সংকর ধাতু কাকে বলে
দুই বা ততোধিক ধাতুর সমসত্তব বা অসমসত্তব মিশ্রণে যে কঠিন পদার্থ তৈরি হয় তাকে সংকর ধাতু বা ধাতু সংকর বলা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গলিত তামা ও দসত্মা যে কোনো অনুপাতে মিশিয়ে ঠান্ডা করলে এক শক্ত ধাতব পদার্থ পাওয়া যায়। একে ব্রাস বা পিতল বলে। পিতলের গুণাগুণ বা ধর্ম তামা এবং দসত্মার গুণাগুণের চেয়ে আলাদা। তামা ও দসত্মার মিশ্রণের অনুপাত ভিন্ন করে আমাদের প্রয়োজন মত সংকর ধাতু পিতল তৈরি করতে পারি। শুধু পিতলই নয়, তামা ও টিনের মিশ্রণে ব্রোঞ্জ তৈরি হয়। স্টেইনলেস স্টিলও একটি সংকর ধাতু। এ ছাড়াও কাসা, মনেল মেটাল, জার্মান সিলভার, ডুরালমিন ইত্যাদি সংকর ধাতুর উদাহরণ।
সংকর ধাতুর গুরুত্ব
প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগে বিভিন্ন গুণ সম্পন্ন সংকর ধাতু উৎপাদন করা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তাই সংকর ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রয়োজন অনুসারে দুই বা ততোধিক ধাতু বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রিত করেও সংকর ধাতু তৈরি করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ডুরালুমিন। এটি একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সংকর ধাতু যা এরোপ্লেন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি তামা, এ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামের মিশ্রণে তৈরি হয়। গুরুত্বের বিচারে সংকর ধাতুর গুণাগুণ নিমণলিখিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় :
১। ব্যবহার উপযোগী ধাতব পদার্থ তৈরি করা : ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুণ সম্পন্ন ধাতব পদার্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু একক ধাতুর পক্ষে বিভিন্ন গুণ থাকা সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন অনুসারে দুই বা ততোধিক গুণ সম্পন্ন ধাতুর মিশ্রণের অনুপাত পরিবর্তন করে আমাদের প্রয়োজনীয় গুণ সম্পন্ন সংকর ধাতু তৈরি করা যায়।
২। ধাতব ধর্মের নিয়ন্ত্রণ করা :ধাতব পদার্থের উল্লেখযোগ্য ধর্মগুলো হচ্ছে- গলনাংক, নমনীয়তা, সম্প্রসারণশীলতা, ঘনতব, কাঠিন্য, ওজন ইত্যাদি।
৩। সংকর ধাতু তৈরির মাধ্যমে উপরোক্ত গুণাবলী প্রয়োজন মত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৪। তাপ পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস ও বৃদ্ধি : সংকর ধাতুর উপাদান ও অনুপাত পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুসারে তাপ পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানো বা কমানো সম্ভব। এতে করে সংকর ধাতুকে আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি।
৫। বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস বৃদ্ধি: গঠনকারী ধাতুর উপাদান পরিবর্তন করে আমরা সংকর ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতাও হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারি। সেটা আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় গঠনকারী মৌলিক ধাতু হতে সংকর ধাতু উৎকৃষ্ট গুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেহেতু আমাদের ইচ্ছা ও প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা সংকর ধাতুর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কাজেই মৌলিক ধাতব পদার্থের তুলনায় সংকর ধাতুর গুরুত্ব ও ব্যবহার অনেক বেশি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions