Home » » পারস্য সভ্যতা

পারস্য সভ্যতা

পারস্য সভ্যতা

রাজা ক্যামবিসাস আততায়ীর হাতে নিহত হলে দারিয়ুস নামক এক সামন্ত অভিজাত খ্রিস্টপূর্ব ৫২২ অব্দে পারস্যের সম্রাট নিযুক্ত হন। তাঁর শাসনামলে পারস্য গ্রীক ও রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। রাজা দারিয়ুসের মৃত্যুর পর তার পুত্র জারেক্সস পারস্য শাসন করেন। পারস্য সাম্রাজ্যের শেষ দিকে দুর্বল শাসনের কারণে রাজশক্তির ক্ষয় হয়। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার পারস্য আক্রমণ করে দখল করে নেন। ৩৩০ থেকে ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পারস্য যা বর্তমানে ইরান; গ্রিক শাসনাধীনেই ছিল।


পারস্য সভ্যতায় সাসানীয় বংশ 

প্রায় এক শতাব্দীকাল গ্রিক শাসনের পর পার্থিয়ানগণ পারস্য শাসন করেন। অতঃপর ২২৬ খ্রিস্টাব্দে আর্দাশির নামক এক নেতার নেতৃত্বে পারস্যে সাসানীয় বংশের রাজত্ব শুরু হয়। ইতিহাসে তা সাসানীয় সাম্রাজ্য বলে পরিচিত। এই সময় পারস্যে জরথুস্ত্র ধর্ম প্রবর্তিত হয়। আর্দাশির এর পুত্র ও উত্তরাধিকারী প্রথম শাহপুরের (২৪০-৩০৯ অব্দ) রাজত্বকালে পারস্য সাম্রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় এবং শিল্পকর্মে নবজাগরণ পরিলক্ষিত হয়। দ্বিতীয় শাহপুর (৩০৯-৩৭৯ অব্দ) পারস্যের সিংহাসনে আরোহন করে বীর বিক্রমে রোমানদের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সাসানীয় রাজা পারভেজ খসরুর সময়ে আরবের মক্কায় হযরত মুহম্মদ (সা:) ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা:) এর শাসনামলে আরব মুসলমানদের নিকট পরাজিত হবার পর পারস্যে সাসানীয় রাজবংশের পতন ঘটে এবং ইসলামী সভ্যতার সূত্রপাত হয়।


পারস্য সভ্যতার লিখন পদ্ধতি 

আরামীয় ও প্রাচীন পারসিয় এই দুই ধরনের ভাষা পারস্যে প্রচলিত ছিল। রোমান হরফে যেমন ইংরেজী লেখা হয় তেমনি আরামীয় হরফে প্রাচীনকালে পারসি লেখা হতো। পারসিকরা তাদের লিখন পদ্ধতি হিসেবে শুরু থেকে কিউনিফর্ম লিপির ব্যবহার করতো। পারসিকরা ৩৯টি বর্ণমালা বিশিষ্ট এক লিখন পদ্ধতির প্রবর্তন করে। পারস্যসহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পারসিকরা মুদ্রার ব্যাপক প্রচলনও ঘটায়।


পারস্য সভ্যতার স্থাপত্য শিল্প 

পারসিকদের স্থাপত্য শিল্পে প্রভূত অবদান পাওয়া যায় প্রাসাদ শিল্পে। স্থাপত্যশিল্পে পারসিকরা ব্যাবিলনীয় ও অ্যাসিরীয় রীতির মিশ্রণ ঘটায়। কিন্তু তাদের স্থাপত্যে মেসোপটেমীয়দের মতো খিলান পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। তাঁরা খিলানের পরিবর্তে মিসরীয় স্থাপত্যরীতি অনুসারে স্তম্ভ ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে মিসরীয় প্রভাব প্রতিফলিত হয়। অন্যান্য সভ্যতার স্থাপত্যে যেখানে ধর্মীয় মন্দির নির্মাণ অধিক গুরুত্ব পেয়েছে- সেখানে পারসিকরা প্রাসাদ নির্মাণে এগিয়ে ছিল।  বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে আজও দারিয়ুদের প্রাসাদ (সুসা প্রাসাদ), সাইরাসের সমাধি, পাসারগাডের রাজপ্রাসাদ পারস্য স্থাপত্য শিল্পের অনন্য সাক্ষ্য বহন করছে।  


পারস্য সভ্যতায় ধর্ম  / পারসিক ধর্ম

জরথুস্ত্র ধর্মের আবির্ভাব খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে। সম্রাট আর্দাশিরের আমলে এই ধর্ম রাজকীয় মর্যাদা লাভ করে। জরথুস্ত্র ধর্মের উপাস্য দেবতার নাম ছিল ‘আহুরামাযদা'। তিনি মঙ্গলের দেবতা এবং তার প্রতীক অগ্নি। এই কারণে পারসিকদের  অগ্নি উপাসক বলা হয়। তাদের ধর্মমতে, ‘আত্ৰিমান’ হলেন অমঙ্গলের দেবতা। অগ্নি উপাসক পারসিকরা পরকালে বিশ্বাসী ছিলেন। জরথুস্ত্রের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা ধর্মগুরুর বাণী লিপিবদ্ধ করে রাখে। এই ধর্মগ্রন্থের নাম ‘যেন্দাবেস্তা'। যেন্দাবেস্তার মূল বিষয় ইহকাল, পরকাল, স্বর্গ-নরক, ভাল মন্দ। তবে এই ধর্ম বর্তমানে পারস্যে আর প্রচলিত নয়। জরথুস্ত্রবাদ দীর্ঘদিন তার মূল অবস্থায় টিকে থাকতে পারেনি। ধীরে ধীরে এ মতবাদের মধ্যে কুসংস্কার ও স্বার্থপরতা প্রবেশ করে। ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর অল্প কিছু দেশের খুব কম সংখ্যক লোক এখন এ ধর্মের অনুসারী। সমকালীন বিশ্বের  ধর্মাচারণে জরথুস্ত্রবাদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেছিল। এই ধর্মের বৈশিষ্ট্য ছিল চারটি- ক. দ্বৈতবাদ, খ. চূড়ান্ত বিষয়ের উপর বিশ্বাস, গ. একটি নৈতিক ধর্ম, ঘ, একটি ঐশী ধর্ম।


পারস্য সভ্যতার পতন

প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার পর্যালোচনায় পারসিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তারা এসেরীয়দের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে উন্নততর রূপ দিয়ে প্রায় ২০০ বৎসর স্থায়ী একটি সমৃদ্ধিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের পূর্বে আর কোন রাষ্ট্র কাঠামো পারসিকদের মত দক্ষ সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। পারসিকদের ধর্মে মৌলিকত্বের ছাপ ছিল। একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যেও প্রতিষ্ঠাতা পারসিকগণ অধিকৃত অঞ্চল সমূহের সাংস্কৃতির সমন্বয় করে  বিশ্বসভ্যতায় এক অনন্য ভূমিকা রাখে।

শেষে বলা যায় যে, পারসিকরা সমগ্র মেসোপটেমিয়া অঞ্চলসহ ক্যালডীয় সাম্রাজ্য অধিকার করে সভ্যতার সূচনা করে। পরবর্তীতে ইউরোপ  এবং ভারতবর্ষ পর্যন্ত পারস্য সভ্যতার প্রভাব বিস্তার ঘটে। ফলে পারসিকরা যেমন অন্য দেশ ও সভ্যতা থেকে শিক্ষা। সংস্কৃতি গ্রহণ করে, তেমনি পারস্যের অনেক কিছুই অন্যান্য দেশের শিক্ষা সংস্কৃতিতে বিস্তার ঘটে। পরবর্তী সভ্যতা ও ধর্মতত্ত্বের ওপর পারস্য প্রভাব অত্যধিক ছিল।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *