সুশাসনের গুরুত্ব
একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে সুশাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হল। সুশাসন ছাড়া স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি রাষ্ট্রে সুশাসন না থাকলে, সে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থিতিশীল হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল উপাদান যেমন, উৎপাদন, বণ্টন, বিনিয়োগ এমনকি ভোগের ক্ষেত্রেও নানারকম বাধার সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে বাজার ব্যবস্থাও নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। যেমন ধরা যাক বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হয় তখন এর উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতালের কারণে যানবাহন চলাচল না করলে পণ্যের যথাযথ বাজারজাতকরণ সম্ভব হয় না। ফলে ভোক্তারা বাজার থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে না। অথবা কিনলেও বেশি অর্থ ব্যয়ে বাধ্য হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ন্যায্য বন্টন সম্ভবপর হয়।
সামাজিক উন্নয়নে সুশাসন
সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুশাসন অপরিহার্য। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেই সুশাসনের ভূমিকা শেষ হয়ে যায় না। উন্নয়নের ফলাফল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ন্যায্যতার সাথে ভোগ করতে পারাই সুশাসনের লক্ষণ। একটি সমাজে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ শ্রেণি পেশার মানুষ থাকে। যেমন, বাংলাদেশে রয়েছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ। এছাড়াও দেশটিতে আছে নানা জাতিসত্তার মানুষ। এখন এ সকল মানুষের কাছে সম্পদের ন্যায্য বণ্টন না হলে সামাজিক অসন্তোষ বাড়বে। শুধু সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হলেই সুশাসন হবে না। যদি সংখ্যালঘু মানুষেরা স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তার সম্পত্তির অধিকার ভোগ না করতে পারে তাহলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে না। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্যও সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। অনগ্রসর নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা আইন সংস্কার জরুরি।
সুশাসন ও রাজনৈতিক উন্নয়ন
রাজনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। একটি দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি আন্তরিক হন, তাহলে সে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হয় না। সুশাসনের সাফল্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি মেনে চলার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তথা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠনমূলক সহযোগিতা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নে তাদের নিজেদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions