হবসন লেনিন তত্ত্ব কি
ইউরোপে বিদ্যমান রাজতান্ত্রিক কাঠামো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ার পর তাদের আগ্রাসী নীতি সাম্রাজ্যবাদের আকারে নতুন করে ফিরে আসে। পরপর কয়েকটি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পাশাপাশি রাজতান্ত্রিক কাঠামোর ভেঙে পড়া ইউরোপীয় রাজনীতিতে একটি বদল আসন্ন করে তোলে। এ সময়টিকে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী যুগ বলে চিহ্নিত করে থাকেন বিভিন্ন ইতিহাসবিদ। প্রখ্যাত ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জে এ হবসন এবং সোভিয়েত বলশেভিক বিপ্লবের নেতা ভি আই লেনিন এ সময়কাল সম্পর্কে দুটি বিশেষ তত্ত্ব প্রদান করেছেন। একসাথে তাদের এই বিশ্লেষণমূলক আলোচনা তাদের নামানুসারে হবসন এবং লেনিনের তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত।
হবসন মনে করেন ইউরোপে শিল্প পুঁজি বিকাশের এই পর্বে এসে মূলধন স্ফীতি ঘটে যায়। যা পুরো ইউরোপের অর্থনীতির পরিকাঠামো পাল্টে দিতে যথেষ্ট হয়েছিল। উদ্বৃত্ত মূলধনের বিনিয়োগে বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশগুলো এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করতে থাকে। তারা এসব দেশ নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করে ব্যাপক দখল ও লুটতরাজ চালায়। মূলধন বিনিয়োগের স্থান হিসেবেও এসব দেশকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে সেখানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে স্বল্প খরচে অধিক শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ ছিল। এতে করে কম খরচে অধিক উৎপাদন সম্ভব হত তাদের পক্ষে। তারা খুব সহজেই অল্প পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে বিশাল অঙ্কের লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই অর্থ তারা পৌনঃপুনিকভাবে ব্যবহার করে সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে। সাম্রাজ্য নিয়ে হবসনের এ তত্ত্বকে সাম্রাজ্যবাদী যুগের বিশ্লেষণে অর্থনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
পুরোপুরি অর্থনীতি নির্ভর না হলেও লেনিনের তত্ত্বেও অর্থনীতির একটি কার্যকর ভূমিকা ছিল। তিনি এ তত্ত্ব উপস্থাপন করার জন্য আশ্রয় করেছেন ‘Imperialism is the Highest Stage of Capitalism' নামক গ্রন্থের। তিনি সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারকে পুঁজি বিস্তারের সর্বোচ্চ স্তর বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি পুঁজি ও সাম্রাজ্য একে অন্যের পরিপূরক বলেও মনে করেন লেনিন। এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে তিনি বলতে চেয়েছেন যে পুঁজির স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে দখল আর লুণ্ঠনে তা ব্যাপৃত হয় । এক্ষেত্রে পুঁজিবাদ তার চূড়ান্ত পর্বে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে নতুন স্থান সন্ধানের বদলে বিভিন্ন এলাকা দখল ও প্রভুত্ব কায়েম মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ এক কথায় পুঁজিবাদ ও তৎসংশ্লিষ্ট অর্থনীতি বিকাশের ধারাবাহিকতা মাত্র। সেদিক থেকে বিচার করলে লেনিনের তত্ত্বটিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুটি দিক গুরুত্ব পেয়েছে। পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় করে ইতিহাসের কার্যকারণ নির্ভর বিশ্লেষণ করতে গেলে লেনিনের তত্ত্বটিই অধিক বস্তুনিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্যতার দাবি রাখে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions