Home » » ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল অর্থ সরকারের সমগ্র কাজকে তিন ভাগে বিভক্ত করা এবং তিনটি স্বতন্ত্র বিভাগের সহায়তায় তা পরিচালনা করা। বিভাগগুলো হচ্ছে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হচ্ছে সরকারের এ তিনটি বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি হবে আলাদা ও স্বতন্ত্র। প্রত্যেক বিভাগ নিজ-নিজ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে। প্রত্যেকটি বিভাগের সংগঠনের প্রকৃতিও হবে স্বতন্ত্র। একটি বিভাগ অন্য কোন বিভাগের কাজের উপর হস্তক্ষেপ করবে না। এ নীতি অনুযায়ী আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করবে। শাসন বিভাগ আইনগুলোকে বাস্তবায়ন করবে এবং বিচার বিভাগ বিচারিক কার্য সম্পাদন করবে ও আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। বস্তুত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তিই হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি। 

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ধারণাটি বেশ পুরনো। বিভিন্ন সময়ে বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে ফরাসি চিন্তাবিদ জ্যাঁ বডিন বলেন, “আইন প্রণয়ন ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা এক ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে তাঁরা কঠোর আইন প্রণয়ন করে তা নির্দয়ভাবে প্রয়োগ করবেন।” তাঁর কথায় একই সাথে বিচারক এবং আইন প্রণেতা হওয়ার অর্থ হচ্ছে ন্যায়বিচারের সাথে ক্ষমতার অধিকার এবং আইনের প্রতি আনুগত্যের সাথে স্বেচ্ছাচারিতার সংমিশ্রণ।” 


ইংল্যান্ডের বিখ্যাত চিন্তাবিদ জন লক এ প্রসঙ্গে বলেন, “একই ব্যক্তি আইন রচনা এবং তা প্রয়োগ করলে ব্যক্তি স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার এবং নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই তিনি অধিকার রক্ষার স্বার্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অপরিহার্য বলে মনে করেন। 


ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চার্লস মন্টেস্কু তাঁর বিখ্যাত "The Spirit of Laws" গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনিই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা। তিনি বলেন, “যখন একই ব্যক্তি বা একই শাসক বর্গের হাতে আইন রচনা এবং শাসন করার ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয় তখন জনগনের স্বাধীনতা থাকতে পারে না, অথবা আইন ও শাসন ক্ষমতা যদি বিচার বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র না হয় তাহলেও স্বাধীনতা থাকতে পারে না।”


মােট কথা সরকারের এ তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে না পারলে স্বাধীনতা রক্ষিত হবে না। তিনটি ক্ষমতা আলাদা থাকলে তা স্বৈরাশাসনের নামান্তর হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করার নামে প্রত্যেকটি বিভাগ আলাদা-আলাদাভাবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা ঠেকানোর জন্য যে নীতি প্রয়োগ করা হয় তার নাম নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য (checks and balance) নীতি। এই নীতি অনুসারে সরকারের যে কোন একটি বিভাগের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা ঠেকানোর জন্য অন্য বিভাগের হাতে কিছু আইনগত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে।

0 comments:

Post a Comment

Comment below if you have any questions

Contact form

Name

Email *

Message *