সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য
১. সুসন্তানের জন্য একজন সুন্দর মাতার ব্যবস্থা করাঃ অর্থাৎ, শরীফ ও নেককার নারীকে বিবাহ করা, তাহলে তার গর্ভে সু-সন্তানের আশা করা যায়। কেননা সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মাতার চিন্তা-ভাবনা, মনমানসিকতা ও স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব সন্তানের উপর পড়া শুরু হয় এবং মাতৃকোলে লালন-পালন অবস্থাতেও এই প্রভাব পড়তে থাকে।
২. সন্তানের জীবন রক্ষা করা ও সন্তানের জীবন রক্ষার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা মাতা-পিতার দায়িত্ব। সন্তানের উপর থেকে বালা-মুসীবত যেন দূর হয়ে যায়- তার জন্য সাধ্যমত ব্যবস্থা করা। যেমন: আকীকা করা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. সন্তানকে লালন-পালন করাও মাতা-পিতার দায়িত্ব। এজন্য মাতার উপর দুধপান করানোকে ওয়াজিব করা হয়েছে। মাতার অবর্তমানে বা তাঁর অপারগতার অবস্থায় দুধমাতার মাধ্যমে সন্তানকে দুধ পান করানো হলে তার ব্যয়ভার বহন করা সন্তানের পিতার উপর ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, দুধমাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে চরিত্রবান ও দ্বীনদার মহিলাকে নির্বাচন করা কর্তব্য। কারণ, বাচ্চার চরিত্রে দুধের একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে। এমনিভাবে সন্তানের লালন-পালন হালাল সম্পদ দ্বারা হওয়া চাই, নতুবা সন্তান বড় হওয়ার পর তার মধ্যে হালাল-হারাম-এর পার্থক্য করার প্রবৃত্তি থাকবে না।
৪. সন্তানকে আদর সোহাগের সাথে লালন-পালন করা কর্তব্য। কেননা আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হলে সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
৫, সন্তানের ভাল নাম রাখা মাতা-পিতার দায়িত্ব এবং এটা সন্তানের অধিকার। এর দ্বারা বরকত হাছিল হবে।
৬, সন্তানকে সুশিক্ষা প্রদান করা ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই এ শিক্ষা প্রদান শুরু হবে। তাই সন্তান-ছেলে হোক বা মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তার ডান কানে আযানের শব্দগুলো এবং বাম কানে ইকামতের শব্দগুলো শোনানো সুন্নাত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, এ শব্দগুলোর একটা সুপ্রভাব তার মধ্যে পড়বে। সন্তানকে সর্বপ্রথম যে কথাটা শেখানো উত্তম তা হল “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ”। সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দেয়া এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া কর্তব্য করে দেয়া হয়েছে। সন্তানদের দুনিয়াবী হকের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে সাঁতার কাটা, জীবিকা উপার্জনের জন্য কোন বৈধ পেশা বিষয়ক প্রয়োজনীয় বিষয় শিক্ষা দেয়া, যেনো সে সমাজে সম্মানের সহিত জীবন-যাপন করতে পারে।
৭. সন্তানকে আদব, আমল ও সূচরিত্র বিষয়ক শিক্ষা দেয়া। দুধের শিশু অবস্থা থেকেই তার আদব ও চরিত্র শিক্ষা শুরু হয়ে যায়। তাই ইসলামী নীতিতে বলা হয়েছে দুগ্ধপোষ্য শিশুর জাগ্রত থাকা অবস্থায়ও তার সামনে মাতা-পিতা যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকবে, নতুবা ঐ সন্তানের মধ্যে নির্লজ্জতার স্বভাব জন্ম নিতে পারে। সন্তানের সাত বৎসর বয়স হলে তাকে নামাযের নির্দেশ প্রদান এবং দশ বৎসর হলে শাসনপূর্বক তার দ্বারা নামায পড়ানো- এগুলো সন্তানকে আমল শিক্ষা দেয়ার অংশ বিশেষ।
৮, সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ রক্ষা করা ও সন্তানদেরকে ধন-সম্পদ দান প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা ভাল। তবে কোন সন্তান তালিবে ইলম হলে সে যেহেতু দ্বীনের কাজে নিয়োজিত থাকার দরুণ জীবিকা উপার্জনে স্বাভাবিকভাবে পিছিয়ে থাকবে, তাই তাকে কিছু বেশী দান করে গেলে কোন অন্যায় হবে না। এমনি ভাবে কোন সন্তান রোগের কারণে বা স্বাস্থ্যগত কারণে উপার্জন করতে অপারগ হলেও তাকে কিছু বেশী দেয়া যায়।
৯.বিবাহের উপযুক্ত হলে বিবাহ দেয়া। তবে ছেলে সন্তানের বিবাহের খরচ বহন করা পিতা/মাতার দায়িত্ব নয়, কারণ সাবালগ হলে ছেলে সন্তানের উপার্জন নিজেকেই করতে হবে।
১০.কন্যা বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা হলে পুনঃবিবাহ পর্যন্ত তাকে নিজেদের কাছে রাখা এবং তার প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা পিতা-মাতার দায়িত্ব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions