বৃত্তিমূলক শিক্ষা অনুচ্ছেদ
বৃত্তিমূলক শিক্ষা
ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর মধ্যে শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল শাসক ও শাসনযন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কতিপয় কেরানী সৃষ্টি করা। তারা সে কাজে সফল হয়েছিল। কিমত্মু ঔপনিবেশিক শৃঙখলা ভেঙ্গে আমরা বেরিয়ে এলাম বটে কিমত্মু ঐ কেরানী তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ভাঙতে পারলাম না। এ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। এখনো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিসহ অসংখ্য বেকার সৃষ্টি করছে। অথচ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি বৃত্তিমূলক হতো, যদি আমরা আমাদের সম্পদ ও চাহিদার দিকে তাকিয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে জাতি হিসেবে আজ যে ভাঙনের মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়েছি, তেমনটি হতো না। স্বাধীন দেশের অধিবাসী হয়েও আমরা এ সত্য উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি যে ডিগ্রি অর্জনই বড় কথা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণরসের সংস্থান করতে পারার প্রশিক্ষণই হওয়া উচিত শিক্ষার উদ্দেশ্য। আমরা এমন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই যে শিক্ষা বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী না করে। আমরা মেনে নিচ্ছি প্রতিভাবানের সোনালী স্পর্শে দেশ স্বর্ণময় হয়ে ওঠে। কিন্তু সে ধরনের প্রতিভা সুলভ নয়। সব দেশেরই অধিকাংশ লোক সাধারণ মানের; তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষা একটি মূল্যহীন বিলাস মাত্র- তাদের জীবনকে ঐ শিক্ষা সম্ভাবনাময় করে তোলে না । আধুনিক সভ্য দেশে মানুষকে বিবেচনা করা হয় তার সামর্থ দিয়ে। যার সামর্থ যেমন তাকে সেই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হয়। আমাদের দেশেও প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। সেই বিপুল জনসংখ্যাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারলে আমাদের সামগ্রিক মুক্তি সম্ভব। তাই সামগ্রিক মুক্তির জন্য, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার পথ প্রশসত্ম করার জন্য আমাদের চাই বৃত্তিমূলক শিক্ষা, কেরানি তৈরির এবং শিক্ষিত বেকার তৈরির শিক্ষা নয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions