Home » » ডেটা কমিউনিকেশন কি

ডেটা কমিউনিকেশন কি

ডেটা কমিউনিকেশন কি

বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে, কম্পিউটার বা অন্য কোন ডিভাইসে ডেটা ও তথ্য স্থানান্তর করাকে ডেটা কমিউনিকেশন বলা হয়। ডেটা কমিউনিকেশন অনেক গুলো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নিম্নে ডেটা কমিউনিকেশনের সকল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ডেটা:

সুনির্দিষ্ট আউটপুট বা ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত কাচামাল সমূহকে উপাত্ত বা ডেটা বলে। সহজ কথায়, ইনফরমেশন বা তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে ডেটা বা উপাত্ত।

তথ্য :

সরবরাহকৃত ডেটা থেকে প্রক্রিয়াকরণের পর নির্দিষ্ট চাহিদার প্রেক্ষিতে সুশৃঙ্খল যে ফলাফল পাওয়া যায়, তাকেই বলা হয় তথ্য বা ইনফরমেশন।

-যে কোন রেকর্ড প্রকৃতপক্ষে কতকগুলো ইনফরমেশন যেমন: নাম, ঠিকানা ইত্যাদি এর সমষ্টি।

-তথ্যপ্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য উন্নত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যা তথ্য প্রাপ্তির জন্য খুবই জরুরী।


ডেটা প্রসেসিং

কম্পিউটার কাজ করে আইপিওএস সাইকেলের মাধ্যমে অর্থাৎ ইনপুট, প্রসেসিং, আউটপুট ও স্টোরেজের মাধ্যমে। কম্পিউটার প্রথমে বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ডেটা বা উপাত্ত গ্রহণ করে। এরপর ডেটার প্রক্রিয়াকরণ করে সিপিইউ নামক সিস্টেম ডিভাইসের মাধ্যমে এবং ফলাফল প্রকাশ করে আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে। এবং সর্বশেষ আউটপুট ডেটাগুলো স্টোরেজ বা সংরক্ষনের মাধ্যমে। 

 

ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড (Data Transmission Speed) 

এক কম্পিউটার হতে অন্য কম্পিউটারে বা এক ডিভাইস তেকে অন্য ডিভাইসে, অথবা এক স্থান হতে অন্য স্থানে ডেটা স্থানান্তরের হারকে ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড বলে। এই ট্রান্সমিশন স্পিডকে অনেক সময় Bandwidth-ও বলা হয়। এই ব্যান্ডউইথ সাধারণত Bit per Second (bps) এ পরিমাপ করা হয়। তাই একে Band Speed ও বলা হয়। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ বিট ট্রান্সমিট তথ্য স্থানান্তর করা হয়, তাকে bps বা Bandwidth বলে। এই ডেটা ট্রান্সফার গতির উপর ভিত্তি করে ডেটা কমিউনিকেশন স্পিডকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

১। ন্যানো ব্যান্ড : Nano Band এর ডেটা স্থানান্তরের গতি সাধারণত ৪৫ থেকে ৩০০ bps পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেলিগ্রাফিতে সাধারণ এই ব্যান্ডকে ব্যবহার করা হয়। তাই টেলিগ্রাফিতে ডেটা স্থানান্তরের গতি কম।

২। ভয়েস ব্যান্ড : Voice Band এর ডেটা স্থানান্তরের গতি সাধারণ সাধারণত ৯৬০০ bps পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত টেলিফোনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কম্পিউটার থেকে প্রিন্টারে অথবা কার্ড রিডার থেকে কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ভয়েস ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়।

৩। ব্রড ব্যান্ড: Broad Band একটি উচ্চগতি সম্পন্ন ডেটা স্থানান্তর ব্যান্ড উইথ, যার গতি কমপক্ষে ১ মেগা বিট পার সেকেন্ডে বা Gbs পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত কো-এক্সিয়াল ক্যাবল (Co-axial Cable) এবং অপটিক্যাল ফাইবারে ডেটা স্থানান্তরে ব্রড ব্যান্ড ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সাটেলাইট কম্পিউনিকেশন এবং মাইক্রোওয়েভ কমিউনিশনও এই ব্রড ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়।


ডেটা ট্রান্সমিশন মোড (Data Transmission Mode):

ডেটা কমিউনিকেশন সিস্টেমে ডেটাকে উৎস থেকে গন্তব্যে পাঠানো হয়। উৎস থেকে গন্তব্যে ডেটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ডেটা প্রবাহের দিককে ডেটা ট্রান্সমিশন মোড বলা হয়। ডেটা প্রবাহের দিকের উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশন মোডকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: সিমপ্লেক্স, হাফ-ডুপ্লেক্স, ফুল-ডুপ্লেক্স

১। সিমপ্লেক্স (Simplex) : কেবল একদিকে ডেটা প্রেরণের মোডকে সিমপ্লেক্স বলে। সিমপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সমিশন মোডে শুধু একদিকে ডেটা প্রেরণ করা যায়। অর্থাৎ হয় ডেটা পাঠানো যায়, অথবা ডেটা গ্রহণ করা যায়।; কিন্তু দুটি কাজ করা যায় না। রেডিও, টিভি হলো সিমপ্লেক্স ডাটা মোড।

২। হাফ-ডুপ্লেক্স (Half-Duplex) : হাফ-ডুপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সমিশন মোডে উভয় দিকে ডেটা প্রেরণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা একই সাথে বা যুগপৎভাবে করা যায় না। অর্থাৎ যে কোনো প্রান্ত একই সময় শুধু ডেটা গ্রহণ বা প্রেরণ করতে পারে কিন্তু গ্রহণ ও প্রেরণ এক সাথে করতে পারে না। ওয়াকিটকি হলো হাফ-ডুপ্লেক্স এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

৩। ফুল-ডুপ্লেক্স (Full Duplex) : ফুল-ডুপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সমিশন মোডে একই সময়ে উভয় দিকে ডেটা প্রেরণ করা যায়। যেমন: মোবাইল ফোন, টেলিফোন হলো ফুল-ডুপ্লেক্স এর উদাহরণ। আমরা মোবাইল ফোন বা টেলিফোনে একই সময়ে দুই প্রান্ত থেকে কথা বলতে বা শুনতে পারি।


ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম (Data Communication Media)

ডেটা চলাচলের মাধ্যমগুলোকে ডেটা কমিউনিকেশন মাধ্যম বা Data Communication Media বলা হয়। যেমন: ক্যাবল, সাধারণ টেলিফোন লাইন, বেতার তরঙ্গ বা রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ভূ-উপগ্রহ ব্যবস্থা, ইনফ্রারেড ইত্যাদি।


ডেটা কমিউনিকেশনের জন্য কেবল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিম্নে আলোচনা করা হলো:

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable) :

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে একসঙ্গে কয়েক জোড়া ক্যাবল পাকানো অবস্থায় থাকে যার মধ্য দিয়ে ডেটা সিগন্যাল প্রবাহিত হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুটি পরিবাহী তারকে পরস্পর সুষমভাবে পেচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেচানো তার দুটিকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ক্যাবলই সাধারণত টেলিকমিউনিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দ্বারা ১০০ মিটারের বেশি দুরত্বে ডেটা প্রেরণ করা যায় না।


কো-এক্সিয়াল ক্যাবল (Coaxial Cable) : 

দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী বা প্যারা-বৈদ্যুতিক পদার্থের সাহায্যে এ ক্যাবল তৈরি করা হয়। ভেতরের পরিবাহী তারকে আচ্ছাদিত করার জন্য এবং বাইরের পরিবাহী তার থেকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ থাকে। বাহিরের পরিবাহী তারকে প্লাস্টিকের জ্যাকেট এর সাহায্যে ঢেকে রাখা হয়। ভিতরের পরিবাহী তারটি সোজা রাখা হয় এবং বাহিরের পরিবাহী তারটি চারদিক থেকে প্যাচানো থাকে। এই ধরনের পরিবাহী তার তৈরি করতে সাধারণত কপার ব্যবহার করা হয়। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ডেটা ট্রান্সফার রেট ১০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল দ্বারা রিপিটার ব্যতীত ১ কিলোমিটারের বেশি দুরত্বে ডেটা প্রেরণ করা যায় না।


অপটিক্যাল ফাইবার (Optical Fiber) :

অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিভিন্ন তারের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দ্বারা তৈরি এক ধরনের খুব সরু ও নমনীয় কাচতন্তুর আলোক নল, যা আলো নিবন্ধকরণ এবং পরিবহণে সক্ষম। ভিন্ন প্রতিসরাংকের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার গঠিত। অপটিক্যাল ফাইবারের কেন্দ্রের মূল তারটি সিলিকা, কাচ বা স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। 

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলে প্রধান ৩টি অংশ থাকে। যথা:

১। কোর (Core) : আলোক সিগন্যাল সঞ্চালনের প্রধান কাজটি করে ফাইবারের অভ্যন্তরে গ্লাস বা প্লাস্টিক কোর।

২। ক্ল্যাডিং (Cladding) : কোরের ঠিক বাহিরের স্তরটি হচ্ছে কাচের তৈরি যা কোর থেকে নির্গত আলোকরশ্মি প্রতিফলিত করে তা পূণরায় কোরে ফেরত পাঠায়। এই স্তরটি ক্ল্যাডিং নামেও পরিচিত। কোরের প্রতিসরাংক ক্ল্যাডিংয়ের প্রতিসরাংকের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

৩। জ্যাকেট (Jacket) : প্রতিটি স্বতন্ত্র ফাইবার আবার প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে। একে জ্যাকেট বলা হয়।

 

অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন সিস্টেম:

প্রেরক যন্ত্র, প্রেরণ মাধ্যম এবং গ্রাহক যন্ত্র এ তিনটি মূল অংশ নিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন সিস্টেম গঠিত হয়। প্রেরক যন্ত্র উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে ফাইবারের মাধ্যমে তা গ্রাহক যন্ত্রে পৌছায়। ফাইবারের মাধ্যমে আমরা যেসব ডেটা পাঠাতে চাই তা সাধারণত এনালগ সিগন্যাল বা ডিজিটাল সংকেত হয়ে থাকে। গ্রাহক যন্ত্র এই সংকেতকে মডুলেশনের মাধ্যমে ফাইবারের মধ্য দিয়ে পরিবহন উপযোগী আলোক তরঙ্গে পরিণত করে ফাইবারের মধ্য নিক্ষেপ করে। অপটিক্যাল ফাইবার আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে ডেটা পরিবহন করে থাকে। গ্রাহক যন্ত্র ফাইবার থেকে ডেটা উদ্ধার করে ডিমডুলেশন, অ্যামপ্লিফিকেশন এবং ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌছে দেয়। অপটিক্যাল ফাইবারে ডেটা ট্রান্সফার রেট ১০এমবিপিএস থেকে ২ জিবিপিএস পর্যন্ত হয়ে থাকে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *