ব্রোঞ্জ যুগ
ব্রোঞ্জ যুগ: মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত এবং চৈনিক সভ্যতায় ব্রোঞ্জের আবিষ্কার হয়। ধীরে ধীরে ব্রিটেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ও উত্তর জার্মানীতে এর বিস্তার ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত ব্রোঞ্জযুগ স্থায়ী হয়। ব্রোঞ্জ যুগে এসে নগরসভ্যতা আরো বিকশিত হয়। নগরায়নের ফলে শ্রমবিভাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। শ্রমবিভাগকে কেন্দ্র করে সমাজে পৃথক শ্রেণি বিভাজন ও স্তরবিন্যাস গড়ে ওঠে। ব্রোঞ্জযুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। দ্রব্য বিনিময়ের পরিবর্তে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রা অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। এ যুগে লেখা আবিষ্কৃত হয়। ফলে শিক্ষা ও জ্ঞানরাজ্যে নতুন যুগের আগমন ঘটে। ব্রোঞ্জ-নির্মিত বর্ম, শিরস্ত্রাণ, বর্শা, তলোয়ার ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। সামন্ত রাজাগণ ব্রোঞ্জের অস্ত্রের সাহায্যে সজ্জিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তরাজ্যগুলো আক্রমণ ও দখল করে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। শ্রেণীবিন্যাস বিস্তৃত হওয়ায় সমাজকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হয়। বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশংকায় নগরের চারপাশ প্রাচীর স্থাপন করা হয়। জলসেচ ও বাঁধ নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে মিশরে কেন্দ্রীয় সম্রাটের শাসন কার্যকর হয়। কার্ল উইটফোগাল (Karl Wittfogel) যাকে পানিভিত্তিক সভ্যতার (Hydrolic civilization) উদ্ভব বলে অভিহিত করেছেন। আর যে সমস্ত অঞ্চলে জলসেচ ও বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন ছিল না, সেখানে গড়ে ওঠে ছোট ছোট নগররাষ্ট্র । তীব্র শ্রেণিবিন্যাস, দাসভিত্তিক শ্রম ব্যবস্থা, অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রয়োজনে কঠোর ও শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটে। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এ সময় আইনের উৎপত্তি হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions