একাত্তর গল্প
একাত্তর
রিক্সায় বাসায় ফিরছি। ষাটের উপরে বয়স রিক্সাওয়ালা গল্প বলছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে কোয়ার্টারে পৌঁছে দিতে যাচেছন। সারা রাস্তায় গল্প বলছিলেন তিনি। একাত্তরে তার বয়স ছিল পনেরর কাছাকাছি। মাঠে ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না সেই সময়। বেশ কটি অপারেশনে যোগ দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি আশেপাশের এলাকায়। কিছুদিন পর গ্রামে এসে দেখেন যুদ্ধে যাবার অপরাধে পাকসেনারা তার মা-বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বাড়িটাও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধে যাবার কারণে তেমন পড়াশুনো করতে পারেননি। তাই যুদ্ধ শেষে কোন চাকরিও জোটাতে পারেননি। রিক্সা চালিয়েই জীবন কাটাচেছন এখন। একাত্তরে আমার জনম, তাই যুদ্ধের কথা ইতিহাসে পড়েছি। কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। ঐ রিক্সাওয়ালার কথাগুলো আমার কাছে রূপকথার মতো লাগছিলো। বাসায় পৌঁছে রিক্সা থেকে নামলাম। রিক্সাভাড়া ছাড়াও তাকে বাড়তি কিছু টাকা দিতে চাইলাম, তিনি নিলেন না। বললেন- ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, পরিশ্রম করে খেতে পছন্দ করি। কারো দয়া বা সাহায্যের আমার প্রয়োজন নেই।’ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions