শব্দ কাকে বলে
শব্দের সংজ্ঞা মুলত দুটি:
১। সাধারণ অর্থে শব্দ কাকে বলে:
শব্দ শক্তির একটি বিশেষ তরঙ্গ যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জন্মায়।
বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ উৎপন্ন হয়, বস্তুর কম্পন থেকে গেলে শব্দ থেমে যায়। তাই ধাতব পাত্র মেঝেতে পড়ে গেলে শব্দের সৃষ্টি হয়, আবার পাত্রটিকে সঙ্গে সঙ্গে চেপে ধরলে কম্পন থেকে যায় এবং শব্দ থেকে যায়। বস্তুর কম্পন পরিমাপের জন্য হার্টজ একক ব্যবহার করা হয়।
শব্দ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় অর্থাৎ মাধ্যম ছাড়া শব্দ চলতে পারে না। মাধ্যমে কম্পন তৈরি করে শব্দ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। চাঁদে শব্দ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমে অর্থাৎ বায়ু নেই বলে চাঁদে শব্দ শোনা যায় না।
২। বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে শব্দ কাকে বলে:
এক বা একাধিক ধ্বনি বা ধ্বনির সমষ্টির অর্থবোধক উচ্চারণ, যা মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে, তাকে শব্দ বলে।
শব্দ কত প্রকার
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ হতে পারে।
১. গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) মৌলিক ও (খ) সাধিত
২. অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) যৌগিক, (খ) রূঢ়ি এবং (গ) যোগরূঢ়
৩. উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) তৎসম, (খ) অর্ধ-তৎসম (গ) তদ্ভব (ঘ) দেশি ও (ঙ) বিদেশি।
১. গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ
ক, মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা | যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন – গোলাপ, নাক, লাল, তিন।।
খ. সাধিত শব্দ : যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। উদাহরণ : চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), নীলাকাশ (নীল যে আকাশ), ডুবুরি (ডুব+উরি), চলন্ত (চল্ + অন্ত), প্রশাসন (প্রশাসন), গরমিল (গর+মিল) ইত্যাদি।
২. অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ
অর্থগতভাবে শব্দসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
ক. যৌগিক শব্দ
খ. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
গ. যোগরূঢ় শব্দ
ক. যৌগিক শব্দ : যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমনগায়ক = গৈ + ণক (অক) - অর্থ : গান করে যে। কর্তব্য = কৃ + তব্য – অর্থ : যা করা উচিত। বাবুয়ানা = বাবু + আনা – অর্থ : বাবুর ভাব। মধুর = মধু + র -অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত। দৌহিত্র = দুহিতা+ষ্ণ -অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি। চিকামারা = চিকা+মারা –অর্থ : দেওয়ালের লিখন।
খ. রুটি শব্দ : যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন—হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ- গরু খোঁজা, তবে বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা।
এ রকম-
বাঁশি - বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র , বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়।
তৈল - শুধু তিলজাত স্নেহ পদার্থ নয়, শব্দটি যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত স্নেহ পদার্থকে বোঝায়। যেমন: বাদাম-তেল।
প্রবীণ - শব্দটির অর্থ হওয়া উচিত ছিল প্রকৃষ্ট রূপে বীণা বাজাতে পারেন যিনি। কিন্তু শব্দটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক ব্যক্তি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
সন্দেশ - শব্দ ও প্রত্যয়গত অর্থে ‘সংবাদ। কিন্তু রূঢ়ি অর্থে ‘মিষ্টান্ন বিশেষ।
গ. যোগরূঢ় শব্দ : সমাস নিম্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন:
পঙ্কজ – পঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)। শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তু ‘পঙ্কজ' শব্দটি একমাত্র ‘পদ্মফুল’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই পঙ্কজ একটি যোগরূঢ় শব্দ।
রাজপুত - ‘রাজার পুত্র’ অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দ হিসেবে অর্থ হয়েছে ‘জাতিবিশেষ।
মহাযাত্রা – মহাসমারােহে যাত্রা অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দরূপে অর্থ ‘মৃত্যু।
জলধি - ‘জল ধারণ করে এমন অর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র ‘সমুদ্র’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions