ব-দ্বীপ (Delta) / বদ্বীপ কাকে বলে
বদ্বীপ কাকে বলে
নদীর নিম্ন গতিতে স্রোতের বেগ খুব কমে যায় এবং নদীর পানির সঙ্গে মিশ্রিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁদা প্রভৃতি তলানিরূপে সঞ্চিত হতে থাকে। নদীর মোহনায় সমুদ্রের লবণ মিশ্রিত পানি এ তলানি পড়তে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। নদী যদি কোনো কম স্রোত বিশিষ্ট বা স্রোতহীন সমুদ্রে পড়ে, তাহলে ঐ সমস্ত তলানি নদীর মুখে জমতে জমতে নদী মুখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং কালক্রমে ঐ চরাভূমি সমুদ্র পানির ওপর উঁচু হয়ে ওঠে। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় ঐ চরাভূমিকে বেষ্টন করে সমুদ্রে পতিত হয়। নদী মোহনাস্থিত ত্রিকোণাকার এ নতুন ভূমিকে ব-দ্বীপ বলে।
যখন নদী কোনো সাগরে, হ্রদে বা অন্য কোনো জলাশয়ে শেষ পর্যায়ে এসে মিলিত হয়, তখন নদী পরিবাহিত পলি ঐ অংশে মাত্রাহীন ‘A'-এর (ল্যাটিন A ডেল্টা) আকারে সঞ্চিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর আকার আকৃতি বিশেষভাবে নির্ভর করে নদীবাহিত পললের পরিমাণ, গঠন ও যেখানে পলি নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সেই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। মিহি পলি ও কর্দম মোহনা থেকে কিছুটা দূরে অনুভূমিক ভাবে সঞ্চিত হয়ে নিম্নল (Bottomset Beds) সৃষ্টি করে। নিম্নল সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই অগ্রবর্তী তল (Fore set beds) গঠিত হয়। অগ্রবর্তী তল মোটা পলি দ্বারা গঠিত। এ সমস্ত পলি অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় নদী সমুদ্র বা হ্রদে প্রবেশ করার পরপরই জমা হয়ে ঢালু স্তর তৈরী করে। এ অগ্রবর্তী তল সাধারণত বন্যাকালীন পলি আস্তরণে ঢেকে যায়। একে ঊর্ধ্বতল (Topset beds) বলে। ব-দ্বীপ যতোই সমুদ্রের দিকে বাড়তে থাকে নদীর ঢালও ক্রমাগত হ্রাস পায়। এ অবস্থায় নদী দ্রুত গতি ধারা বদল করে এর ভিত্তি তলের সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নেয়।
নদীর প্রধান ধারা অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত (Distributaries)। এ সমস্ত শাখা নদীর মাধ্যমে প্রবাহ সমুদ্রে পৌছে। শাখা নদীসমূহ দ্রুত স্থান বদল করে ধীরে ধীরে একটি আদর্শ ব-দ্বীপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের তরঙ্গের প্রকৃতি ও শক্তি, জোয়ার ভাটার বৈশিষ্ট্য এবং তটরেখার অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে ব-দ্বীপের আকৃতিতেও বেশ বৈচিত্র দেখা যায়।।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions