Home » » সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কি

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কি

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কি

সমাজ জীবনে মানুষ পুরোপুরি স্বাধীন নয়, বরং তাকে অনেক আইন-কানুন মেনে সমাজে বসবাস করতে হয়। ‘সামাজিক চুক্তি' গ্রন্থে রুশো যেমনটি বলেছেন- ‘মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মায় কিন্তু সর্বত্র সে শৃংখলে আবদ্ধ। এ শিকল মূলত শৃংখলা বজায় রাখার জন্য, মানুষকে বিশৃংখল হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য। এসব নিয়মকানুনের একটা দিক মানুষ এমনিতেই মেনে চলে যেমন শিক্ষকদের সম্মান করা, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো মানুষ তার সংস্কৃতি থেকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিখে থাকে। অন্যদিকে, কিছু নিয়মকানুন মানুষ ভীতি বোধ থেকে মেনে চলে। যেমন- আইন-আদালতের শাস্তি। যে প্রক্রিয়ায় সমাজের মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা হয় তাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা 

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন: 

“সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হলো সে সব পদ্ধতির সমাহার যেগুলোর মাধ্যমে সমাজ মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। এবং একটা শৃংখলা বজায় রাখতে সমর্থ হয়।” - ম্যানহেইম 

“সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায় শৃংখলা বজায় রাখার জন্য ও প্রতিষ্ঠিত নিয়মকানুন ধরে রাখার জন্য সমাজ যে বিধি নিষেধগুলো আরোপ করে।” - অগবার্ন ও নিমকফ। 

“সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হলো এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া ও কৌশল যার মাধ্যমে সমাজে বসবাসকারী মানুষদেরকে প্রতিষ্ঠিত ও গ্রহণযোগ্য আচরণের নিয়মকানুন মেনে চলে একত্রে মিলেমিশে থাকতে শেখায়”- ই.এ.রস। 

অর্থাৎ সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজ মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে, মানুষকে আইনের প্রতি ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শেখায়। মানুষকে একত্রে মিলেমিশে থাকতে শেখায় এবং সমাজের শৃংখলা মেনে চলতে শেখায়।


সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করা। এছাড়া সমাজের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক সংহতি সৃষ্টিও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিম্বল ইয়ং- এর মতে, সমাজের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি এবং শৃংখলা ধরে রাখার জন্য সমাজ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। 


সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হল: 

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রধানত দু ধরনের হয়ে থাকে- (১) আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও (২) অনানুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ। সমাজের মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের তাগিদে ও আচরণ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উৎসাহ দানের জন্য দুই ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণই প্রচলন থাকে।

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। অর্থাৎ এটি কেবল বিশেষ একটি সময়ের জন্য কার্যকর নয়। ব্যক্তি।

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানিক আইন-কানুনের মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। 

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনগুলো শুধু কোনো বিশেষ সমাজের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং এটি সকল সমাজের জন্য প্রযোজ্য। শুধু দেশ-কাল-সময়ভেদে বাহনগুলোতে আংশিক পরিবর্তন হতে পারে মাত্র। 

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণের আনুষ্ঠানিক বাহনগুলো সাধারণত কঠোরভাবে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন: আইন, আদালত। আইনে নির্দিষ্ট আচারণ লংঘনের দায়ে কঠোর শাস্তি হতে পারে। 

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমগুলো অপেক্ষাকৃত কম কঠোর। মানব আচরণের অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমগুলো যেমন শিষ্টাচার, আদব-কায়দা ইত্যাদি ভঙ্গের কারণে আদালতের মতো কঠোর শাস্তি পেতে হয় না। 

# প্রত্যেক সমাজে অনানুষ্ঠানিক সমাজ নিয়ন্ত্রণের ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব সৃষ্টিকারী মাধ্যম থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে জনমত, গণমাধ্যম, নেতৃত্ব, ধর্মীয় অনুশাসন, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত উল্লেখযোগ্য।

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মানব সমাজের মতোই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। মানুষের এমন সমাজ খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ, যে সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কোনো ধারণা নেই। 

# সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রভাব সার্বজনীন। অর্থাৎ যেখানে মানুষের সমন্বয় ঘটেছে, সমাজ তৈরি হয়েছে সেখানেই এর প্রভাব ফুটে উঠেছে। 

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে সমাজের আইন-কানুন মেনে চলা ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বজায় রাখতে সহায়তা করা কে বোঝানো হয়। সমাজে বসবাসকারী সকল সদস্য এটা মেনে চলবে-এমনটাই তার কাছ থেকে সমাজ প্রত্যাশা করে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সমাজের কঠোর রূপ দেখতে হয়।

0 comments:

Post a Comment

Comment below if you have any questions

Contact form

Name

Email *

Message *