মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য
মৌলিক অধিকার হল নাগরিকের ব্যক্তিত্ব ও জীবন বিকাশের জন্য এমন কতগুলো সুযোগ-সুবিধা যা সংবিধানে উল্লেখ থাকে এবং সরকার কর্তৃক অলনীয়। পক্ষান্তরে, মানবাধিকার হল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তির অধিকার। আপাতদৃষ্টিতে মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার একই মনে হলেও এদের মধ্যে কতগুলো বিষয়ে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়:
১। মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের উৎস: মৌলিক অধিকারের উৎস সংবিধান বা শাসনতন্ত্র । সাধারণত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত থাকে। অন্যদিকে সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকার ঘোষিত ও স্বীকৃত।
২। পরিধি সংক্রান্ত : মৌলিক অধিকারের চেয়ে মানবাধিকারের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। মৌলিক অধিকারের সীমানা রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে আবদ্ধ; কিন্তু মানবাধিকার বৈশ্বিক ।
৩। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অধিকার: মৌলিক অধিকার খর্ব হলে নাগরিকগণ আদালতের আশ্রয় লাভ করতে পারেন। অন্যদিকে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক অধিকার। মানবাধিকার রক্ষার্থে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করে থাকে।
৪। বিকাশ সংক্রান্ত: রাষ্ট্রীয় চেতনাবোধ থেকে মৌলিক অধিকার বিকাশলাভ করে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নাগরিকের পূর্ণাঙ্গভাবে বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও নৈতিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখ করে। অন্যদিকে, কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্য নিরপেক্ষভাবে একজন ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকারের চেতনাবোধ থেকে মানবাধিকারের বিকাশ হয়েছে। বস্তুত: একজন মানুষ হিসেবে ব্যক্তির যে অধিকার ভোগ করা প্রয়োজন তাই মানবাধিকার হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
৫। বাস্তবায়ন সংক্রান্ত : মৌলিক অধিকার চাইলে সহজে কার্যকর করা যায়। মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন বিষয়টি রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকার চাইলে সহজে মৌলিক অধিকার বলবৎ করা সম্ভব। অন্যদিকে, মানবাধিকার বাস্তবায়ন (যেমন, অন্য দেশে আশ্রয়লাভ) সবসময় কেবল একটি দেশের উপর নির্ভর করে না।
৬। মৌলিক অধিকার মানবাধিকারের অংশ: সকল মৌলিক অধিকার শেষ বিচারে মানবাধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু সকল মানবাধিকার মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions