Home » » পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির সম্পর্ক অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে বেশি সুদৃঢ়। রাষ্ট্রের নাগরিকের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং অর্থনৈতিক জীবনধারা ইতিবাচক হলেই কেবল রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। তাই উভয় শাস্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। 

সাদৃশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে সাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ: 

১। অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। বিষয় আলাদা হলেও উভয়ের লক্ষ্য হল কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন ও মানবকল্যাণ সাধন করা। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের গুণাবলি, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, নাগরিকতা অর্জন পদ্ধতি ইত্যাদি আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। অর্থনীতি নাগরিকদের অসীম চাহিদার মাঝে সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে। 


২। অভিন্ন বিষয়বস্তু : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির বিষয়বস্তুগত অভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে বিদ্যমান প্রতিটি অর্থনৈতিক সমস্যার যেমন রাজনৈতিক দিক রয়েছে তেমনি রাজনৈতিক সমস্যারও অর্থনৈতিক দিক রয়েছে। সম্পদ, সম্পদের উৎপাদন ও বন্টন ব্যবসা, বাজেট, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সমবায় ব্যবস্থা, জাতীয়করণ, বৈদেশিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্রনীতি, জনসংখ্যা সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উভয় শাস্ত্রই আলোচনা করে। 


৩। পরস্পরের পরিপূরক : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবন গভীরভাবে সম্পৃক্ত। একটির পরিবর্তনের সাথে অন্যটির পরিবর্তন সাধিত হয়। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার বলেন, “প্রত্যেক সরকার ব্যবস্থাই তার অনুরূপ সম্পত্তি ব্যবস্থাকে সংরক্ষণ করে, একটির পরিবর্তন হলে অন্যটিরও পরিবর্তন সাধিত হয়। 


৪। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি পরস্পর নির্ভরশীল। আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় অধিকাংশ কার্যপদ্ধতি অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। রাষ্ট্র ও সরকারের সাফল্য এবং অগ্রগতি নির্ভর করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর। এ ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের কারণে যেকোন একটির ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতার জন্য রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই বলা হয় যে, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতিকে বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ নেই।


৫। জনকল্যাণ সাধন : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি উভয় শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ সাধন। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রকে জনগণের কল্যাণার্থে বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়। এসব কর্ম-পরিকল্পনা পরিচালিত হয় রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃর্ক। তাই জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধনে উভয় শাস্ত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। 


বৈসাদৃশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ: 

১। বিষয়বস্তুগত পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত রাষ্ট্র, সরকার, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য অর্থাৎ নাগরিকতার সাথে জড়িত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, অর্থনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি।


২। পদ্ধতিগত পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্য দৃশ্যমান। পৌরনীতি ও সুশাসনের অনুশীলন পদ্ধতি ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক। এ পদ্ধতি অনেকটা তাত্ত্বিক ধরনের। কিন্তু অর্থনীতির অনুশীলন পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রেই গাণিতিক সূত্র সংশ্লিষ্ট । 


৩। গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, আইনের শাসন, জবাবদিহিতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। অন্যদিকে অর্থনীতি মানুষের আয়, সম্পদ, চাহিদা, বন্টন বাজেট, সুদ, লোন, বাজার ব্যবস্থা অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। 


পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতির মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত কার্যকরী। উভয়ের সমন্বিত উদ্যোগে রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধিত হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *