এতেকাফ কাকে বলে
সুন্নাত এ'তেকাফ (রমযানের শেষ দশকের এ'তেকাফ) এর মাসায়েল:
* এ'তেকাফ অর্থ স্থির থাকা, অবস্থান করা। পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছওয়াবের নিয়তে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে এ'তেকাফ বলে।
*রমযানের শেষ দশকে এ'তেকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদায়ে কেফায়া, অর্থাৎ, বড় গ্রাম বা শহরের প্রত্যেকটা মহল্লা এবং ছোট গ্রামের পূর্ণ বসতিতে কেউ কেউ এ'তেকাফ করলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে- আর কেউই না করলে সকলেই সুন্নাত তরকের জন্য দায়ী হবে।
* রমযানের ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এ'তেকাফের সময়।
এতেকাফ করার নিয়ম বা এতেকাফের শর্ত সমূহ:
এ'তেকাফের জন্য তিনটি শর্ত; যথা :
(১) এমন মসজিদে এতেকাফ হতে হবে যেখানে নামাযের জামা'আত হয়। জুমুআ-র জামা'আত হোক বা না হোক। এ শর্ত পুরুষের এ'তেকাফের ক্ষেত্রে। মহিলাগণ ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে এ'তেকাফ করবে।
(২) এ'তেকাফের নিয়ত করতে হবে।
(৩) হায়েয নেফাস শুরু হলে এ'তেকাফ ছেড়ে দিবে।
এ'তেকাফের মোস্তাহাব ও আদবসমূহ:
১)
এ'তেকাফের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ নির্বাচন করবে। সর্বোত্তম মসজিদ হল
মসজিদুল হারাম, তারপর মসজিদে নববী, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস, তারপর যে জামে
মসজিদে জামা'আতের এন্তেজাম আছে, তারপর মহল্লার মসজিদ, তারপর যে মসজিদে বড়
জামা'আত হয়।
২) নেক কথা ব্যতীত অন্য কথা না বলা।
৩) বেকার বসে না থেকে নফল নামায, তিলাওয়াত ও তাসবীহ তাহলীলে মশগুল থাকা উত্তম।
এছাড়া অন্যান্য নিয়ম-কানুনসমূহ বা এতেকাফের নিয়মাবলী:
* এ'তেকাফে খাস কোন ইবাদত করা শর্ত নয়- যে কোন নফল নামায়, যিকির-আযকার, তিলাওয়াত, দ্বীনী কিতাব পড়া, পড়ানো বা যে ইবাদত মনে চায় করতে পারে।* এ'তেকাফ শুরু করার পর নিজের বা অন্যের জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনন্যোপায় অবস্থায় এ'তেকাফের স্থান থেকে বের হলে গোনাহ নেই বরং তা জরুরী, তবে তাতে এ'তেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
* কোন শরী'আত সম্মত প্রয়োজনে বা স্বাভাবিক প্রয়োজনে বের হলে। ইত্যবসরে কোন রোগী দেখলে বা জানাযায় শরীক হলে তাতে কোন দোষ নেই।
* পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এ'তেকাফে বসা অথবা বসানো উভয়টা -জায়েয ও গোনাহ ।
* মহিলাদের জন্য মসজিদে এ'তেকাফ করা মাকরূহ তাহরীমী। তারা ঘরে এ'তেকাফ করবে। স্বামী জীবিত থাকলে এ'তেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। স্বামীর খেদমতের প্রয়োজন থাকলে এ'তেকাফে বসবে না। শিশুর তত্ত্বাবধান ও যুবতী কন্যার প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তা থাকলে এ'তেকাফে না বসাই সমীচীন। মহিলাগণ নির্দিষ্ট কোন কামরায় বা ঘরের কোণে এক স্থানে পর্দা ঘিরে এ'তেকাফে বসবে। মহিলাদের জন্য এ'তেকাফের অন্যান্য মাসায়েল পুরুষদেরই ন্যায়।
এতেকাফ ভঙ্গের কারণ:
যে সব কারণে এতেকাফ ফাসেদ তথা নষ্ট হয়ে যায় এবং কাযা করতে হয়:
(১) স্ত্রী সহবাস করলে এ'তেকাফ ফাসেদ হয়ে যায়, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক, ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলে হোক। সহবাসের আনুষঙ্গিক কাজ যেমন | চুম্বন, আলিঙ্গন, ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে এ'তেকাফ ফাসেদ হয়ে যায় । চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে এ'তেকাফ বাতিল হয় না, তবে এ'তেকাফের অবস্থায় তা করা হারাম।
(২) এ'তেকাফের স্থান থেকে শরীআত সম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হলে এ'তেকাফ ফাসেদ হয়ে যায়। শরী'আত সম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে যাওয়া যায়; যেমন সে মসজিদে জুমুআর জামা'আত না হলে জুমুআর নামাযের জন্য জামে মসজিদে যাওয়া, ফরয বা সুন্নাত গোসলের জন্য বের হওয়া ইত্যাদি। আর স্বাভাবিক প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়; যেমন পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া, খাদ্য-খাবার এনে দেয়ার লোক না থাকলে তা আনার জন্য বের হওয়া, মসজিদের ভিতর উযুর পানির ব্যবস্থা না থাকলে এবং পানি দেয়ার কেউ না থাকলে উযূর পানির জন্য বাইরে যাওয়া।
* যে কাজের জন্য বাইরে যাওয়া হবে সে কাজ সমাপ্ত করার পর তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে, বিনা প্রয়োজনে কারও সাথে কথা বলবে না।
* গোসল ফরয হওয়া ছাড়াও আমরা শরীর ঠাণ্ডা করার নিয়তে বা শরীর পরিষ্কার করার নিয়তে সাধারণতঃ যে গোসল করে থাকি, শুধু এরূপ গোসলেরই উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তবে কাউকে বলে যদি পথের মধ্যে পানির ব্যবস্থা করে রাখে বা পুকুর ইত্যাদি থাকে আর পেশাব পায়খানা থেকে ফেরার পথে অতিরিক্ত সময় না লাগিয়ে জলদি ঐ পানি গায়ে মাথায় ঢেলে বা ডুব দিয়ে গোসল সেরে চলে আসে তাহলে এতেকাফের ক্ষতি হবেনা।
এ'তেকাফের অবস্থায় যে সব জিনিস মাকরূহ:
১. এ'তেকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে ছওয়াব হয় এই মনে করে চুপ থাকা মাকরূহ তাহরীমী।
২. বিনা জরুরতে দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। যেমন: ক্রয়-বিক্রয় করা ইত্যাদি। তবে নেহায়েত জরুরত হলে যেমন ঘরে খোরাকী নেই এবং সে ব্যতীত কোন বিশ্বস্ত লোকও নেই-এরূপ অবস্থায় মসজিদে মাল-পুত্র উপস্থিত না করে কেনা-বেচার চুক্তি করতে পারে।
ওয়াজিব এ'তেকাফ (মান্নতের এ'তেকাফ)-এর মাসায়েল:
* এ'তেকাফের মান্নত করলে এতেকাফ ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে কোন শর্তের ভিত্তিতে মান্নত করলে (যেমন আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে এ'তেকাফ করব ইত্যাদি) শর্ত পূরণ হওয়ার পূর্বে ওয়াজিব হয় না ।
* ওয়াজিব এ'তেকাফের জন্য রোযা শর্ত- যখনই এ'তেকাফ করবে রোযাও রাখতে হবে।
* ওয়াজিব এ'তেকাফ কমপক্ষে একদিন হতে হবে। বেশী দিনের নিয়ত করলে তা-ই করতে হবে।
*যদি শুধু এক দিনের এ'তেকাফের মান্নত করে তাহলে তার সঙ্গে রাত যুক্ত হবে না। তবে যদি রাত দিন উভয়ের নিয়ত করে বা একত্রে কয়েক দিনের মান্নত করে তাহলে রাতও যুক্ত হবে। দিন বাদে শুধু রাতে এ'তেকাফের মান্নত হয় না।
* উপরোল্লিখিত মাসায়েল ব্যতীত সুন্নাত এ'তেকাফের ক্ষেত্রে যে সব। | মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে, ওয়াজিব এ'তেকাফের ক্ষেত্রেও সেগুলো প্রয়োজ্য।
মোস্তাহাব/নফল এ'তেকাফের মাসায়েল:
* সুন্নাত এ'তেকাফ (রমযানের পূর্ণ শেষ দশক) ও ওয়াজিব এ'তেকাফ ব্যতীত অন্যান্য যে কোন সময়ের এ'তেকাফের জন্য কোন পরিমাণ সময় নির্ধারিত নেই- সামান্য সময়ের জন্যেও তা হতে পারে।
* যে সব জিনিস দ্বারা এ'তেকাফ ফাসেদ হয়ে যায় এবং কাযা করতে হয়। | সেসব দ্বারা মোস্তাহাব বা নফল এ'তেকাফও নষ্ট হয়ে যাবে ! তবে মোস্তাহাব বা নফল এ'তেকাফের জন্য যেহেতু সময়ের পরিমাণ নির্ধারিত নেই, তাই তার কাযাও নেই।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions