সমাজবিজ্ঞানের পরিধি
সমাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণই সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। সে অর্থে বলা যায় যে, পুরো সমাজই সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত। তাই সহজেই অনুমান করা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের পরিধি কত ব্যাপক ও বিস্তৃত। অধিকাংশ সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ও বিষয়বস্তু নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর আলোকে বর্ণনা করেছেন:
১. সামাজিক প্রতিষ্ঠান : সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ নির্ধারিত হয়। কিভাবে মানুষের সমাজে নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে এসবের ভেতর পরিবর্তন এসেছে এগুলোর বিচার বিশ্লেষণ করে সমাজবিজ্ঞান।
২. সামাজিক পরিবর্তন : সমাজ গতিশীল তাই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে সমাজের রূপান্তর একটি চিরন্তন সত্য। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় মানুষের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, সম্পর্ক, মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা করাই সমাজবিজ্ঞানের কাজ।
৩. সামাজিক কর্মকাণ্ড : সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামাজিক কর্মকাণ্ড। সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজস্থ মানুষের নানাবিধ দিক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়।
৪. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : সমাজকে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু কতগুলো আচার-অনুষ্ঠান ও মূল্যবোধের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
৫. সামাজিক ধারণা : সামাজিক ধারণাসমূহ নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে। মরিস জিন্সবার্গের মতে, মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং এর ফলাফল সম্পর্কিত আলোচনাই হল সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।
৬. সামাজিক আদর্শ : সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ও বিষয়বস্তু হিসেবে সামাজিক আদর্শের ভূমিকা রয়েছে। কারণ সামাজিক আদর্শ ছাড়া কোনো জাতি কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারে না।
৭. সমাজের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা : মানুষের কার্যকলাপ এবং মানুষের সাংগঠনিক প্রতিভা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়গুলো সমাজবিজ্ঞানের পরিধিকে অনেক বেশি বিস্তৃত করে তুলেছে।
৮. সামাজিক সমস্যা : নৈতিকতার প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। কাজেই সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ করতে চায়।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজ সম্পর্কিত অধ্যয়নের একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, যার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। সমাজ জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা সমাজবিজ্ঞানের আওতায় আসে না। তাই বলা যায়, সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় তথা সমগ্র মানবিক সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions