Home » » জাতি কি

জাতি কি

জাতি কি

জাতি : লাতিন শব্দ Natio হতে ইংরেজি ‘Nation' (নেশন) কথাটির উৎপত্তি হয়েছে। ইংরেজিতে ‘নেশন’ এর বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে জাতি'। জন বার্জেস ও স্টিফেন লিকক এর মত পন্ডিতেরা গোত্রগত বা বংশগত ঐক্যের অর্থে জাতির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। বার্জেসের মতে, যারা গোত্রগত ও ভৌগোলিক ঐক্যের ভিত্তিতে বিশেষ এলাকায় একত্রে বসবাস করে তারাই জাতি। লিকক বলেন, বংশগত ও ভাষাগত ঐক্যের বন্ধনে যে মানবসমাজ আবদ্ধ তারাই জাতি। কিন্তু উভয় লেখকের প্রদত্ত সংজ্ঞা অসম্পূর্ণ। ইংরেজ চিন্তাবিদ টি এইচ গ্রিন জাতির যে সংজ্ঞা উপস্থাপন করেন তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “the nation underlies the state” এবং রাষ্ট্র বলতে বুঝায় “the nation organised in a certain way." 

উল্লেখযোগ্য এই যে, প্রথম মহাযুদ্ধের পর হতে জাতির বস্তুনিষ্ঠ সংজ্ঞা নিরূপণ করার ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যায়। তারা অনেকেই এর বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে যথেষ্ট সাফল্যেরও পরিচয় দান করেন। তাদের মতামত অনুসরণ করলে এটি প্রত্যক্ষ হয় যে, ভাষা, প্রথা, ঐতিহ্য কিংবা জাতিকতার ভিত্তিতে একতাবদ্ধ হয়ে যে মানব সমাজ ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার' দাবি করে অথবা রাষ্ট্র গঠনে সমর্থ হয় তারাই জাতি হিসেবে অভিহিত হতে পারে। রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব জাতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। যে জনসমাজ বাস্তবে ইহা ধারণ করে অথবা ইহা অর্জনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করে তারাই জাতি। লর্ড ব্রাইসের ভাষায়: "A nation is a nationality which has organised itself into a political body, either independent or desiring to be independent."

কিন্তু ক্রিস্টোফার হায়েস জাতির যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা থেকে মনে হয় যে, একটি মানবগোষ্ঠী ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব অর্জন দ্বারাই জাতিরূপে গণ্য হতে পারে। রামসে মুর প্রদত্ত সংজ্ঞাটি এক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ; তিনি বলেন: “জাতি একটি মানবসমষ্টি যারা বিশেষ সাদৃশ্যবশত স্বাভাবিকভাবেই সন্নিবদ্ধ হয়েছে বলে অনুভব করে এবং এ সাদৃশ্য তাদের নিকট এতই প্রবল ও বাস্তব যেজন্য তারা স্বচ্ছন্দে একত্রে বসবাস করতে পারে। তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলে তাদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ এবং যারা এই বন্ধনের সাথে সম্পর্কহীন তাদের অধীনতাও তারা সহ্য করতে পারে না।”

অধ্যাপক আর এন গিলক্রিস্টের মতে জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থবোধক, শুধু প্রভেদ এই যে, রাষ্ট্র অপেক্ষা জাতির অর্থ অধিক ব্যাপক। অন্যভাবে বলা যায়, রাষ্ট্রের পরিচয়ে জাতির পরিচয়; যেমন ইন্দোনেশীয় বলতে আমরা ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বুঝে থাকি। এ এস হমবি এর মত পন্ডিতেরা জাতি বলতে বোঝান এমন একটি বৃহদাকার জন সম্প্রদায়কে যারা একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাস করে, সাধারণত একই ভাষায় কথা বলে এবং যাদের একটি রাজনৈতিক চরিত্র বা রাজনৈতিক আকাঙ্খা থাকে ।


জাতীয়তা 

জাতীয়তার ধারণা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। অলিভার ভঙ্ক এর মত গবেষক মনে করেন জাতীয়তা হচ্ছে একজন ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের মধ্যকার আইনী বন্ধন। জাতীয়তার মাধ্যমে ব্যক্তির উপরে রাষ্ট্রের আইনী অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। জাতীয়তা দ্বারাই ব্যক্তি রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুরক্ষা লাভ করে। তবে জাতীয়তার ধারণা যে সব সময় রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত তা নয়। কখনো কখনো জাতীয়তা দ্বারা একটি জাতিগোষ্ঠীকে নির্দেশ করা হয় যার সদস্যরা একই ধরনের ভাষা, নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়, সংস্কৃতি, ইতিহাস বা সমরূপ কোন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। 

অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কির মতে জাতীয়তা “একটি ঐক্যবোধের পরিচায়ক। এর অংশীদাররা বাকি মানবসমাজ হতে স্বতন্ত্ররূপে চিহ্নিত হয়।” এই ঐক্য একক ইতিহাস, বিজয় কাহিনী কিংবা যুগ্ম প্রচেষ্টায় সৃষ্ট ঐতিহ্যেরই ফল। এসবের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বোধ ঐক্যের বন্ধন তৈরি করে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *