সংগঠন কি
সংগঠন বলতে ব্যবসায়ের বিভিন্ন কার্যকলাপ সনাক্তকরণ এবং বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য হস্তান্তরকরণকে বোঝায় ।একজন উদ্যোক্তা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জমি, শ্রম, মূলধন,যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন উৎপাদনের উপাদানগুলিকে একত্রিত করে পরবর্তীতে উৎপাদিত পণ্যটি বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায়। ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুলি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যক্তির উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ব্যবসায়ের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত হয়। সংগঠন হলো ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কার্য সম্পাদনের জন্য কর্মীদের প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের কাঠামো প্রণয়ন। ব্যবস্থাপনা পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জন এর জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ একত্রিত করে। বর্তমানে ব্যবসা ব্যবস্থা খুব জটিল হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত দায়িত্ব দেওয়া আবশ্যক। এজন্য প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কার্যাবলীকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে উপযুক্ত ব্যক্তির উপর দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করা হয়। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের ভিতর সমন্বয় সাধন করা হয়।
সংগঠনের সংজ্ঞা:
এল. এইচ. হ্যানি এর মতে “সংগঠন হলো কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ সাধনের জন্য বিশেষায়িত অংশগুলির সুরেলা সমন্বয়। সংগঠন হলো বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ এর সমন্বয় সাধন।” লুই আ্যালেন এর মতে “সংগঠন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যকলাপ সনাক্ত করা হয় এবং ভাগ করা হয়, দায়িত্ব এবং কর্তব্য কে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং হস্তান্তর করা হয় এবং উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মানুষ যেন দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদন করতে পারে সেজন্য তাদের ভিতর সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।”
আ্যালেনের ভাষায়, “সংগঠন হলো এমন একটি পন্থা যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা হয় এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির কাজের পরিধি নির্ধারণ করে কর্তৃত্ব এবং দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়।”
অলিভারশেল্ডন এর মতে, “Organization is the process so combining the work which individuals or groups have to perform with the facilities necessary for its execution, that the duties so performed provide the best channels for the efficient, systematic, positive and coordinated application of the available effort. Organization helps in efficient utilization of resources by dividing the duties of various persons."
সংগঠনের ধারণা: সংগঠনের দুটি ধারণা রয়েছে। ১) স্থির ধারণা ও ২) গতিশীল ধারণা।
১. স্থির ধারণা:
স্থির ধারণার অধীনে, ‘সংগঠন' শব্দটি কাঠামো, সত্তা বা নির্দিষ্ট সম্পর্কের নেটওয়ার্ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থে, একটি সংগঠন হলো এক দল লোকের সমষ্টি যারা সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে আবদ্ধ।
২.গতিশীল ধরাণা:
একটি গতিশীল ধারণার অধীনে, ‘সংগঠন' শব্দটি চলমান ক্রিয়াকলাপের প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থে, সংগঠনটি কাজ, লোক এবং সিস্টেমগুলি সংগঠিত করার একটি প্রক্রিয়া। এটি লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে এমন ক্রিয়াকলাপগুলি নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং সম্পর্কিত ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত গ্রুপগুলিতে ব্যবস্থা করার সাথে সম্পর্কিত। এটি সংগঠনটিকে একটি বদ্ধ ব্যবস্থা হিসাবে নয়, একটি উন্মুক্ত পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করে। গতিশীল ধারণা ব্যক্তিদের উপর জোর দেয়া এবং সংগঠনটিকে একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করে।
সংগঠনের বৈশিষ্ট্য:
বিভিন্ন লেখক তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সংগঠন বিষয়টি দেখেন। সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি জিনিস লক্ষ্যণীয়, তা হলো সংগঠন ব্যক্তিদের মধ্যে কর্তৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে যা একটি সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে। সংগঠনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হল:
১. কাজ বন্টন-
সংগঠন ব্যবসায়ের পুরাে কাজ পরিচালনা করে। ব্যবসায়ের মোট কাজ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত থাকে। কাজগুলো দক্ষভাবে সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এটি শ্রম বিভাজন নিশ্চিত করে। তবে বিষয়টি এমন নয় যে একজন ব্যক্তি অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করতে পারে না, তবে ব্যক্তির দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন কাজে তাকে নিযুক্ত করা হয়। সয়গঠনের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কার্যবলী কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট অর্পণ করা হয়।
২. সমম্বয়সাধন-
বিভিন্ন কাজের ভিতর সমন্বয় সাধন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। সংগঠন বিভিন্ন কার্যক্রমের ভেতর সমন্বয় সাধন করে। বস্তুত, একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যবলী একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল এবং একটির কর্ম ক্ষমতা অন্যকে প্রভাবিত করে। কাজগুলো সঠিক ভাবে সমন্বিত না হলে সকল কাজের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
৩. সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জন-
সাংগঠনিক কাঠমো এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের উদ্দেশ্য অর্জন হলে প্রতিষ্ঠানের আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। সাংগঠনিক কাঠামো সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে প্রনয়ন করা হয়। সুতরাং, সাংগঠনিক কাঠামো বা সংগঠন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জনের সহায়তা করে।
৪. পারস্পারিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা-
সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির ভিতরে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়। একটি সংগঠন একজন মাত্র ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হয় না। সংগঠন হতে হলে কমপক্ষে দুই বা তার অধিক ব্যক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। সংগঠন এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ব্যক্তিদের মাঝে অর্থবহ সম্পর্ক তৈরি হয়।
৫. সু-সংজ্ঞায়িত কর্তৃত্ব এবং দায়িত্বের সম্পর্ক-
একটি সংগঠন সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব এবং দায়িত্বসহ শ্রেণীদ্ধ বিভিন্ন পদ-পদবি নিয়ে গঠিত। যেখানে একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ব্যবস্থা থাকবে এবং যেখান থেকে নিচের দিকে ধাবমান একটি সুশৃঙ্খল কর্তৃত্ব। ব্যবস্থা নেমে আসবে।
0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions