পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক
পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিকের বাহ্যিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, নীতিশাস্ত্র। নাগরিকের নৈতিকতা সম্বন্ধীয় বিষয়াবলি আলোচনা করে থাকে। উভয় শাস্ত্রের উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণ সাধন করা। সেক্ষেত্রে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
সাদৃশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে বিরাজমান সাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ :
১। অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতি শাস্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। পৌরনীতি ও সুশাসনের মূল উদ্দেশ্য সুনাগরিকতা অর্জন। অন্যদিকে, নীতিশাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য নাগরিকদের নৈতিকভাবে উন্নত মনের মানুষ গড়ে তোলা। নাগরিকদেরকে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত সম্পর্কিত শিক্ষা দেয় নীতিশাস্ত্র । তাই উদ্দেশ্যগত অর্থে উভয়শাস্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন।
২। বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের আচার-আচরণ, অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে নীতিশাস্ত্র মানুষের আচরণ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করে। তাই উভয় শাস্ত্রের মধ্যে বিষয়বস্তুগত সাদৃশ্য রয়েছে।
৩। পরস্পর পরিপূরক : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র পরস্পরের পরিপূরক। যেকোন নৈতিক আদর্শ নাগরিক দ্বারা স্বীকৃত হলে রাষ্ট্র সহজেই সেটাকে আইনে পরিণত করতে পারে। আবার রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হলেও কোন আইন নৈতিকতা বিরোধী হলে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে। এ প্রসঙ্গে সি জে ফক্স (C. J. Fox) বলেন, “ন্যায়নীতির দিক থেকে যা অন্যায় তা রাজনৈতিক দিক থেকে ন্যায় হতে পারে না।”
৪। পরস্পর নির্ভরশীল : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্র পরস্পর নির্ভরশীল। উভয় শাস্ত্রের মূল লক্ষ্য নৈতিকতা ও সুনাগরিকতার জ্ঞানের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন। এ প্রসঙ্গে আইভর ব্রাউন (Ivor Brown) বলেন, “নীতিশাস্ত্রের ধারণা রাজনৈতিক মতবাদ ছাড়া অসম্পূর্ণ এবং নীতিশাস্ত্রের ধারণা প্রতিফলিত না হলে রাজনৈতিক মতবাদ অর্থহীন।”
বৈসাদৃশ্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈসাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
১। পরিধি ও বিষয়বস্তুগত পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে বিষয়বস্তুগত পার্থক্য রয়েছে। পৌরনীতি ও সুশাসনের চেয়ে নীতিশাস্ত্রের বিষয়বস্তু ও পরিধি ব্যাপক। পৌরনীতি ও সুশাসন মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে নীতিশাস্ত্র মানুষের বাহ্যিক আচরণের পাশাপাশি চিন্তাগত অবস্থান নিয়েও আলোচনা করে।
২। বাধ্যবাধকতার পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসনে আলোচ্য রাষ্ট্রীয় আইন যা মান্য করা বাধ্যতামূলক। এ আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু নীতিশাস্ত্রে আলোচ্য নৈতিক বিধানাবলি বাধ্যতামূলক নয়।
৩। স্থানভেদে আইন ও নৈতিকতা : পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রীয় আইন সকল দেশে একই রকম নাও হতে পারে। যেমন- অনেক দেশ মৃত্যুদন্ড বিধান রহিত করেছে। পক্ষান্তরে, অনেক দেশে মৃত্যুদন্ড চালু আছে। নীতিশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত বিধি-বিধানগুলো পৃথিবীর সকল দেশে প্রায় একই রকম।
৪। ভিত্তির ক্ষেত্রে পার্থক্য : পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়ের মূল ভিত্তি হল রাজনৈতিক। নৈতিকতার স্থান এখানে সুদৃঢ় নয়। অন্যদিকে, নীতিশাস্ত্রের অন্তর্ভূক্ত নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সামাজিক সমর্থনের উপর প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত।
পরিশেষে বলা যায় যে, উভয় শাস্ত্রের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও উভয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। উভয় শাস্ত্রেরই লক্ষ্য মানব কল্যাণ করা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions