ডিজিটাল প্রযুক্তি: আগামীর প্রস্তুতি : সেশন-১ : সত্য অনুসন্ধান
আমরা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যথার্থতা যাচাই করে আমাদের বিদ্যালয়ের একটি বুলেটিন তৈরি করব। এছাড়া নিজেদের জন্য তৈরি করব একটি অনলাইন পোর্টফলিও। যে পোর্টফলিওতে পুরো বছর জুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ সকল বিষয়ে আমরা যা যা কাজ বা প্রজেক্ট করব সেগুলোর নিয়মিত আপলোড দিতে থাকব। এক বছর পর কী কী গবেষণা করলাম, প্রজেক্ট করলাম তা যে কেউ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে দেখে জানতে পারবে।
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আমরা খুব সহজে যে কোনো তথ্য এক মুহূর্তেই অনুসন্ধান করে বের করে ফেলি। আবার এই ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করছে। আমরা আমাদের যে স্কুল বুলেটিন তৈরি করব সেখানে আমরা সবাই কমপক্ষে একটি করে প্রচারিত ভুল তথ্যের বিপরীতে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করব এবং সে সম্পর্কে একটি করে নিবন্ধ বা আর্টিকেল লিখব।
কাজটি করতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে কীভাবে ভুল তথ্য প্রচারিত হতে পারে। নিচের ঘটনাগুলো পড়ে আমরা খুঁজে বের করব, কীভাবে ভুল তথ্য প্রচারিত হয়ে থাকে।
সাগর পড়াশোনা শেষ করে কয়েকটি ব্যাংকে চাকরির আবেদন করেছে। চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য সে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিন সে বাসে বসে চাকরির সাক্ষাৎকার বিষয়ক একটি বই পড়ছিল। এই সময় তার পাশের সিটে বসা একজন লোক তাকে চাকরির বই পড়তে দেখে আলাপ করতে করতে জানাল, সে লোকটির বড় ভাই একটি বড় ব্যাংকে কাজ করে। কিছু টাকা দিলে সে তার ভাইয়ের কাছে সাগরের চাকরির ব্যাপারে বলবে। সাগর রাজি হয়ে টাকার ব্যবস্থা করল। এক সপ্তাহের মধ্যে লোকটি সাগরকে ডেকে একটি চিঠি দিলো। সাগর চিঠি খুলে দেখল এটি তার নামে ওই ব্যাংক থেকে নিয়োগপত্র অর্থাৎ সাগরের চাকরি হয়ে গেছে। লোকটি সাগরকে একটি পত্রিকার ওয়েবসাইটও দেখাল যেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অ্যাপ্লিকেশন নাম্বার দেওয়া আছে, সাগর তার অ্যাপ্লিকেশন নাম্বারও দেখতে পেল। সাগর খুশি হয়ে লোকটিকে আরও কিছু টাকা দিলো। চিঠিতে উল্লেখিত দিনে সাগর ওই ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে জানল তার হাতে থাকা নিয়োগপত্রটি আসলে নকল।
জ্যোতি নবম শ্রেণীতে পড়ে। একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরলে জ্যোতির মা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ দেওয়া হবে। ইউটিউবে একটি সংবাদে তিনি দেখেছেন। ওই সংবাদে কীভাবে ল্যাপটপের জন্য আবেদন করতে হবে সেটিও বলেছে। সংবাদটি দেখল, বুঝতে পারল বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি টেলিভিশনের সংবাদ। জ্যোতির মনে কোনো সন্দেহ থাকল না, সে সকল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করে ইমেইল করল। একদিন পর এক ব্যক্তি জ্যোতির মাকে ফোন করল এবং জানাল ল্যাপটপ পাঠাতে কুরিয়ার খরচ হিসেবে কিছু টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠালে তারা ল্যাপটপ পাঠিয়ে দিবে। জ্যোতি মায়ের ফোন থেকে টাকা পাঠিয়ে দিল। কিন্তু এরপর থেকে সে ওই মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পেল এবং জ্যোতি বুঝতে পারল সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
পলাশের বাবা তার সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজে একটি ছবি পেলেন যেটি তারই এক বন্ধু তাকে পাঠিয়েছেন। ছবিটি আসলে দেশের স্বনামধন্য একটি পত্রিকার ছবি। পত্রিকার লোগো এবং কার্ড দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি আজই ওই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ছবির সংবাদটি একটি পাঠ্যবইয়ের ছবি নিয়ে। সংবাদে লেখা আছে পাঠ্যবইতে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠাটির ছবি সংবাদটিতে দেওয়া আছে। পলাশ নবম শ্রেণিতে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই পলাশের বাবার সংবাদটি পেয়ে মেজাজ খারাপ হল। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্ট থেকে ঐ সংবাদটি শেয়ার করলেন। তার একাউন্ট থেকে তার পরিচিত আরও অনেকেই এটি শেয়ার করলেন। এক সপ্তাহ পর পলাশের বিদ্যালয়ের অভিভাবক সভায় পলাশের বাবা ব্যাপারটি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করার প্রস্তাব জানালেন। প্রধান শিক্ষক জানালেন খবরটি আসলে মিথ্যা এবং বিকৃত করা সংবাদ।
সার্চ ইঞ্জিনে (Google, Bing, yahoo) Fact Check Bangladesh' এই KeyWord গুলো দিয়ে সার্চ করলে আমরা কিছু ওয়েবসাইটের নাম পাব যেগুলো ভুল তথ্যকে চেক করে বা যাচাই করে দেয়।
আগামী সেশনের প্রস্তুতি : বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে আমরা বাড়িতে এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে আরও কিছু সংবাদ দেখব এবং লিখে রাখব আর কী কী উপায়ে কোনো সংবাদ বা তথ্যকে বিকৃত করা যায়। উপায়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করবো। ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলেও আমরা আমাদের চারপাশ থেকে বিভিন্ন ঘটনা বা তথ্য পর্যবেক্ষন করে খুঁজে বের করবো কি উপায়ে কোনও সংবাদ বা তথ্যকে বিকৃত করা যায় এবং এগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবো।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions