Home » » তাহারেই পড়ে মনে

তাহারেই পড়ে মনে

তাহারেই পড়ে মনে

কবি-পরিচিতি 

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল  বারী ও মাতা সাবেরা বেগম। কবির বয়স যখন মাত্র সাত বছর তখন তাঁর পিতা মারা যান। বারো বছর বয়সে সৈয়দ  নেহাল হোসেনের সঙ্গে কবির বিয়ে হয়। আধুনিকমনা ও সাহিত্যানুরাগী স্বামীর উৎসাহে কবির সাহিত্যসাধনা শুরু। ১৯৩২ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে কবির পুনরায় বিয়ে হয়। পরিবারের নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। বেগম রোকেয়ার চিন্তাধারা তার মনে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। দেশভাগের পূর্বে তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত ‘বেগম' পত্রিকার সম্পাদক হন। ভাষা-আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এতে অংশ নিতে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশু-সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ১৯৬১-তে তিনি ছায়ানটের সভাপতি ও ১৯৬৯-এ ‘মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি নারী জাগরণ, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সকল প্রগতিবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু কবি হিসেবেই নয়, ‘জননী’ অভিধায়ও ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্বাধীনতা দিবস পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। 

তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা :

কাব্যগ্রন্থ : সাঁঝের মায়া (১৯৩৮), মায়া কাজল (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪); 

গল্পগ্রন্থ : কেয়ার কাটা (১৯৩৭); 

ভ্রমণকাহিনি : সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮); 

স্মৃতিকথা : একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)।


ভূমিকা

‘তাহারেই পড়ে মনে' শীর্ষক কবিতাটি সুফিয়া কামালের বিখ্যাত কাব্য সাঁঝের মায়া থেকে সংকলিত হয়েছে। এই কবিতাটি প্রথম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি একটি সংলাপ নির্ভর রচনা।এই কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশিত হয়েছে। এখানে কবির ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। সহজ সরল ভাষায় কবি প্রকৃতি এবং তার হৃদয়ের বেদনাকে অপূর্ব শিল্প নৈপুণ্যে প্রকাশ করেছেন।


তাহারেই পড়ে মনে

-সুফিয়া কামাল


“হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়,

বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”

কহিল সে সিগ্ধ আঁখি তুলি

“দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? 

বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?

দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম, “কেন কবি আজ 

এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”

কহিল সে সুদূরে চাহিয়া

“অলখের পাথার বাহিয়া  

তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান? 

ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।”

কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি, 

বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।” 

কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে“

নাই হলো, না হোক এবারে

আমারে গাহিতে গান, বসন্তেরে আনিতে বরিয়া

রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।”


কহিলাম : “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই? 

যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”

কহিল সে পরম হেলায়

“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায় 

ফুল কি ফোটেনি শাখে? পুষ্পরতি লভেনি কি ঋতুর রাজন? 

মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?”

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?” 

কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”

কহিল সে কাছে সরে আসি

“কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী

গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে

রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”


নির্বাচিত শব্দের অর্থ ও টীকা

অগোচর দেখা যাবে না এমন, অপ্রত্যক্ষ। অনুৎসুক আগ্রহ নেই এমন। অলখ- অলক্ষ, দৃষ্টির অগোচরে। অর্ঘ্য- পূজার উপকরণ। অর্ঘ্য বিরচন- অঞ্জলি বা উপহার রচনা। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে। উত্তরী- চাদর, উত্তরীয়। উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা- কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কবি যথারীতি সানন্দে বসন্ত বন্দনা না করে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন কেন। এখনো দেখনি তুমি?- কবিভক্তের এ কথায় আমরা নিশ্চিত হই প্রকৃতিতে বসন্তের সব লক্ষণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। অথচ কবি তা লক্ষ করছেন না। কুহেলিকুয়াশা। কুহেলি উত্তরী হলে মাঘের সন্ন্যাসী- কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। বসন্ত আসার আগে সর্বত্যাগী সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মত মাঘের শীত যেন কুয়াশার চাদরে মিলিয়ে গেছে। কোথা তব বন পুষ্পসাজ বসন্ত এসেছে। অথচ কবি নতুন ফুলে ঘর সাজাননি। নিজেও ফুলের অলংকারে সাড়েননি। করিলে বৃথাই ব্যর্থ করলে। অর্থাৎ কবিভক্তের অনুযোগ-বসন্তকে কবি বরণ না করায় বসন্তের আবেদন গুরুত্ব হারিয়েছে। তব বন্দনায়- তোমার রচিত বন্দনা| গানের সাহায্যে। অর্থাৎ বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে কি তুমি বরণ করে নেবে না? তাহারেই পড়ে মনে প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষন্ন ছবি। কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন, মনে কোনো আবেদন জানাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা। | পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষন্নতা জাগে তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে। দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?- কবির জিজ্ঞাসা- বসন্তের দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে কি না। উদাসীন কবি যে তা লক্ষ করেননি তার এই জিজ্ঞাসা থেকে তা স্পষ্ট হয় । দিগ্বিদিক- সর্বদিক। নীরব কেন- উদাসীন হয়ে আছেন কেন? কেন কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছে না। পাথার সমুদ্র। পুষ্পরতি- ফুলের বন্দনা বা নিবেদন। পুষ্পরতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ ও বন্দনা করার জন্য গাছে গাছে ফুল ফোটেনি? অর্থাৎ বসন্তকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্যেই | যেন ফুল ফোটে। পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে শীত প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। গাছের পাতা যায় ঝরে। গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে পত্ৰপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে। ফাগুন যে এসেছে ধরায় পৃথিবীতে ফায়ূন অর্থাৎ বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। বরিয়া- বরণ করে। বসন্তেরে আনিতে... ফাগুন স্মরিয়া- কবি বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে বর্ণনা করলেও বসন্ত অপেক্ষা করেনি। ফায়ূন আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। বাতাবি নেবুর ফুল...অধীর আকুল- বসন্তের আগমনে বাতাবি লেবুর ফুল ও আমের মুকুলের গন্ধে দখিনা বাতাস দিগ্বিদিক সুগন্ধে ভরে তোলে। কিন্তু উন্মনা কবি এসব কিছুই লক্ষ করেননি। কবির জিজ্ঞাসা তাঁর উদাসীনতাকেই স্পষ্ট করে। মাধবী- বাসন্তী লতা বা তার ফুল। রিক্ত শূন্য, নিঃস্ব রচিয়া- রচনা করে। লহনাও ।লবে- নেবে। হে কবি- কবিভক্ত এখানে কবিকে সম্বোধন করেছেন। সমীর- বাতাস। স্মরিয়া- স্মরণ করে।


সারসংক্ষেপ: 

কবি সুফিয়া কামাল প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের রং বদলায়। প্রকৃতিতে বসন্ত এলে, প্রকৃতি অপরূপরূপে সজ্জিত হলে তার ঢেউ মানব মনেও এসে পড়ে। বসন্তে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য কবিমনে খুশির জোয়ার আনবে, কবিকে ভাবে-ছন্দে-সুরে ফুটিয়ে তুলবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কোনো কারণে কবির মনে বসন্তের আগমন কোনো প্রভাব ফেলেনি, বসন্ত কবির হৃদয়কে আন্দোলিত করতে পারছে না। তাঁর দৃষ্টি এখনো শীতের দিকে, শীতকে তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন। কবি সুফিয়া কামালের সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা ছিলেন স্বামী সৈয়দ নেহাল হােসেন, যার আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে। তিনি সর্বত্যাগী সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো বিদায় নিয়েছেন- যা শীতের সঙ্গে তুলনীয়। যার উৎসাহ-উদ্দীপনায় কবি বর্তমানের একজন সফল কবি- যা বসন্তের সঙ্গে তুলনীয়। শীত রিক্তহস্তে চলে যাবার কারণেই বসন্ত এসেছে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে। কিন্তু যে শীত তথা প্রথম স্বামীর কারণেই বসন্ত তথা বর্তমান সফলতার আগমন, সেই শীতকে তিনি কোনো ভাবেই ভুলতে পারছেন না। ফলে প্রকৃতিতে যে বসন্ত তা কবিকে স্পর্শ করছে। শীতরূপে। শীতের রিক্ততার হাহাকার যেন কবির জীবনে স্বজন হারানোর বেদনাকেই প্রতিধ্বনিত করে। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়াপাত ঘটেছে।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->