সমাস কাকে বলে
ধাতু ও প্রত্যয় যোগে শব্দ হয়। দুই বা তার চেয়ে বেশি শব্দ এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ তৈরি হয় সমাসের মাধ্যমে। যেমন: পিতা ও মাতা= পিতা-মাতা; নীল যে আকাশ= নীলাকাশ; মাল বহনের গাড়ি=মালগাড়ি। এ সবই সমাসের উদাহরণ।
সুতরাং বলা যায় যে, পরস্পর অর্থসঙ্গতি বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদের একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।
সমাসের ক্ষেত্রে মনে রাখার বিষয় সমূহ:
১। যে যে শব্দ একত্র হয়ে সমাস তৈরি করে তাদের বলা হয় সমস্যমান পদ। যেমন: চন্দ্রবদন -এর অর্থ এমন কেউ যার মুখ (বদন) চন্দ্রের মত (সুন্দর)। এর মধ্যে আছে দুটি সমস্যমান পদ- ‘চন্দ্র’ এবং ‘বদন’।
২। একত্রিত অবস্থায় বড় শব্দটির নাম সমসস্তপদ। যেমন, গোপীজনবল্লভ-এই সমস্ত পদটির সমস্যমান পদ তিনটি- গোপী, জন, বল্লভ।
৩। সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। যেমন: ‘বীণাপাণি’-এই সমস্ত পদটির অর্থ ‘বীণাপাণিতে (হাতে) যার’ এবং এটিই ব্যাসবাক্য। ঠিক তেমনি পুণ্যভূমি - যে ভূমি পুণ্য; রাজাপ্রজা= রাজা এবং প্রজা।
৪। সমস্ত পদের প্রথম পদটিকে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরেরটি উত্তরপদ। বীণাপাণি- এই সমাসের পূর্বপদ ‘বীণা’ ও উত্তরপদ ‘পাণি’।
৫। দুয়ের অধিক সমস্যমান পদ থাকলে প্রথম পদকে পূর্বপদ শেষ পদকে উত্তরপদ এবং মধ্যের পদগুলোকে মধ্যপদ বলে।
সমাসে সমস্যমান পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায়। বাংলায় বহু স্থলেই বিভক্তির চিহ্ন থাকে না, পূর্বপদে বিভক্তি থাকলে বা অনুসর্গ থাকলে সমসত্মপদে তা লোপ পায়।
বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দ ছাড়াও বহু সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি শব্দের প্রচলন রয়েছে। এক সময় বিভিন্ন শব্দের একত্র ব্যবহার সমর্থন করা হতো না। কিন্তু বর্তমানে শ্রুতিকটু না হলে বিভিন্ন শ্রেণীর শব্দের মিশ্রণের বিরুদ্ধে আপত্তি ওঠে না। সংস্কৃত -সংস্কৃত, সংস্কৃত-বাংলা, বাংলাবাংলা, বাংলা-বিদেশী এবং বিদেশী-বিদেশী, শব্দের মিলনে সমাস হয়। তবে সমাস করার সময় যে কোন দুই বা ততোদিক পদকে এক পদে পরিণত করলেই সমাস হয় না। পদগুলোর পরস্পরের মধ্যে অন্বয় বা সম্পর্ক থাকতে হবে এবং পদগুলোকে একত্রে একটি বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করতে হবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions