মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব (Importance of Human Resource Management)
প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় অব্দি সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পাদনে যে সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান ও উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে শ্রমিক কর্মী তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান কালে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল আবিষ্কারের ফলে শ্রমিক কর্মীদের গুরুত্ব মোটেও কম নয়। এর প্রধান কারণ হলো কর্মী উৎপাদনের একমাত্র উপাদান যা অন্যান্য উপকরণগুলো সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে কাজ সুসম্পন্ন করে। উপাদানের অন্যান্য উপকরণ যত ভালই হোক না কেন কর্মী ভিন্ন তাদের কোন কার্যকরী মূল্য নাই। বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়তন ও জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনশক্তির সার্থক ব্যবহারের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা তার বিশেষায়িত জ্ঞান, কর্ম নৈপন্য ও বিভাগীয় রীতিনীতির সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে মানবীয় উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টা চালায়। আর এ জন্যই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সকল নির্বাহীদের প্রধান কাজ।
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। নিজে এর গুরুত্ব সমূহ ব্যাখ্যা করা হলো:
মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার (Maximum Utilization of Human Resources) :
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো। জনশক্তি পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মীদের সক্রিয় করে তােলে। কারণ উৎপাদনের সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। মানবীয় উপাদান বা শ্রমিক কর্মীদের ছোঁয়াতেই সেগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে বলে এক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের গুরত্ব অত্যন্ত ব্যাপক।
বস্তুগত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার (Maximum Utilization of Material resources) :
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত মানবীয় উপাদান ছাড়াও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ ও উপকরণ সমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, কাঁচামাল সহ ব্যবহৃত সকল উপকরণ সমূহের সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বস্তুগত উপাদানসমূহের কাম্য ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নত করা যায়।
কর্মীদের কর্ম দক্ষতা উন্নয়ন (Developing the working skill of works) :
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মরত কর্মীদের কর্মদক্ষতা উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেলে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যেমন বাড়ে তেমনি উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠান সর্বাঙ্গীন ভাবে লাভবান হয়।
ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ (Preparing future development plan) : বর্তমান যুগকে যান্ত্রিক যুগ বলা হয় ।প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে আমাদের চারপাশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তীত অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন মেয়াদী ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ (Recruiting the proper Personnel) :
সামগ্রীক ব্যবস্থাপনা থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করার মূল কারণই হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ করা। উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ ও নিবাচনের জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
সমন্বয় করা (To Co-ordinate) :
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের সাথে প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মরত সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এবং বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ।
কার্য সন্তুষ্টি (Job Satisfaction) :
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কার্য পরিবেশ উন্নত করতে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এজন্য কর্মীদের মধ্যে কর্মসছুষ্টি বজায় থাকে ফলে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস পায়। শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন (Developing the labour management Relation) ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। ব্যবস্থাপনার সাথে শ্রমিকদের সম্পর্ক অনুকূল হলে অতি সহজে শ্রমিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়। উচ্চ মনোবল সৃষ্টি (Maintaining the high morale) ও শ্রমিক কর্মীদের মনোবল উন্নয়ন ও অক্ষুন্ন রাখা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে হয়।
মজুরী নীতি প্রণয়ন (Preparing the wages policy) :
কর্মীদের জন্য একটি মজুরি নীতি প্রণয়ন করা ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মীদের মজুরী প্রদান করলে কর্মীরা সন্তোষ্ট থাকে। ফলে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা কমে যায়। তাই সঠিক মজুরী নির্ধারণ ও প্রদানের ব্যবস্থা করে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এই উদ্দেশ্যকে কার্যকরি করে।
কল্যাণমূলক কার্যক্রম (Welfare activities) :
কর্মীই হলো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ শক্তি। কর্মী প্রতিষ্ঠানের সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণসমূহের পূর্ণ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানকে রাখে সচল ও গতিশীল। তাই কর্মীদের সার্বিক ভালমন্দ দেখা শুনার ভার মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর ন্যাস্ত থাকে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের অভাব অভিযােগ দূর করতে তাদের সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণমূলক নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন (Development of the organization) :
প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক কাজের জন্য মৌলিক ব্যবস্থাপনা যে সকল রীতি-নীতি ও নির্দেশাবলি জারি করে মানব সম্পদ বা কর্মী ব্যবস্থাপনা সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে। এজন্য কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়ে তাদের নিকট থেকে সর্বাধিক উৎপাদন ও সেবা আদায় করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে ও সুনাম বৃদ্ধি পায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions