গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি
বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধের মাঝে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অন্যতম। নৈতিকতা, সহমর্মিতা, আত্নসংযম, পরমত সহিষ্ণুতা এর মতো গুনাবলিগুলো মানুষকে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে শেখায়। একটি রাষ্ট্র কেবল গণতন্ত্র ঘোষণা করলেই হবে না, তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণের মাঝে গণতান্ত্রিক চেতনা, সংকল্প ও উদ্দেশ্য তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। সমাজের কথা, প্রতিবেশীর সুবিধা-অসুবিধা, অন্যের অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করা মূল্যবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা আবার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই প্রতিফলন। মূলত উদারতাবাদ নামক মতবাদ থেকেই এর উৎপত্তি। অধ্যাপক জর্জ এইচ সেবাইন উদারতাবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন “ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনি সুরক্ষা এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার তত্ত্ব ও অনুশীলন হচ্ছে উদারতাবাদ। মানুষের মানবিক ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিস্বাধীনতা, সহজাত যুক্তিবোধ ও গুণ, এবং পারস্পরিক সম্মতিসহ এমন আরো কয়েকটি গুণের চচাই হল উদারতাবাদ, যার সবকটিই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। গণতন্ত্র ব্যর্থ হবার পেছনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাবকেই দায়ী করা হয়।”
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব
সমাজে বসবাসের জন্য মূল্যবোধ অপরিহার্য। একে অপরের সাথে আন্ত:সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হল এই মূল্যবোধ। মূল্যবোধহীন ব্যক্তি সমাজের জন্য বিপদস্বরূপ। অন্যদিকে গণতন্ত্রের মূল কাজ হল ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা। একজনের অধিকার ও স্বাধীনতা অন্যের উপর নির্ভরশীল, যা বজায় রাখার জন্য পারস্পরিক মূল্যবোধ প্রয়োজন। অপরের বক্তব্য ও অধিকারকে সম্মান দেখানোর অর্থই হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। একটি সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যক্তির অধিকার, মর্যাদা, সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়। ব্যক্তি অন্যের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ, সহমর্মী ও সংযত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক সমাজের সৃষ্টি হয়। বর্তমান সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে হানাহানি, প্রতিহিংসা ও সংঘাত লেগেই থাকে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময়ের সামষ্টিক উদ্যোগের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো:
- মূল্যবোধ মানুষকে সহনশীলতার শিক্ষা দিয়ে থাকে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যা অপরিহার্য। অন্যের মতামত বিশেষ করে বিরুদ্ধ মত সহ্য করা ও বিবেচনা করা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করে। এহেন মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি হলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে নাগরিকেরা নিজ-নিজ অধিকার ভোগ ও কর্তব্য সম্পাদনে তৎপর হয়।
- সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার প্রতি সমান দৃষ্টি দিয়ে থাকে। এর ফলে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
- জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যমতে পৌছানো জরুরি, যা কেবল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মধ্য দিয়েই সম্ভব।
- সরকারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যসম্পাদনকারী ব্যক্তিবর্গের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত ব্যক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ থেকে বিরত থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions