জনশক্তি পরিকল্পনার গুরুত্ব
প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য মানব সম্পদ জনশক্তি পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের জড় উপাদান গুলোকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় করে তোলে। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য জন সম্পদের বিকল্প নেই। জনশক্তি পরিকল্পনা একদিকে যেমন বর্তমান কর্মীর প্রয়োজনীয়তা নিরুপন করে তেমনি ভবিষ্যতের জন্য কর্মীর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। জনশক্তি পরিকল্পনার গুরুত্ব নিতে ব্যাখ্যা করা হলো-
মানব সম্পদের কাম্য ব্যবহার (Proper use of manpower) :
জনশক্তি পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনশক্তির সুষ্ঠু ও কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে কর্মরত কর্মীর যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী সঠিক কাজে সঠিক কর্মী নিয়োগ করা যায়। ফলে কর্মীদের কার্য সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদনও বাড়ে।
জনশক্তির প্রকৃতি (Nature of manpower) : জনশক্তি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। কর্মরত কর্মীদের আচার ব্যবহারের তারতম্য হেতু জনশক্তি পরিকল্পনার দরকার হয়। কর্মরত কর্মীর সাধারণত চারটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন- (১) উন্নত ধরনের নৈপূন্যতার জন্য একজন কর্মীর প্রয়োজন হয় (২) দীর্ঘ সময় একটি নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। (৩) কর্মীর মানসিক তৃপ্তি ও উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং (৪) প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিবেশের উপর কর্মীর দক্ষতা নির্ভরশীল। জনশক্তি পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মীর এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ (Supply of skilled manpower) : দক্ষ জনশক্তির উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত অন্যসব উপকরণগুলোর কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করে এক দল দক্ষ কর্মীবাহিনী। দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারে। ফলে সব ধরনের অপচয় হ্রাস পায়। তাই জনশক্তি পরিকল্পনার দ্বারা সঠিক সময়ে সঠিক কর্মী সরবরাহ ও সংগ্রহ করা যায়।
প্রযুক্তিগত পরিবর্তন (Technological change) : প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের ফলে আমাদের চারপাশও হচ্ছে পরিবর্তীত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নতির সাথে সাথে উৎপাদন পদ্ধতিরও পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই জরুরী যে কোন পরিবর্তীত অবস্থার মােকাবেলা করতে সুষ্ঠ জনশক্তি পরিকল্পনা অতীব জরুরী।
কর্মী সংগ্রহ ব্যয় (Cost of Recruitment) : অপরিকল্পিতভাবে কর্মী সংগ্রহ করলে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সে জন্য জনশক্তি পরিকল্পনা করা হয়। জনশক্তি পরিকল্পনায় কর্মীদের সংখ্যা, দক্ষতা ও যোগ্যতা পরীক্ষাসহ কর্মী সংগ্রহ সংক্রান্ত সকল বিষয় থাকে পূর্ব নির্ধারিত ও পরিকল্পিত। ফলে কর্মী সংগ্রহের সময় কোন অসুবিধা হয় না। এতে কর্মী সংগ্রহ ব্যয় হ্রাস পায়।
কৌশলগত পরিকল্পনা (Strategic planning) : বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে রণচাতুর্যপূর্ণ পরিকল্পনার আশ্রয় নিতে হয়। কারবারী পরিবেশ বিশ্লেষণ পূর্বক নিজেদের শক্তি ও দূর্বলতা নিশ্চিত করে শক্তি বৃদ্ধি ও দূর্বলতা দূর করতে জনশক্তি পরিকল্পনা বিভিন্নমূখী কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস (Reducing labour turnover) : এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মস্থল বদলানোর অথবা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার প্রবণতাকে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা বলে। প্রথমত স্বেচ্ছামূলক- যেমন বিবাহ, অধিক সুযোগ সুবিধার জন্য চাকুরি পরিবর্তন, অগ্রীম অবসর গ্রহণ ইত্যাদি এবং দ্বিতীয়ত কর্মচারী ছাটাই, অবসর গ্রহণ, মৃত্যু ইত্যাদি বাধ্যতামূলক কারণ। শ্রম ঘূর্ণায়মানতা এক ধরনের অপচয় বিধায়, সুষ্ঠু জনশক্তি পরিকল্পনার দ্বারা শ্রমিক কর্মীদের প্রতিষ্ঠান ত্যাগের প্রবণতা কমানো যায়।
কর্মীদের স্থান পরিবর্তন (Place change by personnel): বিভিন্ন কারণে শ্রমিক কর্মীরা একস্থান থেকে অন্য স্থানে কর্মসংস্থানের জন্য যায়। একই দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জেলায় অথবা একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় কর্মীদের কার্য পরিবর্তন করতে দেখা যায়। এই ধরনের পরিবর্তন অস্বাভাবিক ও অপরিকল্পিত হলে একটি অফিসে কর্মীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। জনশক্তি পরিকল্পনার মাধ্যমে এ ধরনের অসুবিধা দূর করা যায় ।
কাম্য তদারকি (Optimum supervision) : প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পদিত হচ্ছে কিনা তা সঠিকভাবে তদারক করতে হয়। এজন্য তদারকী স্তর সহনীয় মাত্রার সংখ্যা দ্বারা নির্ধারণ করা হয়, যা সুষ্ঠুভাবে কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা সম্ভব। জনশক্তি পরিকল্পনার দ্বারা কম্য তদারকী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন (Industrial relation development) : ব্যবস্থাপনা ও কর্মী এবং কর্মী ও কর্মীর মধ্যকার আশু কার্য সম্পর্ককে শিল্প সম্পর্ক বলে। এই সম্পর্ক যত মধুর হয় শিল্প উৎপাদন তত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে একটি সুন্দর শিল্প সম্পর্ক মালিক-শ্রমিক উভয়ের কাম্য। তাই শিল্প সম্পর্ক উন্নয়নে মানব সম্পদ পরিকল্পনার গুরুত্ব অত্যাধিক।
প্রশিক্ষণ স্তর নির্বাচন (Selection of Training level) : এটি প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রশিক্ষণ স্তর নির্ধারিত না থাকলে কাকে কোন প্রশিক্ষণ দিতে হবে তা জানা যায় না। তাই শ্রশিক্ষণের সঠিক স্তর নির্বাচন করা মানব সম্পদ পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য।
কর্মী উন্নয়ন (Human development) : কর্মরত কর্মীদের উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদ পরিকল্পনা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানব সম্পদ পরিকল্পনা বিভাগ এ সংক্রান্ত কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
সার্বিক কল্যাণ (Overall welfare) : মানব সম্পদ বিভাগ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণের জন্য যথাযথ কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে। কর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য উপাদান কার্যকরী হয়, যার দায়িত্বে থাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সুতরাং এ বিভাগ কর্মী তথা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কল্যাণের জন্য বিভিন্নমুখী কর্ম তৎপরতা পরিচালনা করে থাকে।
উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানব সম্পদ পরিকল্পনা বিভাগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিভাগ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিভাগ ও কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সামগ্রীক কার্য সম্পাদন করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ পরিস্থিতি থাকে সুন্দর ও অনুকূল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions