Home » » সমাজবিজ্ঞানের জনক কে

সমাজবিজ্ঞানের জনক কে

সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?

অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত। 

তিনি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই কোঁৎ প্রখর স্বরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে ইকলে পলিটেকনিক নামক স্কুলে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি প্যারিসে চলে যান। ১৮৫৭ সালে অগাস্ট কোঁৎ মৃত্যুবরণ করেন। 

ফরাসী বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া অগাস্ট কোৎ- এর সমাজ সম্পর্কিত চিন্তা ও তত্ত্বকে বহুলাংশে প্রভাবিত করেছে। ফরাসী বিপ্লব সামন্তবাদের অবসান ঘটিয়ে শ্রেণিবৈষম্যজনিত সমাজব্যবস্থা কাঠামো ভেঙ্গে দেয়। সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা ও অসংগতি বিরাজ করতে থাকে। অগাস্ট কেঁৎ তৎকালীন ফ্রান্সের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণ করে সমাজ পুর্ণগঠনের চিন্তায় মনোনিবেশ করেন। কোঁৎ এর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে Positive Philosophy এবং Positive Polity বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৮৩৯ সালে তিনি ‘Sociology' প্রত্যয়টি প্রথম ব্যবহার করেন। তার প্রধান তত্তগুলোর মধ্যে ত্রয়স্তর সূত্র, দৃষ্টবাদ এবং বিজ্ঞানের ক্রমসােপান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ত্রয়স্তর সূত্র (Law of Three Stages) 

কোতের ত্রয়স্তর সূত্র প্রধানত মানব জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। সমাজের বিকাশ বলতে তিনি জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশকেই বুঝিয়েছেন। জ্ঞানের স্তরের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কোঁৎ সমাজকে দেখেছেন ক্রমবিকাশ ও প্রগতির প্রক্রিয়া হিসেবে। তাঁর মতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি তিনটি স্তরের মাধ্যমে বিকশিত হয়ে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানমনস্ক রূপ লাভ করেছে। বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের তিনটি স্তর হচ্ছে: 

১। ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তর (Theological Stage) 

২। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর (Metaphysical Stage) এবং 

৩। দৃষ্টবাদী স্তর (Positive Stage) 


১। ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তর 

মানুষের জ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায় হচ্ছে ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তর। এ স্তরে মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পারেনি। মানুষ মনে করেছে প্রকৃতিতে সবকিছুই অতিপ্রাকৃত শক্তির ইশারায় চালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এ স্তরে মানুষের মন ধর্মীয় ভাবাবেগে আচ্ছন্ন থাকে। এ স্তরকে আবার তিনটি ধাপে বিভক্ত করা হয়। যথা-

(ক) প্রকৃতি পুজা (Fetishism): এ পর্যায়ে অতিপ্রাকৃত ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটে যা ভক্তি ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়। 

(খ) বহুদেববাদ (Polytheism): এ পর্যায়ে বিশ্বাস করা হয় যে, মহাবিশ্ব বহু দেবদেবতা দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। 

(গ) একেশ্বরবাদ (Monotheism): এ পর্যায়ে বিশ্বাস করা হয় মহাবিশ্ব এক ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত।

ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তরে প্রাধান্য থাকে পুরোহিত ও যাজক শ্রেণির হাতে এবং ধর্মই এই স্তরে সমাজ গঠন ও সমাজ পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। 


২। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর

অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরটি চিন্তা ও সমাজ বিবর্তনের মধ্যবর্তী পর্যায়। এ স্তরটির অবস্থান ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তর থেকে দৃষ্টবাদী স্তরে উত্তরণের অন্তবর্তী সময়ে লক্ষ করা যায়। এ স্তরে মানুষের চিন্তাজগতে পরিবর্তন হতে শুরু করে। একেশ্বরবাদের পরবর্তী পর্যায়টিতে অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরের আর্বিভাব ঘটে। মানুষ বিশ্বাস করে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড দেবতা দ্বারা পরিচালিত হয় না বরং একটি বিশেষ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরে প্রকৃতি প্রদত্ত অধিকার, প্রাকৃতিক আইন ইত্যকার নানাবিধ বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময়ে মানুষের মনে জিজ্ঞাসা এসেছে, উৎসাহ বেড়েছে, সমস্যা প্রতিকারের চিন্তা এসেছে, যুক্তি এসেছে। মানুষ তার অস্তিত্বে কর্মের ফল ও ভূমিকা সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হতে থাকে। অগাস্ট কেঁৎ- এর ধারণা অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সাথে সাথে এ স্তর দ্রুত পরিবর্তিত হয় যার মূখ্য ভূমিকা পালন করে বিজ্ঞানের সূচনা ও বিকাশ। 


৩। দৃষ্টবাদী স্তর

দৃষ্টবাদী স্তরে মানুষের যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে। এ স্তরে মানুষ পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে প্রকৃত বিষয় ও ঘটনার সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়েই জ্ঞানের উৎস খুঁজে পায়। তাঁর মতে এ স্তরে পুঁজিপতি ও শিল্পপতিগণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবে। তার ধারণা ব্যক্তির প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সামাজিক বিবর্তনের উল্লেখিত স্তরগুলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলে। অগাস্ট কোঁৎ এই জ্ঞানের ধারা তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের বিবর্তনকে উপলব্ধি করেছেন। সামাজিক বিবর্তন বলতে তিনি সমাজের উন্নতি ও প্রগতিকে বুঝিয়েছেন। তাঁর মতে সামাজিক উন্নতি তিনটি ক্রমিক ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথা- বুদ্ধিগত উন্নতি (Intellectual Development), ভাবগত উন্নতি (Emotional Development) এবং কর্মগত উন্নতি (Activational Development)। অগাস্ট কোৎ এর মতে ভাবগত ও কর্মর্গত উন্নতি বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির উপর নির্ভরশীল। ব্রয়স্তর সম্পর্কিত আলোচনায় জ্ঞান বিকাশের সাথে সাথে সবার মনে স্বতন্ত্র বোধ জাগ্রত হয়েছে যা দ্বারা সভ্যতার বিকাশ ঘটে।


দৃষ্টবাদ (Positivism) 

Positive শব্দ থেকে Positivism প্রত্যয় এসেছে। Positive শব্দের অর্থ হচ্ছে বাস্তব (Real)। বাস্তব বলতে বুঝায় যা কিছু যৌক্তিক, পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং যা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই বলা হয় দৃষ্টবাদ বা Positivism হলো অভিজ্ঞতালব্ধ যেকোনো যৌক্তিক বিষয় সম্পর্কিত মতবাদ। সমাজের বিরাজমান বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা দূর করে শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চিন্তায় কোৎ সদা তৎপর ছিলেন। তিনি মনে করতেন, দৃষ্টবাদ- এর মাধ্যমেই সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

ফরাসী বিপ্লবোত্তরকালে ফ্রান্সের চিন্তাবিদদের মধ্যে দুটো ধারা পরিলক্ষিত হয়। একটি রক্ষণশীল ধারা- যা বিরাজমান সমাজ ব্যবস্থায় প্রগতি প্রতিষ্ঠার পক্ষে। অপরটি প্রগতিশীল বা বৈপ্লবিক ধারা- যা সমাজ ব্যবস্থা ও প্রথা-প্রতিষ্ঠানের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পক্ষে। অগাস্ট কোৎ- এর দৃষ্টবাদে তাঁর রক্ষণশীল চিন্তা ও মনোভাবের কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোৎ মনে করেন, মানব সমাজ পরিবর্তনের অপরিবর্তনীয় সূত্রটি আবিস্কার করে সমাজকে সুসংগঠিত এবং স্থিতিশীল করে প্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব। এটিই ছিল তার দৃষ্টবাদের মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি জ্ঞানের নতুন শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞান- এর প্রবর্তন করেন। 

দৃষ্টবাদ সম্পর্কে কয়েকটি মৌল উপাদান চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলো ক) কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ কাল্পনিক নয় বরং বাস্তব ঘটনা বা প্রপঞ্চের সাথে সম্পর্কযুক্ত, খ) সকল জ্ঞান নয় বরং প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সাথেই এর সম্পর্ক, গ) দৃষ্টবাদ অস্পষ্ট জ্ঞান নয় বরং যথাযথ এবং সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। দৃষ্টবাদ ধারণা তিনটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাহলো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ। অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। তা হলো:

(ক) বিজ্ঞানসমূহের দর্শন (Philosophy of Sciences) : মানুষ তার ভাগ্য উন্নয়নে প্রচেষ্টার উপর নির্ভরশীল, এটাই হচ্ছে। বিজ্ঞানসমূহের দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয়। একে দৃষ্টবাদী দর্শনও (Positive Philosophy) বলা হয়।

(খ) বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র (Scientific Religion and Ethics) : এতে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক উৎকর্ষতার মধ্য দিয়ে অধিকতর মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা বলা হয়েছে। 

(গ) দৃষ্টবাদী রাজনীতি (Positive Politics): যুদ্ধ বর্জন করে শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করার রাজনীতিনই হলো দৃষ্টবাদী রাজনীতির মূল কথা।

দৃষ্টবাদের বক্তব্য হলো, ভালোবাসাই নীতি, শৃঙ্খলাই ভিত্তি এবং প্রগতিই উদ্দেশ্য। দৃষ্টিবাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে “অন্যের জন্য  বাঁচো (Live for others)”। সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দৃষ্টবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Video Editing Course

Adobe Premiere Pro

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 12,000/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Advanced Excel

VLOOKUP, HLOOKUP, Advanced Functions and many more...

Duration: 2 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 6,500/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*