মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যসমূহ (Objective of Human Resource Management)
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত সম্পদ ও কর্মরত মানবীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে সামগ্রীক কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী সংগ্রহ করে দক্ষতা অনুযায়ী তাদের কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকে। অদক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে অতি সহজেই তাদের দ্বারা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সামগ্রীক ভাবে যে সব উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর থাতে সেগুলো নিরূপ :
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা (To make skilled manpower) :
দক্ষ জনশক্তি প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্যবান সম্পদ। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাহিনী যত দক্ষ তাদের সামগ্রীক কার্যক্রম তত উন্নত। তাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রীক অবস্থার সাথে সমন্বয় করে কর্মরত কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা।
সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার (To ensure maximum Utilizations of the Assets) :
মনুষ্য সম্পদ ছাড়াও দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদনে বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত সম্পদ ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন ও সেবা পরিবেশনে ব্যবহৃত সব উপকরণের সর্বোত্তম কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে যেমন উৎপাদন বাড়ে তেমনি সেবার মানও হয় উন্নত। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের বস্তুগত সহ সকল উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করে।
উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ (To appoint appropriate Person) :
সঠিক পদের জন্য উপযুক্ত কর্মী খুঁজে বের করে কাজে নিয়োগ দেয়া মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন কাজ হয়। সকল কাজের ধরণ ও গুরুত্ব এক নয়। কাজেই কাজের ধরণ ও গুরুত্ব ভেদে আলাদা আলাদা কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এতে করে সকল অপচয় রোধ করে মান সম্মত পণ্য অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা যায়।
প্রশিক্ষণ (Training) :
প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন করে তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি কল্পে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর কাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারে। কাজেই প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার আর একটি উদ্দেশ্য।
প্রেষণা দান (To give incentives ) :
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা যেহেতু সরাসরি কর্মীদের নিয়ে কাজ করে সেহেতু কর্মরত কর্মীদের আচরণ ও মনোভাব ভালভাবে অনুধাবন করে বিভিন্ন ধরনের প্রেষণা দানের ব্যবস্থা করে থাকে। সঠিক প্রেষণা দিতে পারলে কর্মী স্বেচ্ছায় কাজে আত্ম নিয়োগ করে ফলে কাজের মান ও গতি বাড়ে।
কার্য বিশ্লেষণ (Job analysis) :
একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন হয়ে থাকে। কাজের ধরণ, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কার্য বিভাজন করে কর্মীকে তার পছন্দ অনুযায়ী কাজে নিয়োগ দান এবং সে অনুযায়ী পারিতোষিকের ব্যবস্থা করা।
কর্ম সম্পাদন মূল্যায়ন (Performance evaluation) :
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো কার্য মূল্যায়ন করা। কর্মীর কর্ম সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে সে অনুযায়ী মজুরী কাঠামো নির্ধারণ করলে কর্মী কাজের প্রতি অধিক যত্নশীল হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়ে থাকে।
মানবীয় সম্পর্ক উন্নয়ন (Development of Human relations) :
একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়ে থাকে। এসমস্ত কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কর্মীও থাকে ভিন্ন ভিন্ন। কাজেই কর্মরত সকল কর্মীদের মধ্যে উন্নত সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে সেজন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
উত্তম কার্য পরিবেশ (Good working condition) :
প্রতিষ্ঠানে সামগ্রীক কার্য পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান ও উকরণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কাজেই এসকল মানবীয় এবং বস্তুগত সকল উপকরণের মধ্যে সুষম সমন্বয়পূর্বক একটি সুন্দর কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সচেষ্ট থাকে।
উৎপাদন বৃদ্ধি (To increase production) :
উৎপাদন বৃদ্ধি করা ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কর্মীদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions