মোগল আমলের সামাজিক অবস্থা
সামাজিক অবস্থা: মোগল যুগে ভারতীয় সমাজ ছিল সামন্ততান্ত্রিক। সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। উচ্চবিত্ত অভিজাত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বা সাধারণ শ্রেণি। সম্রাট ছিলেন সমাজের প্রধান। সাম্রাজ্যের উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ ছিলেন অভিজাত শ্রেণিভুক্ত। সম্রাটের দরবারের আমীর, উমরাহ ও মন্ত্রীগণসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ছিলেন অভিজাত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণির জীবনযাত্রা ছিল বিলাসবহুল। অভিজাত শ্রেণি সম্রাটের অনুগ্রহপুষ্ট ছিলেন। তারা সম্রাটের নিকট থেকে জায়গীর লাভ করতেন। ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল ভারতে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে। এর প্রভাবে সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই শ্রেণীর মধ্যে ছিল ব্যবসায়ী, কারিগর, শিল্পী, দোকানদার, চিকিৎসকে লেখক প্রমূখ পেশাজীবী শ্ৰেণী। তারা অভিজাতদের ন্যায় জামজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতেন না। তারা অভিজাত শ্রেণি বা ব্যবসায়ীদের স্তরে সমকক্ষ সামাজিক মর্যাদায় ছিল না। সমাজ জীবনের নিম্নস্তরে ছিল কৃষক ও মজুর শ্রেণি। এরা সংখ্যায় অধিক হলেও সামাজিক কোনো প্রতিপত্তি ছিল না। কায়িক শ্রমই ছিল তাদের জীবিকার অন্যতম অবলম্বন অর্থ কষ্টে তাদের দিন অতিবাহিত হতো। মোগল সম্রাটরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও এ সময়ে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে সমান মর্যাদায় দেখা হতো। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুরাও এ সময় ভারতবর্ষে অন্যতম ধর্ম। কিন্তু মোগলদের উদার নীতির ফলে মোগলযুগে ভারতীয় সমাজে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজমান ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারে হিন্দুদের স্বাধীনতা ছিল। হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথা প্রবল ছিল। তদানিন্তন হিন্দু সমাজে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি কুসংস্কারও প্রচলিত ছিল। মোগল আমলে সাধারণ নারীদের অবস্থা উন্নত ছিল না। সমাজে নারীদের অগ্রগতির পথে অনেক বাধা ছিল। অভিজাত শ্রেণি হারেম রাখত এবং হারেমে বহু দাসী ও পরিচারিকা নিয়োগ করা হতো। এ আমলে নারী পুরুষ উভয়ই স্বর্ণ ব্যবহার করত। চিত্তবিনোদনের জন্য সঙ্গীত, দাবা, পাশা খেলা, পোলো, রথ দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি ব্যবস্থা ছিল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions