Home » » রাষ্ট্রের উৎপত্তি

রাষ্ট্রের উৎপত্তি

রাষ্ট্রের উৎপত্তি 

আধুনিক সভ্যতায় রাষ্ট্র শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু একটি সময় ছিল যখন রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। বার্নস বলেছেন, মানব ইতিহাসের দশ ভাগের নয় ভাগ সময় কেটেছে রাষ্ট্রবিহীনভাবে। বস্তুত সমাজ বিবর্তনের এক সুসংগঠিত পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। যেমন: 

ক) সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ (Sociological theory) 

খ) ঐশ্বরিক মতবাদ (Divine theory) 

গ) শক্তি প্রয়োগমূলক মতবাদ (Force theory) 

ঘ) সামাজিক চুক্তিমূলক মতবাদ (Social contract theory) এবং 

ঙ) বিবর্তনবাদী মতবাদ (Evolutionary theory) 

চ) নৃতাত্ত্বিক মতবাদ (Anthropological theory) 


ক) সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ: 

সমাজতাত্ত্বিক মতবাদের প্রবর্তকরা মনে করেন, বন্যদশায় মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে যূথবদ্ধ সমাজে বসবাস করত। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব বা কর্তৃত্বের কোনো ধারণা ছিল না। বর্বর দশার এক পর্যায়ে মানুষ। পরিবার গঠন করে। পরিবারের ক্ষুদ্র পরিসরে সর্বপ্রথম স্থায়ী নেতৃত্বের সূচনা হয়। তাই ম্যাকাইভারসহ অনেকে পরিবার থেকে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। বস্তুত অস্থায়ী, অসংগঠিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় স্থায়ী, সুসংগঠিত এবং কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। ব্যক্তিগত মালিকানা, শ্রমবিভাজন, শ্রেণি, জটিল উৎপাদন ব্যবস্থা, সম্পত্তি, কর্তৃত্বমূলক শাসন ব্যবস্থাকে অপরিহার্য করে তোলে। ফলে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। স্পেন্সার তার 'Principles of Sociology' গ্রন্থে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে তিনটি স্তরের কথা বলেছেন। যেমন: 

১। উপজাতীয় যুগ (Tribal period): তখন জনসমষ্টি ছিল অসংগঠিত এবং কোনো সরকার ছিল না। এ স্তরে কেন্দ্রবিহীন (uncentralized) রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ব্যান্ড (Band) ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব প্রচলিত ছিল। 

২। সামরিক যুগ (Military period): অভিযান ও বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। পরিণতিতে শক্তিশালী সমরনায়ক ও উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতাসীন রাজাদের প্রতি আনুগত্যতা পরিলক্ষিত হয়।

৩। শিল্পযুগ (Industrial period): সমরবাদকে অপসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে তোলে। 


খ) ঐশ্বরিক মতবাদ: 

এ মতবাদে রাষ্ট্রকে ঈশ্বর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচনা করা হয়। ঈশ্বর রাষ্ট্র সৃষ্টি করে তা পরিচালনার জন্য নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। এ মতবাদে বিশ্বাস করা হয়, রাষ্ট্রের পরিচালক বা রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সুতরাং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী জনগণকে রাজার নির্দেশ মেনে চলতে হবে এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে হবে। রাজার অবাধ্য হওয়ার অর্থ ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া। এ মতবাদে রাজা জনগণের কাছে। জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। কেননা তিনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি- জনগণের প্রতিনিধি নন। 


গ) শক্তি প্রয়োগমূলক মতবাদ: 

এ মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের উৎপত্তির পিছনে শক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রভুত্বের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্র পরিচালনার ইচ্ছা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিরই অংশ। এই মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রবিহীন আদিম সমাজে শক্তি প্রয়োগের কয়েকটি নমুনা হচ্ছে: 

ক) সবল কর্তৃক দুর্বলের উপর অত্যাচার এবং দুর্বলকে পরাভূত করে অনুগত রাখার প্রয়াস; 

খ) গোত্র-প্রধান কর্তৃক নিজ বংশের সকলকে শাসনে রাখার প্রবণতা; 

গ) গোত্রপতির নেতৃত্বে এক গোত্র কর্তৃক অন্য গোত্রের উপর প্রভুত্ব কায়েম; 

ঘ) আন্তঃউপজাতি যুদ্ধবিগ্রহ এবং বিজিতের উপর বিজয়ীর আধিপত্য। এ মতবাদের সারকথা হচ্ছে রাষ্ট্রের উৎপত্তির মূলে রয়েছে ‘শক্তি’ । বল প্রয়োগের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। 


ঘ) সামাজিক চুক্তিমূলক মতবাদ: 

সামাজিক চুক্তিমূলক মতবাদের কয়েকজন সমাজচিন্তাবিদ হচ্ছেন হল, লক এবং রুশো (Hobbes, Locke and Rousseau)। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে সমাজে বসবাসকারী মানুষের চুক্তির মাধ্যমে। তারা মনে করেন, আদিম যুগে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে (state of nature) বাস করতো এবং প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হতো। পরে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রকৃতির রাজ্যে বসবাসকারী মানুষ চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। রুশোর সামাজিক চুক্তির রূপরেখা হচ্ছে, “আমরা সবাই আমাদের সমগ্র ক্ষমতা একত্রিত করে সাধারণ ইচ্ছা’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধীনে রাখতে অঙ্গীকার করি।” এভাবে তারা সাধারণ ইচ্ছার (General will) অধীনে রাষ্ট্র গঠন করে।


ঙ) বিবর্তনবাদী মতবাদঃ 

এই তত্ত্বের মূলকথা হলো রাষ্ট্র আকস্মিকভাবে উৎপত্তি লাভ করেনি। বরং সমাজের ক্রমবিকাশের ধারায় বিভিন্ন উপাদানের ক্রিয়াশীল ভূমিকার ফলে মানব সমাজে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। পরিবার ও জ্ঞাতি সম্পর্ক, ধর্ম, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদি রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নৃবিজ্ঞানীদের মতে মাতৃপ্রধান পরিবারই আদি পরিবার। পশুপালন সমাজের আবির্ভাবের সাথে পিতৃপ্রধান পরিবারের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় সমাজের বয়স্ক পুরুষের হাতে নেতৃত্ব কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। পরিবারে পিতার কর্তৃত্ব ছিল নিরংকুশ। বস্তুত, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক চেতনা পিতৃপ্রধান পরিবারেই প্রথম লক্ষ করা যায়। জ্ঞাতিসম্পর্ক রাজনৈতিক জীবনের সংহতি বিধানে সহায়ক ছিল। কৌম বা গোষ্ঠী প্রধান গোলযোগ মিটাতে পরিবার প্রধানের ভূমিকাই পালন করতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি পরিবার ও কৌম প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন। মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (MacIver) মনে করেন, পরিবার নামক প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি করেছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে ধর্মের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন গোত্রের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল। গোত্রপতি নিজেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। গোত্রপতির আদেশ-নির্দেশ অমান্য করার অর্থ ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারণ করা। নেতৃত্বের প্রতি এরূপ আনুগত্য রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যুদ্ধ-সংঘাত ইত্যাদি রাষ্ট্র গঠনে বিশেষ অবদান রেখেছে। | 


চ) নৃতাত্ত্বিক মতবাদ: 

নৃবিজ্ঞানীদের মতে, রাজনৈতিক চেতনা ও নেতৃত্বের ধারণা থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে। আদিম যূথবদ্ধ (Horde society) সমাজের প্রাথমিক পর্যায়ে নেতৃত্বের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু যুথ জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে একসময় প্রয়োজনের তাগিদেই দলপতি বা নেতার আবির্ভাব ঘটে। ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক চেতনা। রাষ্ট্রের উৎপত্তির মূলে দলপতি ও রাজনৈতিক চেতনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান, লোঈ, ফ্রীড প্রমুখ নিজ নিজ ধারণা ব্যক্ত করেছেন। মর্গানের মতে, জৈবিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সামাজিক সংগঠনগুলোতে পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। লোঈ মনে করেন, সামান্য হলেও আদিম সমাজে রাজনৈতিক চেতনা বিদ্যমান ছিল। ফ্রীডের মতে, সামাজিক সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধার অসম অধিকার (unequal access) হচ্ছে রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বশর্ত। সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধায় যাদের বেশি মাত্রায় অধিকার রয়েছে তাদেরকে সে অধিকার রক্ষা করতে হয়। আর এটা করতে হলে তাদের রাষ্ট্রশক্তি বা ক্ষমতার ব্যবহার জরুরি হয়।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->