আইন কি / আইনের বৈশিষ্ট্য / আইন কত প্রকার
আইন কি বা আইন কাকে বলে:
সৃষ্টির আদি কাল থেকেই মানুষ কোন না কোন নিয়ম-কানুন বা প্রথা মেনে আসছে। এই নিয়মকানুন যখন। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বীকৃতি পায় তা আইন হিসেবে গন্য হয়। আইন মানব সমাজের দর্পণস্বরূপ। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে একসাথে বসবাস করার জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা অপরিহার্য। মানব কল্যাণের স্বার্থেই নিয়মকানুন প্রয়োজন। স্বীকৃত এই নিয়ম-কানুনই হল আইন। আইন হল ফার্সী শব্দ যার অর্থ সুনির্দিষ্ট নীতি বা নিয়ম। আইন এর ইংরেজি প্রতিশব্দ "Law"। Law শব্দের অর্থ স্থির বা অপরিবর্তনীয় এবং সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্নভাবে আইনের সংজ্ঞা দিয়েছেন:
এরিস্টটল বলেন, “সমাজের যুক্তিসিদ্ধ ইচ্ছার অভিব্যক্তিই হচ্ছে আইন”।
The Dictionary of the History of Ideas (1973) এ আইনকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “আইন হচ্ছে মানুষের আচরণকে পরিচালিত করার সবচেয়ে স্পষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক এবং জটিল মাধ্যম।
অধ্যাপক হল্যান্ড এর মতে আইন হচ্ছে, “সেই সাধারণ নিয়ম যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োগ করেন।”
জন অস্টিন বলেন, “আইন হল সার্বভৌম শাসকের আদেশ”।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, আইন হল মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র যে সকল বিধিনিষেধ প্রণয়ন করে সাধারণভাবে সেগুলোকেই আইন বলা হয় ।
আইনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি
আইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণের মতামত থেকে আইনের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন:
(১) সার্বভৌম ক্ষমতা কর্তৃক অনুমোদিত
(২) সর্বজনীন |
(৩) বিধিবদ্ধ নিয়মাবলি
(৪) বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রক
(৫) ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষক
(৬) সুস্পষ্ট
(৭) গতিশীল।
(৮) দেশকাল ভেদে পরিবর্তনশীল
আইন কত প্রকার / আইনের প্রকারভেদ
আইনের প্রয়োগ ও অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের উপর ভিত্তি করে আইনকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ (১) সরকারি আইন, (২) বেসরকারি আইন , (৩) আন্তর্জাতিক আইন
(১) সরকারি আইন:
সরকার কর্তৃক প্রণীত ও বলবকৃত নিয়মকানুনই হল সরকারি আইন। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে নানা ধরনের আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হয়। সরকারি আইন সাধারণত জাতীয় সংসদ বা পার্লামেন্টে প্রণীত হয়ে থাকে। পার্লামেন্টে আইন প্রণীত হবার কয়েকটি পর্যায় থাকে। সকল পর্যায়েই সাধারণত সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যগণের সম্মতির প্রয়োজন পড়ে। সরকারি আইন আবার কয়েক প্রকার। যেমন:
ফৌজদারি আইন: ব্যক্তির বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্র মূলত এ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকে। সমাজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তি বজায় রাখা এবং ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করা এবং অপরাধীকে দন্ড দেয়ার জন্য ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করা হয়।
প্রশাসনিক আইন: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণকে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের মানের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ।
সাংবিধানিক আইন: রাষ্ট্রের ভিত্তি হল সংবিধান। এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য যেকোন আইন এ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল হয়ে যায়। এ আইন দ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমা, বন্টন ও প্রয়োগকারী নির্ধারণ করা হয়।
(২). বেসরকারি আইন
এ আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণীত নয় তবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত হয়। এ আইন দ্বারা ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়। যেমন, কোন সংঘের আইন, চুক্তি ও দলিল সংক্রান্ত আইন।
(৩). আন্তর্জাতিক আইন
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ ও বজায় রাখার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। আন্তর্জাতিক আইনকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- শান্তিকালীন আইন, যুদ্ধসংক্রান্ত আইন এবং নিরপেক্ষতার আইন। এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক, রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান, আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত বিষয়গুলি আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভূক্ত।
0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions