Home » » ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে গড়ে ওঠা সভ্যতা- ব্যাবিলনীয় সভ্যতার জনক ছিলো সেমিটিক জাতি। এ ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তোলে এ্যামোরাইট নামক সেমিটিক জাতি। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে সেমিটিক জাতির অবদান সর্বাধিক। প্রকৃত পক্ষে সুমেরীয় রাজা ডুঙির মৃত্যুর পর পরই সুমেরীয় সভ্যতার পতন ঘটে।  সুমেরীয় সভ্যতার ধ্বংসস্তুপের ওপর গড়ে ওঠে ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য বা সভ্যতা। অ্যামোরাইটরা আরব মরুভূমির উত্তরাঞ্চল থেকে মেসোপটেমিয়ায় এসে ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনে সভ্যতা গড়ে তোলে। এই সভ্যতাকে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা বলা হয়। 


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য 

মূলতঃ ব্যাবিলনীয় সভ্যতা চরম খ্যাতি অর্জন করে বিখ্যাত সম্রাট হাম্মুরাবীর শাসনামলে। ব্যাবিলনে বসতিস্থাপনকারী মোরাইটদের নিজস্ব সভ্যতা সংস্কৃতি তেমন উন্নত ছিল না। ব্যাবিলনে রাজ্য স্থাপন করে তারা পূর্বের সুমেরীয় সভ্যতার সবকিছুই গ্রহণ করে। হাম্মুরাবীর ‘আইন সংহিতা' ছিল জগত বিখ্যাত। পরবর্তীতে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভূত উন্নতি সাধন করে।


ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় রাজা হাম্মুরাবী ও ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য 

 রাজা হাম্মুরাবী (১৭৯২-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ছিলেন এ্যামোরাইট জাতির বিখ্যাত নেতা। তাঁর আমলে ব্যাবিলন নতুন সভ্যতায় উদ্ভাসিত হয়। তিনি যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে এক বিশাল শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলেন এবং ইউফ্রেটিস উপত্যকায় ব্যাবিলনে কেন্দ্রীয় রাজ্য স্থাপন করেন ।


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার নব্য ব্যাবীলনীয় সাম্রাজ্য

হাম্বুরাবীর মৃত্যুর পর ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের স্থায়ীত্ব হয়নি বেশী দিন। এ সময় সুমেরীয় অঞ্চল আবার অনেকগুলো ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নিষ্ঠুর সামরিক নীতি প্রয়োগ করে মেসোপটেমিয়ায় বিশাল এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে তারা। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতকে এ অঞ্চলে উত্থান ঘটে অ্যাসিরিয়ানদের। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে অ্যাসিরিয়ানদের পরাজিত করে সামন্তরাজা নেবুচাদনেজার ব্যাবিলনকে কেন্দ্র করে নতুন একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাম্রাজ্য ‘নব্য ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। এই সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন নেবুচাদনেজার। জেরুজালেম বিজয়ী এ রাজা রাণীর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নগর দেয়ালের উপরে এক মনোরম উদ্যান নির্মাণ করেন। এ উদ্যানই বিশ্বখ্যাত ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ‘ঝুলন্ত উদ্যান’ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম হিসেবে পরিচিত- ‘ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান'। 


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার হাম্মুরাবী আইন

হাম্বুরাবীর কানুন অনুসারে খাজনা দিতে হতো ফসলের এক তৃতীয়াংশ; ফলের বাগান হলে দিতে হতো দুই-তৃতীয়াংশ। খাজনা দিতে দেরী হলে এবং সুদ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে তাকে দাস বানানো হতো। ১৯০১-০২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সুসা নামক স্থানে ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদ এম.ডি. মরগান একটি বিশাল শিলাখণ্ডে প্রাচীন ব্যাবীলনীয়দের একটি লিপি আবিষ্কার করেন। রাজা হাম্মুরাবী স্বীয় সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার্থে প্রচলিত স্থানীয় নীতি ও আইন কানুন সংস্কার করে একটি সর্বজনস্বীকৃত বিধিবদ্ধ আইন তৈরী করেন। ইতিহাসে তা হাম্মুরাবীর ‘আইন সংহিতা' (Code of Hammurabi)  বলে খ্যাত। তবে হাম্মুরাবীর প্রণীত আইন সুমেরীয় রাজা ডুঙির আইন দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবান্বিত। প্রস্তর স্তম্ভে বিধানমালা খোদিত করে রাজা হাম্মুরাবী বিভিন্ন মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিস যাদুঘরে (স্যুভর যাদুঘর) সংরক্ষিত এই স্তম্ভে সর্বমোট ২৮২টি বিধি উত্তীর্ণ রয়েছে। রাজনৈতিক অপরাধ, পারিবারিক, বিবাহ, ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়মাবলী, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি-এই আইনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। হাম্মুরাবীর প্রণীত আইন পরবর্তীকালে রোমান আইন (Roman Law) এবং পাশ্চাতের আইন-কানুনকে প্রভাবান্বিত করে।


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ধর্ম বিশ্বাস 

ব্যাবিলনীয়রাও অন্যান্য সভ্যতার মতো দেবদেবীর পূজা-অর্চনায় বিশ্বাসী ছিল। মারডক (Marduk) নামক সূর্যদেবতার পূজা ব্যাবিলনীয় সমাজে খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাছাড়া তারা প্রণয়ের দেবী ইসতার, বায়ুর দেবতা মারুসহ অসংখ্য নগর দেবতা ও ছোটখাট দেবদেবীর পুজা করত। অশরীরী প্রেতাত্মার শক্তিতেও তারা বিশ্বাসী ছিল।


ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চা

প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা আলাদা কৃতিত্বের দাবীদার ছিল শিক্ষার বিস্তার ও শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে। তাদের নিজস্ব ভাষা ছিল এবং তাদের ভাষার ৩৫০টি ধ্বনি চিহ্ন ছিল। শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের জন্য ব্যাবিলনীয় সমাজে এক ধরণের শিক্ষালয় চালু ছিল। সেখানে নরম ও ভিজা কাদার মধ্যে কাঠি দিয়ে লেখার লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়। একে কিউনিফর্ম বা কীলকাকার লিখন পদ্ধতি বলা হয়। লিখন পদ্ধতি শিক্ষা দেয়াই ছিল এই শিক্ষালয়ের মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীকে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হতো। বিদ্যালয়ের দেওয়ালে লিখা হতো “লিখন পদ্ধতিতে যে উৎকর্ষতা অর্জন করবে, সে সূর্যের ন্যায় কিরণ দেবে।” সুমেরীয় সভ্যতার ন্যায় ব্যাবিলনীয় সমাজেও সাহিত্য চর্চা ছিল। সুমেরীয়দের ‘গিলগামেশ’ উপাখ্যানের উৎস থেকে ব্যাবিলনীয় কবি সাহিত্যিকগণ অনবদ্য সাহিত্য রচনা করেন। 


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা

ব্যাবিলনীয় বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র ও গণিতে যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। সে সময় ব্যবিলনে ৫৫০ রকমের ওষুধের প্রচলন ছিল। ব্যাবিলনীয় বিজ্ঞানীরা জ্যোতিষ শাস্ত্রে সর্বাধিক অবদান রাখেন। তারা তারকা মন্ডল, সূর্য ও রাশিচক্র সম্বন্ধে যথেষ্ট উৎসাহী ছিল এবং এ সম্বন্ধে যুক্তি সংগত ধারণাও লাভ করেছিল। গণিত শাস্ত্রে ব্যাবিলনীয়রা বুৎপত্তি অর্জন করে। দশমিকের প্রচলন, বীজগণিতে সরল সমীকরণ, পরিধি, ব্যাসের অনুপাতের মানস্থিত ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। জ্যোতিষীগণ একধরণের জলঘড়ি ও সূর্যঘড়ির আবিষ্কার ও ব্যবহার আয় করেছিল। এছাড়া বর্ষপঞ্জিকাকে বছর, মাস ও দিনে বিভক্ত করে ব্যবহার করার কৌশলও তারা আবিষ্কার করে।


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ভাস্কর্য 

ব্যাবিলনীয়রা ভাষ্কর্য শিল্পের উন্নতি লাভ করেছিল এবং বিভিন্ন পাথরের স্তম্ভে ব্যাবিলনীয় ভাস্কর্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দে চুনাপাথরের স্তম্ভে শশ্রুমন্ডিত এবং নকশাকৃত পোশাকে হাম্মুরাবীকে খোদিত করা হয়েছে। এ ছাড়া হাম্মুরাবীর ২৮২টি আইন নিখুঁত ও বিন্যাস্তকৃত পাথরে খোদাই করা হয়েছে। এভাবে ভাষ্কর্য শিল্পে ব্যাবিলনীয়রা অনবদ্য অবদান রেখে গেছে।


শেষে বলা যায়, মেসোপটেমিয়ায় আগত মোরাইট জাতি ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তোলে। এই এ্যমোরাইট জাতির বিখ্যাত সম্রাট হাম্মুরাবী পৃথিবীর প্রথম আইন প্রণেতা বলে বিবেচিত। তারকা মণ্ডল, সূর্য ও রাশিচক্র সম্বন্ধে যথেষ্ট উৎসাহী ছিল এবং এ সম্বন্ধে যুক্তি সংগত ধারণাও লাভ করেছিল। জ্যোতিষীগণ এক ধরণের জলঘড়ি ও সূর্যঘড়ির আবিষ্কার ও ব্যবহার আয়ত্ত করেছিল। এছাড়া বর্ষপঞ্জিকাকে বছর, মাস ও দিনে বিভক্ত করে ব্যবহার করার কৌশলও তারা আবিষ্কার করেন। পরবর্তী গ্রিক, রোমান ও পারসিক সভ্যতা ব্যাবিলনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিচার ব্যবস্থার নিকট বিশেষভাবে ঋণী।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *