত জলাভূমিতে সৃষ্ট চিরসবুজ বনকে বলা হয় ম্যানগ্রোভ বন। এটিকে কখনও কখনও ম্যাঙ্গাল বনও বলা হয়ে থাকে। 

সমুদ্রতীরবর্তী যেখানে ঢেউ ও জোয়ারভাটার প্রচণ্ডতা কম ও যেখানে নতুন নতুন চর জেগে উঠে অথবা নদীবাহিত কাদা মাটি ও পলিমাটি এসে জমা হয় সেসব জায়গায় বীরুৎ গুল্ম থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির উচু বৃক্ষ দ্বারা এ বনের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের উদ্ভিদগুলো বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা ও জোয়ার ভাটার উঠা নাম সহ্য করতে সক্ষম। নানা কারণে এই বনের পরিবেশ বা ইকোসিস্টেম অনেক বেশি হয়ে থাকে। এখানকার লবণাক্ততা সমুদ্রের চাইতে কম এবং মাটির আর্দ্রতা বেশি। এই বনে বিশেষ ধরনের কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অভিযোজন লক্ষ্য করা যায়। এসব প্রজাতির টিকে থাকার জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়ে থাকে। যেমন, মাটি অতিরিক্ত কর্দমাক্ত হওয়ায় তার অভ্যন্তরে অক্সিজেনের অভাব থাকায় স্বসন কাজের সুবিধার জন্য বিশেষ ধরনের স্বাসমূল মাটির উপরে উঠে আসে। এসব মূল ছোট চোখা বা মোটা চওড়া ও লম্বা ইত্যাদি নানা ধরনের এবং এদের উপস্থিতিতে এইসব বৃক্ষের নিচ দিয়ে সহজে হাঁটা যায় না। নরম কাদামাটিতে সোজা হয়ে টিকে থাকার জন্য কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ বিশেষ ধরনের বৈসমূল তৈরি করে। জোয়ার-ভাটার কারণে যাতে বীজগুলো মাটিতে বা পানিতে পড়ে ভেসে না যায় এবং নতুন চারাগাছগুলোর বৃদ্ধি পেতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য অনেক প্রজাতির বৃক্ষে ফলগুলো পরিপক্ক হলে গাছ থাকতেই তার ভিতরের বীজগুলোর অঙ্কুরোদগম হয় যাকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। এখানকার বেশিরভাগ প্রজাতির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য মরুজ প্রজাতির মতো। ম্যানগ্রোভ বনের প্রজাতির সংখ্যা ও তাদের বিস্তৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করে estuary এর আকার ও নদীখাল বা আশপাশের ভূমি থেকে কি পরিমাণ মিঠা পানি এসে সমূদ্রের লোনা পানির সাথে মিশে তার উপর। এই বনাঞ্চল যতো বড় হবে অর্থাৎ সমুদ্য থেকে ভূমির অভ্যন্তরে দূরব্ত যতোই বেশি হবে ততোই লবণাক্ততা ও জোয়ার-ভাটার তীব্রতার মধ্যে যথেষ্ট তারতম্য ঘটবে এবং সে অনুযায়ী উদ্ভিদ (ও প্রাণী) প্রজাতির মধ্যেও বিভিন্ন স্তরের সৃষ্টি হবে। সমুদ্য উপকূলের নিকটবর্তী প্রজাতিগুলো বেশি লবণাক্ততা ও জোয়ার-ভাটার ধাক্কা সহ্য করবে এবং যতোই দেশের অভ্যন্তরে আসা যাবে ততোই কম লবণাক্ত ও কম জোয়ার ভাটার সম্মুখীন হবে এবং সে অনুযায়ী একস্থানে এক এক গ্রুপের প্রজাতির সমাবেশ দেখা যাবে। এভাবে আমরা খুব কম লবণাক্ত পানির প্রজাতি, মাঝারি লবণাক্ত পানির প্রজাতি ও বেশি লবণাক্ত পানির প্রজাতির শ্রেণিবিন্যাস করতে পারি। ম্যানগ্রোভ বন যতোই ঘন হয় ততোই তা সংলগ্ন মাটির ক্ষয়রোধ করে এবং প্রচন্ড ঝড় ঝঞ্ছায় আশপাশের বহু এলাকাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এ স্থানের উর্বরতা অনেক বেশি হওয়ায় এখানকার উৎপাদনশীলতা বেশি হয় এবং গাছপালার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদেরও সমাবেশ ঘটে। 

একই রকম প্রাকৃতিক পরিবেশ ভৌত ও রাসায়নিক কারণে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে অভিযোজনীয় কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হতে দেখা যায় যাকে বলে কনভারজেন্ট এডাপশন। যেমন: উপরে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম, স্বাশমূল, ঠেসমূল, মরুজ উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও সব ক্রান্তীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে একই রকম প্রজাতির সমাবেশ দেখা যায় (শৈবাল থেকে গুপ্তবীজী উদ্ভিদ), তবুও এসব প্রজাতির সংখ্যার উপস্থিতির দিক দিয়ে ম্যানগ্রোভকে দুটি আলাদা অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যেমন: পশ্চিমে ক্রান্তীয় দুই আমেরিকায় ও আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে মাত্র চারটি ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ প্রজাতির প্রাধান্য দেখা যায়। কিন্তু আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে, সমগ্র ক্রান্তীয় এশিয়ায় ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে দেশটির বেশি (পূর্বাঞ্চলীয়) বিভিন্ন গোত্রের প্রজাতির প্রাধান্য দেখা যায়।

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ হচ্ছে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণাংশের সুন্দরবন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল, ফার্ন ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের প্রচুর সমাবেশ দেখা যায়। শৈবালের মধ্যে Chaetomporpha, Enteromorpha, Rhizoclonium, Chadphorella, Boodleopsis, Vaucheria, Pterosiphonia, Bostrychia, Polysiphonia, Caloglossa, Catenella, Colpomenia ইত্যাদি প্রজাতি এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন নীলাভ-সবুজ শৈবালের প্রজাতিও উল্লেখযোগ্য। গুপ্তজীবী অনেক প্রজাতির মধ্যে সচরাচর যেসব দেখা যায় তার মধ্যে হিন্তাল, গোলপাতা, হাড়গোজা, বোলাই, ভোলা, সুন্দরী, কেওড়া, ছৈলা, কেয়া, ভোরা, খেমা, বাইন, গরান ইত্যাদি প্রজাতি উল্লেখযোগ্য। চরা জায়গায় বা অল্প গভীর পানিতে উরিধান নামে এক প্রকার বুনোধান এই অঞ্চলে জন্মায়। তাছাড়া শুকনো বালুময় মাটিতে ছাগলকুরি নামের লতাজাতীয় গাছ মাটির ক্ষয়রোধ করে। কলমির মতো এর বেগুনি বর্ণের ফুল বেশ আকর্ষণীয়। এসব বীরুৎ, গুল্ম ও বৃক্ষ ছাড়া অন্যান্য লতা জাতীয় ও পরাশ্রয়ী প্রজাতিও যথেষ্ট জন্মায়। প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বানর, বন্য শুকর, নানা জাতের পাখি এবং পানিতে কুমির, চিংড়ি ইত্যাদি এখানকার উল্লেখযোগ্য জীব। সারা বন জুড়ে মৌমাছির চাক থেকে প্রতি বছর অনেক মধু সংগ্রহ করা হয়। নানা দিক দিয়ে ম্যানগ্রোভ জলাভূমির যথেষ্ট ভূ-তাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে এবং এর জৈব সম্পদও অত্যন্ত মূল্যবান।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Video Editing Course

Adobe Premiere Pro

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 12,000/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Advanced Excel

VLOOKUP, HLOOKUP, Advanced Functions and many more...

Duration: 2 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 6,500/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*