অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য:
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Domestic Trade) : একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অথবা একই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতাধীন বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দ্রব্য ও সেবা বিনিময়ের লক্ষ্যে সংঘটিত বাণিজ্যকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ একই জাতিভুক্ত মানুষের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার বিনিময় সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। যেমন—বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও যশোর এবং অন্যান্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে যেরূপ বাণিজ্য চলে, তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে । এরূপ বাণিজ্য একই মুদ্রা, রাজস্বনীতি ও দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে পরিচালিত হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (International Trade) : বিভিন্ন সার্বভৌম দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার বিনিময় আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হলে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ বিভিন্ন জাতিভুক্ত মানুষের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার বিনিময় সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। যেমন—বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের যে ধরনের বাণিজ্য চলে, তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এরূপ বাণিজ্য পৃথক পৃথক মুদ্রা ও রাজস্বনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নিয়ম-কানুনের অধীনে পরিচালিত হয়।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য
আঞ্চলিক শ্রমবিভাগ বা বিশেষীকরণ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল ভিত্তি হলেও আরও কতিপয় পার্থক্য উভয়ের মধ্যে রয়েছে ।
নিম্নে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
এছাড়া, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নগদ অথবা ধারে ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ (উপসাগরীয় যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা, আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বা পূর্ব এশিয়ায় সুনামির আঘাত) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে না; কিন্তু এসবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হয়। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের জন্য অন্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন নেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য তা প্রয়োজন ।
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের দৃষ্টিতে উভয় বাণিজ্যের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, উভয় বাণিজ্যের ভিত্তি এক হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে যে পার্থক্য বিদ্যমান তা মূলত মাত্রাগত—শ্রেণিগত নয়। অধ্যাপক বার্টিল ওহলিন (Bertil O'hlin) এর মতে, “অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সম্প্রসারণই হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এ দু'ধরনের বাণিজ্যের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই।”
উপরের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান যা মূলত মাত্রাগত, শ্রেণিগত নয়। উভয় বাণিজ্যের মধ্যে এসব পার্থক্যের দরুন অর্থনীতিবিদগণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষণের জন্য পৃথক বাণিজ্য তত্ত্ব প্রদান করেন ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions