Home » » মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি (Functions of Human Resource Management) 

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনশক্তি তৈরি করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করা, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতার উন্নতি করা এবং উপযুক্ত পারিতোষিকের মাধ্যমে তাদেরকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অবস্থা ভেদে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজে ভিন্নতা থাকলেও প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে এ সব কার্যাবলি কমবেশি সম্পাদন করতে হয়। যেহেতু ব্যবস্থাপনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানবীয় উপাদান। তাই এ মানবীয় উপাদানকে ঘিরে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। নিজের চিত্রে দেখানো হলো:

মানব-সম্পদ-উন্নয়ন

ক) স্টাফিং (Staffing) : 

যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদ পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে স্টাফিং বলে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করে কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন ও স্থাপনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণই হলো স্টাফিং। এর আওতাভুক্ত কাজগুলো নিরূপ:

১. কার্যবিশ্লেষণ (Job analysis) :

 যে প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট পদ বা কার্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা যায় তাকে কার্য বিশ্লেষণ বলে। কার্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন, কর্মীর দক্ষতা, যোগ্যতা ও গুণাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ফলে সঠিক মজুরি কাঠামো নির্ধারণ সহজ হয়। 

২. মানব সম্পদ পরিকল্পনা (Human resource planning) : 

যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জনশক্তির চাহিদা নিরূপণ ও চাহিদা পূরণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে মানব সম্পদ পরিকল্পনা বলে। এর মাধ্যমে সংগঠন কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় পূর্ব ধারণা পেয়ে থাকে, ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত কর্মী পেতে অসুবিধা হয় না। 

৩. কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন (Recruitment & Selection) : 

যে পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণের জন্য চাকুরি প্রার্থীদের কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করা হয় তাকে কর্মী সংগ্রহ বলে। অন্যদিকে পরীক্ষানিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে অধিক যোগ্যদের কার্যে নিয়োগ দেয়াকে কর্মী নির্বাচন বলে। 

৪. নির্দেশনা ও স্থাপনা (Guidance & Placement) : 

কর্মী নিয়োগের পর তাদের সঠিক স্থানে স্থাপন করে কার্য শুরুর নির্দেশ দিতে হয়। এক্ষেত্রে কর্মীদের যোগ্যতা, কাজের প্রতি ঝোক, আগ্রহ প্রবণতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত কর্মীকে উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা যায়। 


খ) প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবহার (Training, Development & Utilization) :

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মীদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা। এ পর্যায়ে কাজগুলো নিরূপ:

১. কর্মী পরিচিতি ও সামাজিকীকরণ (Induction & Socialization) : 

নতুন নিয়োগকৃত কর্মী প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক পরিবেশ সম্পর্কে অপরিচিত থাকে। তাই কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, রীতি-নীতি, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলির সাথে পরিচিত ও অভিযোজনের কাজ করতে হয়। 

২. প্রশিক্ষণ (Training) : 

যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি, আচর- আচরণ উন্নত ও কাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান দেওয়া হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী যে কোন পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। 

৩. উন্নয়ন (Development) :

উন্নয়ন হলো একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সংগঠনে কর্মরত সকল নির্বাহী ও কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, আন্ত:ব্যক্তিক দক্ষতা ইত্যাদি সুদূর প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়। 

৪. পেশা উন্নয়ন (Career development) : 

কর্মরত কর্মীদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও ঝোঁকের উপর নির্ভর করে সঠিক কাজে স্থাপন করা হয় এবং সংগঠনের সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। ফলে কর্মীর পেশার উন্নয়ন ঘটে। 

৫. সাংগঠনিক উন্নয়ন (Organizational Development) :

সংগঠনের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে শক্তি বা সামর্থ সৃষ্টি করাই হলো সাংগঠনিক উন্নয়ন।


গ) প্রেষণা দান ও ক্ষমতায়ন (Motivation & Empowerment) : 

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কর্মীদের প্রেষণা দান ও উপযুক্ত ক্ষমতায়ন করা। এ পর্যায়ে সংগঠনের বিবেচ্য কাজগুলো হলো:

১. কার্য নকশা (Work Design) : 

সংগঠনের সামগ্রী কাঠামোগত অবস্থা তুলে ধরার চিত্রকে কার্য নকশা বলে। এর মাধ্যমে সংগঠনের সার্বিক কাঠামোগত উপাদান ও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়।

২. প্রেষণা ও কর্ম সন্তোষ্টি (Motivation & Work Satisfaction) : 

কর্মীর প্রত্যাশা অনুযায়ী উপযুক্ত আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দান করে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করাকে প্রেষণা বলে। প্রেষিত কর্মী উপযুক্ত কাজ ও পারিতোষিক পায় বলে কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। সন্তুষ্ট কর্মী কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। 

৩. বেতন ও মজুরী প্রদান (Payment of salaries & wages) :

প্রয়োজনের জন্য মানুষ কাজ করে। তাই প্রত্যেক কর্মী তার শ্রমের বিনিময়ে উপযুক্ত পারিতোষিক চায়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ হলো কর্মীদের জন্য একটি আদর্শ বেতন ও মজুরীর ব্যবস্থা করা। এর ফলে একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে ওঠে। 

৪. কর্মীদের সুবিধাদি (Employee Benefits) : 

জীবন যাপনের জন্য আর্থিক সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য কিছু সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন হয়। যেমন- উৎসব ভাতা, বোনাস, চিকিৎসা, অবসর ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, চিত্ত বিনোদন ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। এ ধরনের বিবিধ সুবিধাদি কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। 

৫. কর্মী প্রতিশ্রুতি (Employee Commitment) : 

কর্মীকে চাহিদা মাফিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে এবং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক নীতিমালা সুষ্ঠু ও সুন্দর হলে কর্মীগণ সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এতে কর্মী ও প্রতিষ্ঠান উভয় লাভবান হয়।


ঘ) সংরক্ষণ (Maintenance) : 

প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মীদের উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের সংরক্ষণের মাধ্যমে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। এ জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যে কাজ গুলো করে সেগুলো হলো:

১. নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য (Safety & Health) : 

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল নির্বাহী ও কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যন্ত্রপাতি নিয়ম মাফিক স্থাপন করে অফিসকে ভালভাবে বিন্যাস করতে হয়। অফিসের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যসম্বত পরিবেশ বজায় রাখা। যথাসম্ভব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ঝুঁকি হ্রাস, দূর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং ডাক্তার ও ঔষোধের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

২. যোগাযোগ (Communication) :

কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নয়ন হয় একই ভাবে অকার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে আবার আন্ত:দলীয় সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই সঠিক ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে সর্বক্ষেত্রে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে হয়।

৩. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক (Labour management Relation) :

প্রতিষ্ঠানের শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নত হলে উৎপাদন বাড়ে ও সেবার মানও উন্নত হয়। শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক ভাল রাখলে কর্মী মনোভাব, অনুধাবন করে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যুক্তিসংগত প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হয় । 

৪. কাউন্সিলিং (Counselling):

শ্রমিক কর্মীরা রক্ত মাংসের তৈরি মানুষ। তাদের শরীরের পাশাপাশি মন নামক একটি উপাদান আছে- যা দ্বারা সে অনেক কিছু ভাবে। তাই শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও অত্যন্ত জরী। কাউন্সিলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্মীদের আবেগজনিত সমস্যার সমাধান করে কার্য সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করা যায়। 

৫. শৃঙ্খলা (Discipline) :

শৃঙ্খলা বিষয়টি ছোট বড় প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের দাবীদার। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে তা বজায় রাখতে হয়। বাস্তবক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠান যত শৃঙ্খলিত সে প্রতিষ্ঠান তত উন্নত।


ঙ) মনিটরিং (Monitoring) :

মনিটরিং এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কর্মীদের প্রয়োজনে উপদেশ দেয়া হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়। মনিটরিং ব্যবস্থা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ স্তরের কাজ। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক-

১. সম্পাদিত কাজের ব্রন পরীক্ষা করেন। 

২. প্রয়োজনে কার্য সম্পর্কে মতামত প্রদান করেন। এবং 

৩. মতামতের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *