সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
সুশাসন একটি জটিল ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের সকল নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে গিয়ে সরকার বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতন অভিমত সরকারের কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় ও অর্থবহ করে তোলে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এখানে আলোচনা করা হল:
১। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের প্রধান করণীয় হচ্ছে ব্যক্তিগত অথবা সংগঠিতভাবে সরকারকে জনকল্যাণে সুনীতি গ্রহণে বাধ্য করা। এক্ষেত্রে তারা আলোকিত মতামত দিয়ে সরকারকে সাহায্য করতে পারে বা সরকারের অন্যায় বা ভুল নীতির সমালোচনা বা প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারে।
২। ক্ষেত্রবিশেষে নাগরিকগণ নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেরাই উদ্যোগ নিতে পারে। সরকার অংশীদারিত্বের নীতির মাধ্যমে এই কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে নাগরিকদের মধ্যে উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণের মনোভাব বাড়বে। নাগরিক উদ্যোগগুলোতে সরকার নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সহায়তা দিলে, নাগরিকরা স্ব-শাসনের শিক্ষা লাভ করবে। এসব উদ্যোগ সুশাসনকে ত্বরান্বিত করবে।
৩। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে সচেতনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, কর প্রদান করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় না করা, ঘুষ নিজে না খাওয়া এবং কেউ ঘুষ নিলে বা দিলে তার প্রতিবাদ করাও নাগরিক দায়িত্ব।
৪। নানামত, নানা চিন্তা এবং সকল ধর্ম ও জাতিসত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনও নাগরিক দায়িত্ব। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা ও প্রতিরোধ করা নাগরিক দায়িত্বেরই অংশ। রাষ্ট্রের সংবিধানের মূলনীতিগুলো মান্য করা নাগরিকের দায়িত্ব।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয়:
১। সরকারের করণীয় হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সুযোগকে বিস্তৃত করা। নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এই সুযোগকে বর্ধিত করতে পারে। রাষ্ট্রের ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তখনই সহায়ক হয় যখন রাষ্ট্র স্বচ্ছতার নীতির ভিত্তিতে নাগরিকদের প্রতি তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়।
২। সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আমলাতন্ত্র, বিচারবিভাগ, আইনবিভাগের কার্যক্রমকে গতিশীল, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করা এবং সাধারণ জনগনের জন্য অধিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়া। প্রয়োজনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সহায়ক এমন নতুন ও কার্যকরী আইন করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসনকে জনসেবায় নিয়োজিত করা, কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে । প্রয়োজনে প্রশাসনে যথাযথ প্রযুক্তি প্রয়োগ করেও অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত করা যায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করা যায়। নাগরিক কর্তব্য যেমননির্বাচনে অংশগ্রহণ, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন, তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে আইনের দারস্থ হওয়া, সরকারকে জবাবদিহি করা, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও নিয়মিত কর প্রদান করে সরকারি সেবা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে সুশাসন নিশ্চিত করা যেতে পারে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions