Home » » ঋণ নিয়ন্ত্রণ কি

ঋণ নিয়ন্ত্রণ কি

ঋণ নিয়ন্ত্রণ কি

ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলতে কি বোঝায়?
সুদের বিনিময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে এবং উচ্চ হারে আবার তা মক্কেলের কাছে ঋণ হিসেবে দেয়। এ ঋণ অর্থ সরবরাহের একটি বিরাট অংশ। তাই এর পরিমাণ বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় এবং কমে গেলে মুদ্রা সংকোচন দেখা দেয়। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এ ধরনের ঋণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ কাজটি মূলতঃ বাংলাদেশ ব্যাংক তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন নীতি ও কৌশলের মাধ্যমে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন নীতি ও কৌশলের মাধ্যমে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। ঋণ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো:
ক) পরিমাণগত পদ্ধতি
বাজারের পুরো ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার যে কৌশল কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করে, তাকে সংখ্যাত্মক বা পরিমাণগত পদ্ধতি বলে।

নিচে কৌশলগুলো বর্ণনা করা হলো:
১. ব্যাংক হার নীতি
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংকটের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে সুদের হারে ঋণ বা অগ্রীম গ্রহণ করে তাকে ‘ব্যাংক হার’ (Bank Rate) বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাংক হার বাড়ানো বা কমানোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং দেশে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

মুদ্রা বাজারে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক হার’ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকও জনগণকে ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং দেশে ঋণের পরিমাণ কমে যায়। অন্যদিকে, দেশে ঋণের পরিমাণ কমে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক হার’ কমিয়ে দেয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে উৎসাহী হয়। খরচ কমে যাওয়ায় মুদ্রা বাজারে সুদের হার কমে যায় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার আগ্রহের কারণে ঋণের চাহিদা বেড়ে যায়।

২. খোলা বাজার নীতি
বিভিন্ন খরচ নির্বাহ করার জন্য সরকারকে মাঝে মধ্যে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। আবার অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য বাজার হতে বিভিন্ন ধরনের বন্ড, সিকিউরিটিজ, শেয়ার ইত্যাদি সরকার কিনতে পারে। এগুলো কেনাবেচার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। বাজারে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুবিধাজনক শর্তে সরকারী বন্ড বাজারে ছাড়ে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ তুলে নিয়ে এসব ব- কেনে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ কমে যায় এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়।

অন্যদিকে, বাজারে ঋণের ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে বেসরকারী বন্ড, সিকিউরিটিজ, শেয়ার ইত্যাদি কিনে নেয়। ফলে বাজারে অর্থের যোগান বেড়ে যায়, যা এক পর্যায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আমানত হিসাবে জমা হয় এবং তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। খোলাবাজার নীতি খুব জনপ্রিয় এবং প্রতিটি দেশে এর প্রচলন খুব বেশি।

৩. বিধিবদ্ধ জমার হার পরিবর্তন নীতি
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। একে বিধিবদ্ধ জমা বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই জমার হার কমিয়ে বা বাড়িয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

বাজারে ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিবদ্ধ জমার হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ হিসাবে দেওয়ার মতো তহবিল কমে যায়।

অন্যদিকে, বাজারে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিবদ্ধ জমার হার কমিয়ে দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আমানতের অপেক্ষাকৃত কম অংশ বিধিবদ্ধ জমা হিসাবে রাখতে হয় এবং তাদের হাতে ঋণ হিসাবে দেওয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে দেশে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

খ) নির্বাচনমূলক পদ্ধতি
আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সে জন্য কোন অনগ্রসর খাতকে গুরুতব দিতে হয়। দেশের কোন একটি বিশেষ খাতের উন্নয়নের জন্য যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ খাতে ঋণ বাড়ানো বা কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে তখন তাকে নির্বাচনমূলক পদ্ধতি বা গুণগত পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ নয় বরং কোন একটি বিশেষ খাতের ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

তাহলে আসুন, এ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।

১. ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি
এ নীতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে খাতে বেশি ঋণ প্রয়োজন সেই খাতে ঋণ প্রদানের জন্য বাণিজ্যিক ব্যংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। যেমন, আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি চিংড়ি চাষ প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চায় তাহলে এজন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে এ খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য একটি কোটা নির্ধারণ করে দেয়। প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ঋণ সুবিধাও দেয়। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ কমাতে চাইলে ঐ খাতে ঋণের কোটা কমিয়ে দিতে পারে। এভাবে বিশেষ খাতে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বরাদ্দকরণ নীতি বলে।

২. ভোগ্যপণ্যের ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি
টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, মোটরসাইকেল ইত্যাদি ভোগ্যপণ্য কেনার খাতে ঋণের পরিমাণ কাঙ্খিত পর্যায়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর জন্য নিয়মনীতি তৈরী করে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। উগাহরণ স্বরূপ ধরি, কোন ঋণ প্রকল্পে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম পরিশোধ্য মূল্য (Down Payment) একবারে ২০% এবং পরবর্তী ১২ মাসে সমান ১২ কিস্তিতে ঋণের বাকি অংশ ফেরত দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এ খাতে ঋণের পরিমাণ কমাতে চায় তাহলে প্রথম পরিশোধ্য মূল্য ৩০% এবং পরবর্তী ১০ মাসে সমান ১০ কিস্তিতে ঋণের বাকি অংশ ফেরত দেওয়ার নিয়ম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে করে ভোক্তাদের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। আবার ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে ও প্রথম পরিশোধ্য মূল্য কমিয়ে ভোক্তাদের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ বৃদ্ধি করে।

৩. জামানতী ঋণের মার্জিন পরিবর্তন নীতি
সাধারণত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জামানত (collateral) দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। জামানতী ঋণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ মূল্যের জামানতের বিপক্ষে কত টাকা ঋণ দেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জামানতী ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধরা

যাক, এ ধরনের একটি প্রকল্পে ১০০ টাকার সম্পদ জমা রেখে ৭০ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ ৩০% মার্জিন রাখা হয়। ধরুন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ খাতে ঋণের পরিমাণ কমাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জিনের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০% নির্ধারণ করে দিতে পারে। অর্থাৎ নতুন এ নিয়মে ১০০ টাকার সম্পত্তি জামানত রেখে ৬০ টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। এতে ঋণ গ্রহণকারীদের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে যাবে এবং ঋণ নিতে চাইলেও আপনা-আপনি প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ কমে যাবে। অন্যদিকে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জিন কমিয়ে দিতে পারে।

৪. প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ পদ্ধতি
কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত দন্ডনীয় সুদ চার্জ করা, অতিরিক্ত বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া, ব্যাংক রেট বাড়িয়ে দেওয়া ও বিলবাট্টা করণে অতিরিক্ত সুদ ধার্য করা ইত্যাদি।

৫. নৈতিক প্ররোচনা পদ্ধতি
ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ‘নির্দেশনা’ (directive) ইস্যু না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন, দেশে বন্যার ফলে কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করতে পারে। এতে কিছুটা হলেও ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে। যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (Regulator), সেহেতু অন্যান্য ব্যাংক এ ধরনের উপদেশ উপেক্ষা করতে পারে না।

৬. প্রচারনা পদ্ধতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুলেটিন, ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা ও প্রতিবেদন ইত্যাদি প্রকাশ করে দেশের আর্থিক অবস্থা, ব্যাংকিং পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, ঋণনীতি, খাতওয়ারী ঋণের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও করণীয় তুলে ধরতে পারে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়ে, যা তাদের ঋণ ব্যবস্থাপনাকেও প্রভাবিত করে।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কখনো নিয়ন্ত্রক (Regulator), আবার কখনো পরামর্শকের ভূমিকা পালন করে।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->