বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম : ২
অতৎসম শব্দ
২.১
ই, ঈ, উ, ঊ
সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কারচিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে। যেমন: আরবি, আসামি, ইংরেজি, ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি, খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি, চাচি, জমিদারি, জাপানি, জার্মানি, টুপি, তরকারি, দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি, দিদি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিসি, ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, ফিরিঙ্গি, বর্ণালি, বাঁশি, বাঙালি, বাড়ি, বিবি, বুড়ি, বেআইনি, বেশি, বোমাবাজি,
ভারি (অত্যন্ত অর্থে), মামি, মালি, মাসি, মাস্টারি, রানি, রুপালি, রেশমি, শাড়ি, সরকারি, সিন্ধি, সোনালি, হাতি, হিজরি, হিন্দি, হেঁয়ালি।
চুন, পুজো, পুব, মুলা, মুলো।
পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন: ছেলেটি, বইটি, লোকটি।
সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ ও যোজক পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন: এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বল? কী করছ? কী করে যাবে? কী খেলে? কী জানি? কী দুরাশা! তোমার কী! কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিল! কী পড়ো? কী যে করি! কী বাংলা কী ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী।
কীভাবে, কীরকম, কীরূপে প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে।
যেসব প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যা বা না হবে, সেইসব বাক্যে ব্যবহৃত ‘কি' হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন: তুমি কি যাবে? সে কি এসেছিল?
২.২
এ, অ্যা
বাংলা এ বর্ণ বা কোর দিয়ে এ এবং অ্যা এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়। যেমন: কেন, কেনো (ক্রয় করো); খেলা, খেলি, গেল, গেলে, গেছে; দেখা, দেখি; জেনো, যেন।
তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলির -কার যুক্ত রূপ বহুল পরিচিত। যেমন: ব্যাঙ, ল্যাঠা। এসব শব্দে অপরিবর্তিত থাকবে।
বিদেশি শব্দে ক্ষেত্ৰ-অনুযায়ী অ্যা বা -কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড (and), অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাংক, ভ্যাট, ম্যানেজার, হ্যাট।
২.৩
ও
বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। শব্দশেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন:
কালো, খাটো, ছোটো, ভালো;
এগারো, বারো, তেরো, পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো;
করানো, খাওয়ানো, চড়ানো, চরানো, চালানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, বসানো, শেখানো, শোনানো, হাসানো;
কুড়ানো, নিকানো, বাঁকানো, বাঁধানো, ঘোরালো, জোরালো, ধারালো, পঁাচানো;
করো, চড়ো, জেনো, ধরো, পড়ো, বলো, বসো, শেখো;
করাতো, কেনো, দেবো, হতো, হবো, হলো;
কোনো, মতো।
ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের আদিতেও ও-কার লেখা যেতে পারে। যেমন: কোরো, বোলো, বোসো।
২.৪
ং, ঙ
শব্দের শেষে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে। যেমন:
গাং, ঢং, পালং, রং, রাং, সং।
তবে অনুস্বারের সঙ্গে স্বর যুক্ত হলে ঙ হবে। যেমন:
বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের।।
বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দে অনুস্বার থাকবে।
২.৫
ক্ষ, খ
অতৎসম শব্দ খিদে, খুদ, খুদে, খুর (গবাদি পশুর পায়ের শেষ প্রান্ত), খেত, খ্যাপা ইত্যাদি লেথা হবে।
২.৬
জ, য
বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি-অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন: কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জেব্রা, বাজার, হাজার।
ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে বিকল্পে ‘য' লেখা যেতে পারে। যেমন: আযান, ওযু, কাযা, নামায, মুয়াযিন, যোহর, রমযান, হযরত ।
২.৭
মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
অতৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না। যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, রানি, সোনা, হর্ন।
তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্যবর্ণ ণ হয়, যেমন: কণ্টক, প্রচণ্ড, লুণ্ঠন।
কিন্তু অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগে কেবল ন হবে। যেমন: গুন্ডা, ঝান্ডা, ঠান্ডা, ডান্ডা, লণ্ঠন।
২.৮
শ, ষ, স
শ, ষ, স বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে 'ষ' ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন: কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশত, শখ, শয়তান, শরবত, শরম, শহর শামিয়ানা, শার্ট, শৌখিন;
আপস, জিনিস, মসলা, সন, সাদা, সাল (বৎসর), স্মার্ট, হিসাব; স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্ট্রিট, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর। ইসলাম, তসলিম, মুসলমান, মুসলিম, সালাত, সালাম;
এশা, শাওয়াল (হিজরি মাস), শাবান (হিজরি মাস)। ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি s ধ্বনির জন্য স এবং -sh, -sion, -ssion, -tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন: পাসপোর্ট, বাস;
ক্যাশ;
টেলিভিশন;
মিশন, সেশন;
রেশন, স্টেশন।
যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান পরিবর্তিত হয়ে স ছ-এর রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ-এর ব্যবহার থাকবে। যেমন: তছনছ, পছন্দ, মিছরি, মিছিল।
২.৯
বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ
বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণবিশ্লেষ সম্ভব নয়।
এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং। |
তবে অন্য ক্ষেত্রে বিশ্লেষ করা যায়। যেমন: মার্কস, শেকসপিয়র, ইসরাফিল।
২.১০
হস-চিহ্ন হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন: কলকল, করলেন, কাত, চট, চেক, জজ, ঝরঝর, টক, টন, টাক, ডিশ, তছনছ, ফটফট, বললেন, শখ, হুক।
তবে যদি অর্থবিভ্রান্তি বা ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: উহ্, বাহ্, যাহ্।
২.১১
ঊর্ধ্ব-কমা
ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন: বলে (বলিয়া), হয়ে, দুজন, চাল (চাউল), আল (আইল)।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions