Home » » অর্থ কি?

অর্থ কি?

অর্থ কি?

অর্থের সংজ্ঞা : দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় এবং ঋণ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে যা সর্বজন গ্রাহ্য তাকে অর্থ বলে। অর্থ বিনিময়ের সর্বোৎকৃষ্ট বাহন। অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্নভাবে অর্থকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। ওয়াকারের মতে, “অর্থ যা করে তাই অর্থ”। অনেকের মতে রাষ্ট্র দ্বারা ঘোষিত এবং আইন দ্বারা স্বীকৃত বস্তুই অর্থ। এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রচলনকৃত কাগজী ও ধাতব বস্তুর সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে তাকেই একমাত্র অর্থ হিসেবে মেনে নেয়া যায়। কোলেন মতে, “অর্থ এমন একটি বস্তু যা সকলেই সাধারণভাবে দেনা পাওনা মেটাতে এবং দাম পরিশোধ করতে ব্যবহার করে”। সেয়ার্সের মতে, “দেনা পাওনা মেটানোর কাজে ব্যাপকভাবে গৃহীত কোন বস্তুকে অর্থ বলে”। ক্রাউয়ারের মতে,“যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সকলের নিকট গ্রহণীয় এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সংস্কারের বাহন হিসেবে কাজ করে তাই অর্থ”। লর্ড কীনস্ এ মতে,“অর্থ এমন একটি দ্রব্যে যা হস্তান্তর করে ঋণের চুক্তি ও দামের চুক্তি মেটানো যায় এবং যার মাধ্যমে ক্ষমতা সংরক্ষণ করা যায়। 

সুতরাং, যে বস্তু বিনিময়ের মাধ্যম, ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের উপায় হিসেবে সর্বজন গৃহীত এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে তাকেই অর্থ বলে। অর্থ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে প্রচলিত। যেমন- বাংলাদেশে টাকা, ভারতে রুপী, জাপানে ইয়েন, জার্মানীতে মার্ক, যুক্তরাজ্যে পাউন্ড স্টার্লিং, যুক্তরাষ্ট্রে ডলার।


অর্থের কার্যাবলী 

দ্রব্য বিনিময় প্রথার অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে অর্থের প্রচলন হলেও পরবর্তীতে তার কার্যক্রম আরও ব্যাপক হয়ে উঠে। উৎপাদন, ভোগ, বন্টন, সঞ্চয়, বিনিয়ােগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঋণের আদান-প্রদান ইত্যাদি কাজ অর্থের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতিবিদগণ অর্থের নানা কার্যাবলীর উল্লেখ করেছেন কেহ কেহ অর্থের বিভিন্ন কাজকে নিম্নোক্ত তিনটি | দৃষ্টিকোণে দেখেছেন :

 (১) প্রাথমিক কার্যাবলী, (২) মাধ্যমিক কার্যাবলী ও (৩) সহায়ক কার্যাবলী। প্রাথমিক কার্যাবলী বলতে অর্থকে বিনিময়ের মাধ্যম ও মূল্যের পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অর্থের মাধ্যমিক কার্যাবলী হিসেবে মূল্যের ভান্ডার এবং স্থগিত লেনদেনের মান নির্ধারণকে বিবেচনা করেছেন। আর সহায়ক কার্যাবলী তারতম্য, আয় বন্টন ইত্যাদির মধ্যে নিহিত। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ বিস্তৃত অর্থে অর্থের কার্যাবলীকে দুই অংশে বিভক্ত করেছেন : (১) স্থিতিশীল কার্যাবলী ও (২) গতিশীল কার্যাবলী। আবার স্থিতিশীল কার্যাবলীকে তিনভাগে ভাগ করা যায় : (১) বাণিজ্যিক কার্যাবলী, ২) সামাজিক কার্যাবলী ও (৩) মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলী। অর্থের বাণিজ্যিক কার্যাবলী অর্থের বাণিজ্যিক কার্যাবলী নিম্নোক্ত উক্তির মাধ্যমে সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায় :

"Money is a matter of functions four, A medium, a measure, a standard and a store"

অর্থাৎ - “অর্থের কার্য হল চার,

মাধ্যম, পরিমাপক, মান ও ভান্ডার”।

নিম্নে অর্থের বাণিজ্যিক কার্যাবলী সংক্ষেপে আলোচিত হলো : 

১. বিনিময়ের মাধ্যম (Medium of Exchange) : অর্থের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হলো | বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে লেনদেন সম্পন্ন করা। অর্থ সর্বজন গৃহীত বলে এর মাধ্যমে যে

কোন সময় যে কোন দ্রব্য বা সেবা যে কোন পরিমাণে ক্রয় বিক্রয় করা যায়। 

২. মূল্যের পরিমাপক (Measure of Value) : প্রতিটি দ্রব্য ও সেবার বিনিময় মূল্য অর্থের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। যেমন – এক মণ চালের দাম ৬০০ টাকা, ১ ভরি সোনার দাম

৬৫০০ টাকা, বিভিন্ন দ্রব্যের আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণেও অর্থের ভূমিকা রয়েছে। 

৩. স্থগিত লেনদেনের মান (Standard of Deferred Payments) : ঋণ আদান প্রদানের বা স্থগিত লেন দেনের মান হিসেবে অর্থ ব্যবহৃত হয়। ঋণ দাতা অর্থের আকারে ঋণ দেয় এবং ঋণগ্রহীতা অর্থের আকারে তা পরিশোধ করে। তাই ঋণগ্রহণ ও পরিশোধ কালে হিসাবগত কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। ধারে ক্রয় বিক্রয়ের মূল্য ও অর্থের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে ক্রেতা বিক্রেতার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম। 

৪. সঞ্চয়ের ভান্ডার (Store of Value) : অর্থ সঞ্চয়ের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। মানুষ তার উদ্বৃত্ত দ্রব্য সামগ্রী সঞ্চয় করতে চায়। কিন্তু জায়গা ও দ্রব্যের স্থায়ীত্বের অভাবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ঝুঁকি বহুল বলে মানুষ দ্রব্যাদি সঞ্চয় করে রাখতে পারে না। কিন্তু অর্থের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত দ্রব্যাদির বিক্রয়লদ্ধ অর্থ সহজে এবং নিরাপদে সঞ্চয় করা যায়। ফলে অর্থের ক্রয় ক্ষমতা বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যায়। সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে অর্থ মূলধন হিসাবে সহায়তা করে।

৫. মূল্য স্থানান্তরের বাহন (Means of Value Transfer) : অর্থ সব ধরনের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য স্থানান্তরের বাহন হিসেবে কাজ করে। মানুষ তার সম্পত্তি একসাথে বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে অন্যস্থানে তা ক্রয় করতে পারে। যা দ্রব্য বিনিময় প্রথায় অসম্ভব।

৬. ঋণের ভিত্তি (Base of Credit) : বর্তমানকালে ব্যবসায়িক লেনদেনের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রের (চেক, ব্যাংক ড্রাফ্ট, বিনিময়পত্র ইত্যাদি) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। আমানত হিসেবে রক্ষিত নগদ অর্থের ভিত্তিতেই ব্যাংক এসব ঋণপত্র ইস্যু করে এবং ঋণপত্রধারীদের অর্থের চাহিদা পূরণ করে। 

৭. তারল্যের মান (Standard of Liquidity) : অর্থের সাহায্যে যে কোন দ্রব্য যে কোন সময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। সুতরাং এটি সর্বপেক্ষা তরল সম্পদরূপে বিবেচিত। অর্থের এ তারল্য গুণের জন্য দ্রব্য সামগ্রীকে যেমন সহজে অর্থে রূপান্তর করা যায়, তেমনি অর্থকেও দ্রব্যসামগ্রীতে পরিণত করা যায়। 

৮. তৃপ্তিবৃদ্ধির উপায় (Means of Maximizing Satisfaction) : ভোক্তার প্রধান উদ্দেশ্য ক্রীত দ্রব্য থেকে সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা। এ উদ্দেশ্যে ভোক্তা এমনভাবে তার নির্দিষ্ট আয় বিভিন্ন দ্রব্যের মধ্যে ব্যয় করে যাতে প্রত্যেকটি দ্রব্যর উপর ব্যয়িত অর্থের প্রান্তিক উপযোগ পরস্পর সমান হয়।

অর্থের সামাজিক কার্যাবলী (Social Functions of Money) 

সামাজিক জীবনে অর্থ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বাণিজ্যিক ধরনের নয় এমন অনেক লেনদেনের বাহন হিসেবে কাজ করে অর্থ। যেমন – উপহার, সাহায্য, জরিমানা, কর প্রদান ইত্যাদি লেনদেনে অর্থ ব্যবহৃত হয়। মানুষের সামাজিক মর্যাদা, প্রতিপত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

অর্থের মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলী (Psychological Functions of Money) 

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মানুষ তার সম্পদের একাংশ সম্পূর্ণ তরল অবস্থায় থাকতে চায়। অর্থই সবচেয়ে তরল সম্পদ হিসেবে তার এরূপ মনোবৃত্তিকে পূরণ করে। মানুষ ভবিষ্যতের বিপদ আপদ এবং অনিশ্চয়তা মোকাবেলার জন্য নগদ অর্থ হাতে রাখে এবং নিজেকে নিরাপদ মনে করে। 


অন্যান্য বা গতিশীল কার্যাবলী : অর্থ উৎপাদন, ভোগ, সঞ্চয়, বন্টন, ব্যবসা বাণিজ্য, মূল্যের পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থই সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান চালিকা শক্তি। বিনিময়ের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম এবং মূল্যের পরিমাপক হিসেবে অর্থ বিনিময়ে ব্যবস্থাকে সহজ ও গতিশীল করেছে। সঞ্চয়ের বাহন এবং ঋণ আদান প্রদানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। অর্থের ব্যবহার জাতীয় আয় বন্টনকে সহজ করেছে। অর্থের ব্যবহার আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তৃত করেছে। এক কথায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূলে শক্তিশালী উপাদান হলো অর্থ।


অর্থের শ্রেণীভেদ (clasification of Money) 

অর্থকে প্রথমতঃ দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন – হিসাবী অর্থ ও প্রকৃত অর্থ।

১. হিসাবী অর্থ : যে অর্থ বা মুদ্রার নামে জিনিসপত্রের দাম লেনদেন ও হিসাব নিকাশ রাখা হয় তাকে হিসাবী অর্থ বলা হয়। যেমন বাংলাদেশে টাকা, ভারতের রূপী, যুক্তরাষ্ট্রে

ডলারের মাধ্যমে হিসাব নিকাশ ও বিনিময় চলে। 

২. প্রকৃত অর্থ : যে অর্থের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ক্রয় বিক্রয় ও দেনা পাওনা সম্পন্ন হয় তাকে প্রকৃত অর্থ বলে। যেমন – বাংলাদেশের বিভিন্ন মানের ধাতব মুদ্রা ও কাগজী নোট।

প্রকৃত অর্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – ধাতব মুদ্রা ও কাগজী অর্থ (নোট)। 

ক) ধাতব মুদ্রা : যে প্রকৃত অর্থ ধাতু দ্বারা তৈরি তাকে ধাতব মুদ্রা বলে। যেমন – বাংলাদেশের বিভিন্ন মানের ধাতব মুদ্রাগুলো। ধাতব মুদ্রাকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা হয়: ১) প্রামানিক ধাতব মুদ্রা ও ২) প্রতীক ধাতব মুদ্রা। 

প্রামাণিক মুদ্রা : যে ধাতব মুদ্রার দৃশ্যমান মূল্য এবং অন্তর্নিহিত মূল্য সমান তাকে | প্রামাণিক ধাতব মুদ্রা বলে। প্রামাণিক মুদ্রা গলিয়ে বিক্রি করলে মুদ্রার সমপরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। যেমন – বৃটিশ আমলের ১ টাকার মুদ্রা। | 

২) প্রতীক মুদ্রা : যে ধাতব মুদ্রার দৃশ্যমান মূল্য তার অন্তর্নিহিত বা ধাতব মূল্যের চেয়ে | বেশি তাকে প্রতীক মুদ্রা বলে। যেমন – বাংলাদেশের বিভিন্নমানের ধাতব মুদ্রাগুলো।


খ) কাগজী অর্থ : কাগজ দিয়ে যে অর্থ তৈরি তাকে কাগজী অর্থ বা কাগজী নোেট বলে। | দেশের সরকার তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন মানের কাগজী নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ে। কাগজী নোট ছাড়ানের ফেছনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা/রূপা/বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়। বাংলাদেশের ৫ টাকা, ১০ টাকা, ৫০০ টাকার নোট সমূহ কাগজী অর্থ।

কাগজী অর্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – ১) প্রতিনিধিত্বমূলক কাগজী অর্থ, ২) পরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ ও ৩) অপরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ।

১) প্রতিনিধিত্ব মূলক কাগজী অর্থ : সমমূল্যের সোনা, রূপা বা বৈদিশিক মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রেখে যে কাগজী নোটের প্রচলন করা হয় তাকে প্রতিনিধিত্ব মূলক কাগজী অর্থ বলে। 

২) পরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ : যে কাগজী নোটের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সোনা, রূপা বা বৈদেশিক মুদ্রা বাহককে দিতে বাধ্য থাকে তাকে পরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ বলে। যেমন বাংলাদেশের ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ১০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট সমূহ। 

৩) অপরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ : যে কাগজী নোটের বিনিময়ে কোন ধাতব মুদ্রা, সোনা রূপা বা বৈদেশিক মুদ্রা জমা থাকে না এবং বাহককে প্রদান করে না তাকে অপরিবর্তনীয় কাগজী অর্থ বলে। শুধু সরকারী আদেশেই এরকম নোট চালু থাকে। বাংলাদেশের ১ টাকা ও ২ টাকার নোট।

আইনগত দিক থেকে অর্থকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- 

১) বিহিত অর্থ ও ২)। ঐচ্ছিক অর্থ । ১) বিহিত অর্থ : যে অর্থের গ্রহণযোগ্যতা আইন দ্বারা স্বীকৃত এবং জনগণ তা গ্রহণ করতে বাধ্য, তাকে বিহিত অর্থ বলে। বিহিত অর্থকে সরকারী অর্থও বলা হয়। বিহিত অর্থ আবার দু'রকম : ক) সসীম বিহিত অর্থ ও খ) অসীম বিহিত অর্থ। 

ক) সসীম বিহিত অর্থ : যে বিহিত অর্থ দ্বারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি দেনা পরিশোধে গ্রহীতার আপত্তি থাকতে পারে তাকে সসীম বিহিত অর্থ বলে। যেমন –১ টাকা, ৫০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ১০ পয়সা ও ৫ পয়সার মুদ্রা। 

খ) অসীম বিহিত অর্থ : যে বিহিত অর্থ দ্বারা যে কোন পরিমাণ লেনদেন সম্পন্ন করা যায় এবং পাওনাদার তা গ্রহণ করতে বাধ্য তাকে অসীম বিহিত অর্থ বলে। যেমন – বাংলাদেশের ৫০০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০ টাকা, ২০ টাকা, ১০ টাকা, ৫ টাকার নোট সমূহ। 

২) ঐচ্ছিক মুদ্রা : যে মুদ্রা গ্রহণ করার আইনগত কোন বাধ্যবাধকতা নেই বরং তা গ্রহণ করা গ্রহীতার ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে তাকে ঐচ্ছিক মুদ্রা বলে। যেমন – চেক, ড্রাক্ট, পে-অর্ডার, হুন্ডি, ট্রেজারী বিল ইত্যাদি।

উপরোক্ত শ্রেণীভেদ ছাড়া এ অর্থকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণীভেদ করা যায় : 

১) আদিষ্ট অর্থ : যে অর্থের কোন বস্তুগত মূল্য নেই এবং অন্য কোন ধাতু বা মুদ্রার সাথে বিনিময় করা যায় না অথচ সরকারী নির্দেশে বিহিত অর্থ হিসেবে চালু আছে, তাকে

আদিষ্ট অর্থ বলে। যেমন- ১ টাকার নোট। 

২) পরিচালিত মুদ্রা : বাজারে দামস্তর স্থিতিশীল রাখা, পূর্ণ কর্মসংস্থান বজায় রাখা বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে সরকার মাঝে মাঝে বাজারে যে অর্থ চালু করে তাকে পরিচালিত মুদ্রা বলে। এটি পরিবর্তনীয় ও অপরিবর্তনীয় দুই-ই হতে পারে।


৩) প্রায় মুদ্রা : যে সকল সম্পদকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না, তবে প্রয়ােজনে অতি সহজে তরল মুদ্রায় প্রকাশ করা যায়, তাদেরকে প্রায় মুদ্রা বলে।

যেমন- প্রাইজ বন্ড, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারী বিল ইত্যাদি। 

গ) সরকারী অর্থ : যে সকল মুদ্রা অল্প পরিমাণের এবং খুচরা ব্যবসা পরিচালনার জন্য। বাজারে চালু থাকে তাকে সরকারী মুদ্রা বলে। যেমন – বাংলাদেশের ১ টাকার নোটসহ বিভিন্ন মানের ধাতব মুদ্রাসমূহ।


অর্থের চাহিদা (Demand for Money) 

অর্থের নিজস্ব কোন চাহিদা নেই। ইহা বিনিময়ের মাধ্যম ও মূল্যের সংরক্ষক হিসাবে কাজ করে বলে মানুষ তা নগদ আকারে হাতে ধরে রাখতে চায়। আর এই ধরে রাখার প্রবণতাই তার চাহিদা নির্দেশ করে।  অর্থের চাহিদা সম্পর্কীয় অনেক তত্ত্ব ও গবেষণালব্দ ফলাফল রয়েছে। আমরা এ পর্যায়ে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ লর্ড কীনস্ এর তত্ত্বটিই আলোচনা করব। তার এই তত্ত্বটি ‘নগদ পছন্দ তত্ত্ব নামে খ্যাত। তার মতে, মানুষ নিম্নোক্ত তিনটি উদ্দেশ্যে নগদ অর্থ হাতে রাখতে চায় :

১। লেনদেন উদ্দেশ্য : মানুষ দৈনন্দিন লেনদেন মিটানোর জন্য কিছু নগদ অর্থ হাতে রাখতে চায়, কেননা আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে অর্থ ধরে রাখাই হলো লেনদেনের উদ্দেশ্যজনীত অর্থের চাহিদা। এ উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদার পরিমাণ ব্যক্তিবর্গের লেনদেনের পরিমাণ ব্যয় অভ্যাস, আয় ব্যয়ের মধ্যেকার সময়ের ব্যবধান, আয়স্তর ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। 

২। সতর্কতামূলক উদ্দেশ্য : সাবধানতার কারণে মানুষ নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায়। কোন জরুরী অবস্থা দেনা দিলে তা মোকাবেলার জন্য এ ধরনের অর্থ হাতে রাখে। এ উদ্দেশ্যে অর্থ হাতে ধরে রাখাকে বলা হয় সতর্কতামূলক উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদা (Precautionary demand for Money)। এ উদ্দেশ্য অর্থের চাহিদা আয়স্তর, তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ অনিশ্চয়তার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।


ফটকা উদ্দেশ্য : 

বাজারের গতিবিধির সুযোগ গ্রহণ করে ঋণপত্র ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা লাভের আশায় মানুষ নগদ অর্থ হাতে রাখতে চায়। এ উদ্দেশ্যে অর্থ হাতে রাখাকে ফটকা কারবারের উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদা (Speculative demand for

money) বলে। এ উদ্দেশ্যে হাতে রাখা অর্থের পরিমাণ সুদের হারের সাথে বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ সুদের বেশি হলে এ উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদা কম এবং সুদের হার কম হলে অর্থের চাহিদা বেশী হয়। সমীকরণ সাহায্যে এ উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদা নিম্নরূপে দেখা যায় :

M2 = L2(i) যেখানে M2 = অর্থের ফটকা উদ্দেশ্য জনিত চাহিদা, L2 = তারল্য অপেক্ষক । = সুদের হার। 


অর্থের যোগান (Supply of Money) 

অর্থের যোগান বলতে বিহিত মুদ্রা, ব্যাংক মুদ্রা ও প্রায় মুদ্রার সমষ্টিকে বুঝায়। কারো কারো মতে অর্থের যোগান বলতে জনগণের নিকট রক্ষিত অর্থ, ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানত ও মেয়াদী আমানতের সমষ্টিকে বুঝায়। সমাজের মোট অর্থের যোগান বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত অর্থ, সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত অর্থ ও বিভিন্ন ধরনের আমানতকে বুঝায়।


অর্থের যোগানের উপাদান সমূহ :

 ১) বিহিত মুদ্রা : অর্থের যোগানের প্রধান উপাদান হলো বিহিত মুদ্রা। দেশের অভ্যন্তরে

সকল লেন দেনের কাজে ব্যবহারের জন্য যে মুদ্রা সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত এবং যা সকলেই গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে, তাকে বিহিত মুদ্রা বলে। দেশের অর্থের যোগানের বৃহতম অংশ এ বিহিত মুদ্রা। 

২) ব্যাংক মুদ্রা : ব্যাংকের প্রকৃত আমানত ও সৃষ্ট আমানতের ক্ষেত্রে আমানতকারীগণ চেকের মাধ্যমে অর্থ উঠাতে পারেন। এ চেক নগদ অর্থের মতই তরল। ব্যাংক মুদ্রা অর্থের যোগানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

৩) প্রায় মুদ্রা: অর্থের যোগানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো প্রায় মুদ্রা। বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র (বিনিময় বিল, সরকারী বন্ড, ট্রেজারী বিল, পােষ্টাল ওর্ডার, প্রাইজবন্ড, সেভিংস সার্টিফিকেট ইত্যাদি) সহজেই নগদ অর্থে রূপান্তরিত করা যায়। এগুলো অর্থ না হলে অর্থের মত। 


উপরোক্ত উপাদানসমূহের সমন্বয়ই হচ্ছে অর্থের যোগান। এ উপাদান সমূহের হ্রাস বৃদ্ধির ফলে অর্থের যোগানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণতঃ কোন নির্দিষ্ট সময়ে অর্থের যোগান স্থির বিবেচনা করা হয়।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->