গীবত
গীবত (অপরের দোষ চর্চা):
হেয় করে তোলার উদ্দেশ্যে পশ্চাতে কারও প্রকৃত দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করাকে গীবত বলে। আর প্রকৃতপক্ষে সে দোষ তার মধ্যে না থাকলে সেটাকে বলে বুহতান, যা গীবতের চেয়েও বড় অপরাধ । জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, পোশাকপরিচ্ছদ, শারীরিক গঠন, বংশ ইত্যাদি যে কোন বিষয়ের দোষ বর্ণনাই গীবতের অন্তর্ভুক্ত। মুখে বলা দ্বারা যেরূপ গীবত হয়, তদ্রুপ অঙ্গভঙ্গী এবং ইশারা ইঙ্গিতেও গীবত হয়। গীবত যেমন জীবিত মানুষের হয় তেমনি মৃত মানুষেরও হয়। ছােট-বড় মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলের দোষ চর্চাই গীবত।
গীবত করা হারাম, যেনার চেয়েও গুরুতর কবীরা গোনাহ । অবশ্য ন্যায্য বিচার প্রার্থনা করতে গিয়ে বিচারকের নিকট প্রতিপক্ষের যে দোষ বর্ণনা করতে হয়, কিংবা কাউকে অপরের দ্বীনী বা দুনিয়াবী ক্ষতি থেকে সাবধান করার উদ্দেশ্যে বা গুরুজনের নিকট অধীনস্তদেরকে শাসন করানোর জন্য যে দোষ-ক্রটি উল্লেখ করা হয় তা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
স্বেচ্ছায় এবং মনোযোগ সহকারে গীবত শ্রবণ করাতেও গীবতের গোনাহ হয়। কারও গীবত করে ফেললে নিজে এস্তেগফার করা, যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য এস্তেগফার করা এবং সম্ভব হলে ও সংগত মনে করলে তার নিকট ওজরখাহী করা উচিত। এভাবেই গীবতের পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। কাউকে গীবত করতে শুনলে তাকে বাধা দাও, না পারলে সে মজলিস ত্যাগ কর, না পারলে সে কথা থেকে মনোযোগ হটিয়ে মনে মনে অন্য কিছু ভাবতে বা পড়তে থাক।
গীবত শোনার পর কয়েকটা কাজ করা উচিত। যেমন:
১. এ শোনা কথা অন্যের কাছে বর্ণনা না করা।
২. যার দোষ শোনা হল তার দোষ খুঁজতে শুরু না করা।
৩. তার উপর বদগোমানী না করা।
৪. গীবতকারীকে পারলে এই গীবতের অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া।
৫. প্রয়োজন মনে করলে আসল ব্যক্তির থেকে জেনে নেয়া যে, ব্যাপারটা কতদূর সত্য। অবশ্য এ ক্ষেত্রে গীবতকারীর নাম উল্লেখ করা উচিত নয়।
গীবতের বদ অভ্যাস পরিত্যাগের জন্য করণীয় হলো:
১. কারও গীবত করে ফেললে তার প্রশংসা করা।
২. তার জন্য দু'আ ও এস্তেগফার করা।
৩. তাকে এ বিষয়টা জানিয়ে দিয়ে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে হিতে ( বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকলে তাকে জানাবে না।
৪. কারও সম্পর্কে কিছু বলতে মনে চাইলেও চিন্তা করে নেয়া যে, এটা গীবত হয়ে যাচ্ছে না তো? যদি গীবতের পর্যায়ভুক্ত হয় তাহলে তা না বলা।
৫. গীবত হয়ে গেলে নিজে তওবা এস্তেগফার করা এবং ভবিষ্যতে আর গীবত না করার প্রতিজ্ঞা করা ।
৬. গীবত কখনো ক্রোধ থেকে করা হয়, কখনও অহংকারের কারণে হয়, কখনও সম্মানের মােহ থেকে হয়, আবার কখনও হিংসা-বিদ্বেষ চরিতার্থ করার জন্যে হয়ে থাকে। যে কারণে গীবত হয় সে কারণের চিকিৎসা করা দরকার।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions