সাংগঠনিক আচরণ কি
সাংগঠনিক আচরণ হলো আচরণ সম্পর্কিত বিদ্যা ও অধ্যয়নের একটি ক্ষেত্র। এটি অধ্যয়নে দেখা যায়, সামাজিক ভাবেই মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্থ। এ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সংগঠিত সমাজব্যবস্থা। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় মানুষের সব উদ্যম, উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড কোনো না কোনো ধরনের সাংগঠনিক পরিবেশের মধ্যেই পরিচালিত হয়। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, কর্মজীবন, শিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদি সাংগঠনিক পরিবেশের মধ্যেই আবর্তিত। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী এ্যামিটাই এটজিয়নী (Amitai Etzioni ) -এর বিখ্যাত উক্তি “We are born in organizations, educated by organizations, and most of us spared much of our lives working for organizations." যদি তাই হয়, সাংগঠনিক পর্যায়ে মানবিক আচরণ অনুধাবন করার কোনো বিকল্প নেই। সাংগঠনিক পর্যায়ে মানুষ যে আচরণ করে তার সাথে সামাজিক আচরণের অনেক তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। সংগঠনে একজন ব্যক্তি কীভাবে ও কেন নির্দিষ্ট আচরণ করে এবং এর পেছনে কী যুক্তি বা শক্তি ক্রিয়াশীল তা জানা আবশ্যক।
কেউ কেউ ‘organizing' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সংগঠন' শব্দ ব্যবহার করেন। ব্যাকরণীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃতপক্ষে এর প্রতিশব্দ ‘সংগঠিতকরণ” হওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘organization' শব্দের অর্থ- ‘সংগঠন'। এ বইয়ে মূলত ‘সংগঠন' শব্দটি ব্যবহার করলেও সংগঠিতকরণ শব্দটিও একই অর্থে ব্যবহার করা হবে।
সাংগঠনিক আচরণের অর্থ
Meaning of Organization Behavior
আচরণ বিজ্ঞানের (Behavioral Science) শাখা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। তার মধ্যে সাংগঠনিক আচরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা যেখানে সংগঠনে মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ দিক থেকে একে মানবিক আচরণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান বলা হয়। সাংগঠনিক আচরণ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আস্থা, কর্মতৃপ্তি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়। প্রতিষ্ঠান কোনো পণ্য তৈরি করার জন্য বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে, যেমন- যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, নগদ অর্থ ইত্যাদি। কিন্তু এ উপাদানগুলো মানুষের ছোঁয়া না পেলে কোনো দ্রব্যে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও সন্তোষজনক কার্য সম্পাদন নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মানবিক সম্পর্কের উপর।
মানবিক সম্পর্ক বলতে একদিকে যেমন শ্রমিক-ব্যবস্থাপক-মালিক সম্পর্ককে বুঝায় তেমনি শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কও এর অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মীদের আচরণের ধরন ও প্রকৃতি, তাদের প্রত্যাশা, আবেগ, নৈরাশ্য ও আনন্দ এবং পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মৌলিক কারণ জানা আবশ্যক। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় “সাংগঠনিক আচরণ কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপ ও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত জ্ঞানের অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োগকে বুঝায়।”
সাংগঠনিক আচরণের সংজ্ঞা
"Organization behavior is a field of study that investigates the impact of individuals, groups and structure on behavior within organizations for the purpose of applying such knowledge toward improving an organization's effectiveness." - Stephen P. Robbins
"Organizational behavior is the study and application of knowledge about how people act and behave within organizations." - Davis and Newstorm
সংজ্ঞা দুইটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনো সংগঠনে মানুষের আচরণ নির্ভর করে তার আবেগ, অনুভূতি, মেজাজ, সংবেদনশীলতা, মনোভাব, প্রেষণা, দ্বন্দ্ব বা হতাশা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশে বিদ্যমান বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রতি তারা নানাভাবে সাড়া দিয়ে থাকে যা সংগঠনের পক্ষে-বিপক্ষে যেতে পারে। তাই তাদের আচরণকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাম্য পরিবেশ সৃষ্টি করা বাঞ্চনীয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions