ব্রিটিশ শাসনামলে সামাজিক সংস্কার ও স্বাধিকার আন্দোলন
আঠার শতকের শেষ পর্ব থেকে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ দিয়ে এর সূচনা। উনিশ শতকে শুরু হয় বাংলায় সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নানা সংস্কার। হিন্দু সমাজে সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি মুসলমান সমাজেও কিছুটা বিলম্বে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। খ্রিস্টান মিশনারি স্যার উইলিয়াম কেরীর শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার বাংলার শিক্ষিত সমাজে আলোড়ন তৈরি করে। এর ধারাবাহিকতায় রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো সমাজ সংস্কারকগণ হিন্দু সমাজকে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে নেন। কয়েক দশক পরে বাংলায় মুসলমান সম্প্রদায়কে শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার জন্য সংস্কার তৎপরতা চালান নওয়াব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলী, হাজি মোহাম্মদ মহসীন প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও মুসলমান সমাজে ধর্ম-সংস্কার আন্দোলনও পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল সকল প্রকার সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অনৈসলামিক ভাবধারা বিসর্জন দিয়ে ইসলামের বিশুদ্ধ জীবন ধারায় ফিরে যাওয়া। এই লক্ষ্যে পূর্ব বাংলায় হাজী শরীয়ত উল্লাহ ও দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের নেতৃত্বে পশ্চিম বাংলায় তরীকা-ই-মোহাম্মদীয়া আন্দোলন পরিচালিত হয়। এই দু'টি আন্দোলন মূলত ধর্ম ও সামাজিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও কৃষক প্রজাদের মধ্যে আন্দোলনের জনপ্রিয়তার কারণে শ্রেণি স্বার্থের দ্বন্দ্বে জমিদার ও নীলকরদের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি হয়। ইংরেজ সরকার জমিদার নীলকরদের পক্ষ অবলম্বন করায় পরিণতিতে এই সংস্কারমুখী প্রচেষ্টা ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
বাংলার ফকির ও সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল একটি বৃটিশ বিরোধী সংগ্রাম। ইংরেজ সরকার ফকির ও সন্ন্যাসীদের চিরাচরিত জীবন ধারায় বাধা সৃষ্টি করলে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং প্রতিরোধ সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। মজনু শাহের নেতৃত্বে ফকিররা সুদীর্ঘ সময় ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মজনু শাহের মৃত্যুর পর উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে তাদের সংগ্রামের অবসান ঘটে। সন্ন্যাসী আন্দোলনে প্রধান নেতা ছিলেন ভবানী পাঠক। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে। ভবানী পাঠকের মৃত্যু হলে এই আন্দোলনেরও অবসান ঘটে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions