বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
একটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের মাপকাঠি স্বরূপ। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনমতের প্রতিফলন ঘটে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে নির্বাচনী সংস্থা হল নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বিদ্যমান। তাই সরকার গঠনে নির্দিষ্ট সময় পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় ও স্থানীয় উভয় ধরনের নির্বাচনই পরিচালনা করে থাকে ।
সাংবিধানিক : বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সাংবিধানিকভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সংবিধানের সপ্তম ভাগে ১১৮ থেকে ১২৬ নং অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের গঠন, কার্যাবলি সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করার জন্য শাসন বিভাগের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার বিষয়টিও সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ: বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নিয়োগ দিয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব হল নিরপেক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্কের আজও অবসান হয় নি। দু'একটি ব্যতীত প্রত্যেকটি কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক গুলোর মতানৈক্য দেখা গেছে।
এককেন্দ্রিক: বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এককেন্দ্রিক। তবে দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় এর প্রশাসনিক কার্যালয় রয়েছে। স্থানীয় কার্যালয়গুলো কেন্দ্র হতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সকল পর্যায়ের নির্বাচনেই কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের ভূমিকা থাকে।
বাংলাদেশে নির্বাচন :
স্বাধীনতার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষ কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দশ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া জনগণের ভোটে ৩ বার (১৯৭৮,১৯৮১ ও ১৯৮৬) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ৩ বার (১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১) গণভোটসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রকৃতিকে দুটি পর্যায়ে আলোচনা করা যায়। প্রথমত, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন পূর্ব পর্যায় এবং দ্বিতীয়ত, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন পরবর্তী পর্যায়।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন পূর্ব পর্যায় (১৯৭২-১৯৯০)
১৯৭২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতি বেশির ভাগ সময়ই অস্থিতিশীল ছিল। ১৯৭১ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বেসামরিক সরকার বিদ্যমান ছিল। এ সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার টুটি চেপে ধরা হয়। জারি করা হয় সামরিক শাসন। ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসকেরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে। এর ফলে নির্বাচন ব্যবস্থাও সে ভাবে গড়ে উঠতে পারেনি।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন পরবর্তী পর্যায় (১৯৯১-২০১৬)
১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চারটি নির্বাচন অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনটি বিশ্বের অন্যান্য সংসদীয় পদ্ধতির দেশের মতই নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় ও জাতীয় মিলে অনেকগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির অনেক। কিন্তু নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের ধারাকে ম্লান করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই বেশি বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions