Home » » আঠারো বছর বয়স কবিতা

আঠারো বছর বয়স কবিতা

আঠারো বছর বয়স কবিতা

ভুমিকা:
আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘ছাড়পত্র’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে এবং আঠারো বছর বয়সের বিভিন্ন গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আঠারো বছর বয়স

সুকান্ত ভট্টাচার্য

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।
আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্য প্রাণ।
আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।
তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ।


সারসংক্ষেপ:
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরেছেন। আঠারো বছর বয়সে পদার্পণের মধ্য দিয়ে মানুষ যৌবনপ্রাপ্ত হয়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনে ঝুঁকি নেবার উপযোগী। অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা বিপদ অতিক্রম করে এরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্ত্তত। আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া এ বয়সের ধর্ম। অদম্য মনোবল, অপ্রতিরোধ্য গতিতে তরুণ সমাজ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অকাতরে প্রাণ দিতে পারে। আমাদের কাছে তাই তারুণ্যই জীবন, তারুণ্যই কাঙিক্ষত। কারণ সৃষ্টিধর্মী ও কল্যাণকর সব কিছু তরুণদেরই দান। তাই কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত এ দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে নিজের চিন্তার চেয়ে সমাজের চিন্তা প্রবল, সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এ বয়সীরা, আবার সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধাচরণ করে এ বয়সেই। কবির আহবান, এ দেশের মাটি ও মানুষের চেতনা আঠারোকে ধারণ করুক।

নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ- এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্ত্ততি নিতে হয় তাকে। এদিন থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা- যৌবনে পদার্পণ করে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর- অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা এ বয়সেই মানুষের জীবনে বিশেষ তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং মনোজগতে তার প্রতিক্রিয়াও হয় গভীর। এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা- ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত্ব, মতবাদ, ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে এই বয়সের তরুণেরা। এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য- দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমসত্ম বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তাই এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে। এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে- সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারার অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে এ বয়স নেতিবাচক কালো অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে। এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে- আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি- এসবই আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য। কবি প্রার্থনা করেন, এসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনে চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা- চারপাশে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার- জীবনের এই সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি- নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে- এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে- তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন বাসত্মবায়নে, নিত্য-নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি- অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই মানুষ নিয়ে থাকে।

কবি পরিচিতি:
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার উনশিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য ও মায়ের নাম সুনীতি দেবী। সুকান্ত ভট্টাচার্য ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন মার্কসবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী একজন তরুণ কবি। সে-সময়ের দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোরসভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক ছিলেন। তেতালিস্নশের মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে যাবতীয় অনাচার, বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ। দরিদ্র ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি কবিতাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ছিন্নভিন্ন মানুষ, যারা অভাব-অনটন, রোগ-শোকে ধুঁকে বুকের মাত্র ক’খানা হাড় নিয়ে বেঁচে আছে অদম্য বাসনায়- সুকান্ত সেইসব গণমানুষের বন্ধু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর কবিতা স্বাধীনতাকামী মানুষের মনে সাহস ও উদ্দীপনা জুগিয়েছে। সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ১৩ মে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র একুশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ :
কাব্যগ্রন্থ : ছাড়পত্র (১৯৪৭), ঘুম নেই (১৯৫০), পূর্বাভাস (১৯৫০);
ছড়া : মিঠেকড়া (১৯৫২),
গীতিনাট্য : অভিযান (১৯৫৩), সূর্য-প্রণাম (১৯৫৩);
সংগীত : গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫);
গল্পগ্রন্থ : হরতাল (১৯৬২)।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->