ইবনে খালদুন
ইবনে খালদুন ১৩৩২ অব্দে উত্তর আফ্রিকার তিউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বংশানুক্রমে দক্ষিণ আরবের প্রসিদ্ধ কিন্দা গোত্রের অধিবাসী। খালদুনের পিতা একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রাথমিক জীবনে কোরআন, কোরআন সম্পর্কিত বিজ্ঞান, হাদিস ও ধর্মীয় নিয়ম-কানুন অধ্যয়ন করেন। বাল্যকাল হতে তাঁর শাণিত বুদ্ধি ও দার্শনিক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি তাঁর চিন্তা জগতের বিকাশ ঘটান ইতিহাস, দর্শন, গণিত অধিবিদ্যা, সমাজবিদ্যা প্রভৃতির মাধ্যমে। ১৪০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইবনে খালদুন রচনাসমগ্র ‘কিতাব-আল-ইব’ গ্রন্থটিকে পৃথিবীর ইতিহাস বলা হয়। কিতাব-আল-ইব’ তিনটি পুস্তকে মোট সাত খন্ডে বিভক্ত। প্রথম পুস্তকের নাম ‘মুকাদ্দিমা’ বা ‘আল-মুকাদ্দিমা' যাকে ইতিহাসের ভূমিকা বলা হয়। দ্বিতীয় পুস্তকে সাংস্কৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেন যা ‘আল-উমরান বলে পরিচিত। তৃতীয় পুস্তকে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ব থেকে তার সমসাময়িক সময় পর্যন্ত আরবের ইতিহাস বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।
আল-মুকাদ্দিমার গুরুত্ব
ইবনে খালদুন তার মূল্যবান অমর গ্রন্থ ‘আল-মুকাদ্দিমার’য় ইতিহাসের দর্শন, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, রাষ্ট্রের প্রকারভেদ, রাষ্ট্রের উত্থান-পতন, আসারিয়া বা গোষ্ঠী সংহতি বিষয়ে আলোচনা করেন। ইতিহাসের দর্শন আলোচনায় সঠিক ইতিহাস রচনার গুরুত্ব আলোচনা করেন। এ সময়ে ইতিহাসের ভ্রান্তিসমূহ কিভাবে সঠিক ইতিহাসের অন্তরায়ের রূপ পরিগ্রহ করে তা স্পষ্ট করেন। খালদুন সরকার ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে তিন ধরনের রাষ্ট্রের কথা বলেছেন। তা হলো প্রথমত: সিয়াসা দিনিয়া যা শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত, দ্বিতীয়ত: সিয়াসা আকলিয়া যা মানবীয় কারণ দ্বারা পরিচালিত। তৃতীয়থ: সিয়াসা মাদানিয়া যা দার্শনিকদের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত। রাষ্ট্রের উত্থান পতন সম্পর্কিত আলোচনায় একটি চক্রাকার তত্ত্ব প্রদান করেছেন যার মাধ্যমে আসাবিয়াহ বা সংহতির গুরুত্ব স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্র কিভাবে একটি শক্তিশালী আসাবিয়ার মধ্যদিয়ে গঠিত হয় এবং তা কিভাবে দুর্বল হয়ে পতন ঘটে তা আলোচনা করেছেন যা সামাজিক বাস্তবতা অনুধাবনে সহায়ক।
আসাবিয়া
সমাজচিন্তায় ইবনে খালদুনের আসাবিয়া (Asabiya) বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আসাবিয়া প্রত্যয়টি সামাজিক সংহতির (Social Solidarity) সমার্থক বিবেচনা করা হয়। আসাবিয়া হচ্ছে একটি গোষ্ঠীগত উন্মাদনা ও সংহতি। এ সংহতির উপর ভিত্তি করে যেকোনাে গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের নিজেদের গোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য অন্য গোষ্ঠীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাধারণত এ ধরনের সংহতির মাধ্যমে প্রতিটি গোষ্ঠী নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পন্ন ও চরম ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করে। বিভিন্ন উপায়ে আসাবিয়া তথা সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। যেমন রক্তসম্পর্ক, ধর্ম, ঐতিহ্য তথা সংস্কৃতি, জ্ঞাতি সম্পর্ক, ভাষা, জাতীয়তা, শ্রমবিভাজন প্রভৃতি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions