লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক সমাজ সংস্কার
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক এর সমাজ সংস্কার: সামাজিক সংস্কার সমাজ সংস্কারের জন্য বেন্টিঙ্কের নাম এ উপমহাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। সতীদাহ নিবারণ ও ঠগী দমন হলো বেন্টিঙ্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তিনি সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন করেন। বহু প্রাচীনকাল থেকে এদেশের হিন্দু সমাজে সহমরণ’ (মৃত স্বামীর সাথে স্বেচ্ছায় একই চিতায় স্ত্রীর মৃত্যুবরণ করা) এবং ‘অনুমরণ’ (বিদেশে স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবাকে একাকী চিতায় পুড়িয়ে মারা) প্রথার প্রচলন ছিল। এভাবে স্ত্রীগণ সতী হতেন। অনেক সময় সামাজিকতা রক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজন বিধবাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোরপূর্বক চিতায় পুড়িয়ে মারতো। লর্ড কর্ণওয়ালিস ও তাঁর পরের অনেক গভর্নর জেনারেলই এ অমানবিক প্রথাকে উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এদেশীয় ভাবাদর্শে আঘাত লাগতে পারে বলে তাঁরা ততটা জোর দেন নি। লর্ড বেন্টিঙ্ক কয়েকজন এদেশীয় উদারপন্থী সংস্কারক বিশেষ করে রাজা রামমোহন রায় ও প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমর্থন ও সহায়তা লাভ করেন। সদর নিজামত আদালতের জজদের সমর্থন নিয়ে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে এক আদেশ বলে এই অমানবিক প্রথা রহিত করেন। এছাড়া তৎকালীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী দেবতাকে খুশি করার জন্য নিজের প্রথম সন্তানকে গঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ ও বিবাহ দেয়ার অক্ষমতাহেতু নিজ শিশু কন্যাকে গলাটিপে হত্যা করার নিয়মও বেন্টিঙ্ক চিরতরে বন্ধ করে দেন।
ঠগীদের কথা বহু আগে থেকে জানা যায়। ঠগীরা ছদ্মবেশে হঠাৎ করে এসে নিরীহ পথিকদের, তীর্থযাত্রীদের ও ভ্রমণকারীদের গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তাদের সবকিছু লুঠ করে নিয়ে যেতো। এটা ছিল ঠগীদের পেশা। কথিত আছে যে মোগল সম্রাট আকবর এটোয়া জেলাতে প্রায় পাঁচশো ঠগীকে হত্যা করেন। বিদেশি ভ্রমণকারীদের কাছ থেকেও জানা যায় যে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়েও ঠগীদের বেশ উৎপাত ছিল। সম্ভবত ইংরেজ আমলে এদের দৌড়াত্ম। বেড়ে গিয়েছিল। ঠগীরা ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ ডাকাতদল। এ দলে হিন্দু-মুসলিম উভয় গোত্রের লোক ছিল। এরা পুরোহিত, দরবেশ ইত্যাদি ছদ্মবেশে ডাকাতি করতো। হায়দ্রাবাদ থেকে অযোধ্যা, রাজপুতানা ও বুন্দেলখন্ডে ঠগীদের আস্তানা ছিল। তারা সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতো। তাই জনগণের নিরাপত্তার জন্য লর্ড বেন্টিঙ্ক কর্ণেল পীমানের উপর ঠগী দমনের ভার দেন। কর্নেল পীমান ঠগীদের ভাষা আয়ত্ব করে এবং ফেরিঘিয়া নামে একজন ঠগীর কাছে থেকে ঠগীদের কৌশল ও গোপন আস্তানাগুলোর খবর জেনে নিয়ে প্রায় পনেরশ ঠগীকে ধরে ফেলেন এবং তাদের কঠোর শাস্তি দেন (১৮৩০ খ্রি:)।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions